স্বল্প আয়ের দেশের বিশেষ সুবিধায় বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে চীন৷ বিশ্লেষকরা বলছেন এই সুবিধা বাংলাদেশের আরো আগেই পাওয়ার কথা ছিল৷ ছয় বছর ধরেই এ দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ৷
বিজ্ঞাপন
এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেইড এগ্রিমেন্টের (আপটা) অধীনে চীনের বাজারে বাংলাদেশ এখন তিন হাজার ৯৫টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে৷ এক জুলাই থেকে সেখানে যুক্ত হচ্ছে আরো পাঁচ হাজার ১৬১টি পণ্য৷ সব মিলিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়াল ৮,২৫৬ টিতে৷ এই পরিমাণ বাংলাদেশের মোট রপ্তানি পণ্যের ৯৭ শতাংশ৷ ১৯ জুন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে৷
কেন এই সুবিধা দিচ্ছে চীন?
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি তালিকা তৈরি করে৷ বর্তমানে বাংলাদেশসহ মোট ৪৭টি দেশ রয়েছে এতে৷ ২০০৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলডিসি দেশগুলোকে অন্তত ৯৭ ভাগ পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে বাধ্য উন্নত দেশগুলো৷ অন্যদিকে এই সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক না হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোও সাধ্যমত এই সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছিল৷
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে অনেক আগে থেকেই চিলি ৯৯.৫ শতাংশ, ভারত ৯৪.১ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৯০.৪ শতাংশ এবং তুরস্ক ৭৯.৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়ে আসছে৷
চীন ২০১৩ সালে এসে আফ্রিকার দেশগুলোর পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করে৷ অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে তখন ৬১ ভাগ পণ্যে চীন শুল্ক ছাড় দেয়৷ তাদের যুক্তি ছিল বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেইড অ্যাগ্রিমেন্টের (আপটা) অধীনে রয়েছে, যেখানে চীনও সদস্য৷ আপটার অধীনে বাংলাদেশ অনেক পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে৷ এজন্যই তারা বাংলাদেশকে ৬১ ভাগের জন্য দিচ্ছে৷ আমাদেরও তখন দাবি ছিল যে ৯৭ ভাগ দিয়ে দিলে আর বাংলাদেশকে আপটায় যেতে হবে না৷ এখন চীন সেটা দিল৷’’
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন ঠিক একই ধরনের তথ্যই জানান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘২০১৪-১৫ সাল থেকে নানাভাবে আমাদের আলোচনা চলছিল৷ তার রেজাল্টটাই এখন পেলাম৷’’
কী সুবিধা পাবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আকার প্রায় পনেরশো কোটি ডলারের৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৬৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে দেশটি থেকে, বিপরীতে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৮৩ কোটি ডলার৷
এখন সিংহভাগ পণ্যে শুল্ক ছাড় পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, ‘‘অনেক পণ্যে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি৷ লেদার গুডস, ফুটওয়্যারে আমাদের দক্ষতা বেড়েছে৷ হালকা প্রকৌশল শিল্প আমাদের নতুন যোগ হয়েছে৷ কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন পণ্যও আমাদের হাতে রয়েছে৷ আশা করি আমাদের রপ্তানি বাড়বে৷’’
তবে শুল্ক ছাড় দেয়াতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রপ্তানি সুবিধা বেড়ে যাবে এমনটা মনে করন না অর্থনিতীবিদরা৷ সেন্টার ফল পলিসি ডায়লগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ভারত থেকে যদি আমি কাপড় এনে চীনে রপ্তানি করতে চাই তাহলে কিন্তু শূন্য শুল্ক সুবিধা পাব না৷ যদিও কাপড়ের উপরে শূন্য শুল্ক দেয়া আছে৷ এই কাপড় থেকে শার্ট বানাতে হবে৷ অথবা আমি যদি তুলা আনি সেখান থেকে কাপড় বানিয়ে রপ্তানি করলে এই সুবিধা দিবে৷ যেটাকে রুলস অফ অরিজিন বলে৷’’
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন এক নম্বরে থাকলেও দেশটি কম দামি পোশাকের বাজার থেকে ক্রমশ সরে আসছে৷ বাংলাদেশের এই ধরনের পণ্যের রপ্তানি ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ এখানেও বাংলাদেশের বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখেন মোস্তাফিজুর৷ তবে সুযোগ কতটা কাজে লাগানো যাবে তা নির্ভর করছে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির উপরেও৷ যা এমনকি চীনের বিনিয়োগ আকর্ষনের মাধ্যমেও হতে পারে, বলছেন এই বিশ্লেষক৷
ভারত-চীন দ্বন্দ্বের কারণ
বার বার সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনা। কেন? ভৌগোলিক-রাজনৈতিক সংঘাতের ইতিহাস একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
ছবি: Rouf Bhat/Afp/Getty Images
ভৌগোলিক অবস্থান
ভারত এবং চীনের মধ্যে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ লাদাখে। বাকি অংশ উত্তর পূর্ব ভারতের সিকিম এবং অরুণাচলে।
ছবি: DW/H. Joshi
সীমান্ত সংঘাত
লাদাখ সীমান্তের একটি বড় অংশে মানুষ বসবাস করে না। এই ভৌগোলিক অঞ্চলকে মূলত আকসাই চীন বলা হয়। ভারত মনে করে আকসাই চীন তাদের অংশ। চীন মনে করে আকসাই চীন তাদের। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে যাদের সেনা যেখানে ছিল, সেটাকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু দুই দেশই নিজেদের এলাকা বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্যাংগং সমস্যা
১৩৪ কিলোমিটার লম্বা প্যাংগং লেক ১৪ হাজার ফুটে অবস্থিত। নোনতা জলের এই হ্রদকে ঘিরে প্রায় ৭০০ বর্গ কিলোমিটার জমি। প্যাংগংয়ের এক-তৃতীয়াংশ ভারতের দখলে। দুই-তৃতীয়াংশ চীনের। প্রকৃত সীমান্তরেখা এই লেকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ভারতের দাবি, চীন সেই সীমান্তরেখা অগ্রাহ্য করে ভারতের জমি দখল করছে এবং সীমান্তের খুব কাছে রাস্তা বানাচ্ছে। চীনের দাবি, ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা মানছে না।
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Karel
গালওয়ান সমস্যা
গালওয়ানের খুব কাছ দিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা গিয়েছে। চীন তিব্বতের উপর দিয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত একটি হাইওয়ে তৈরি করেছে। যাকে কারাকোরাম হাইওয়ে বলা হয়। ভারতের অভিযোগ, ওই হাইওয়ের জন্যই লাদাখের একটি অংশের দখল নিতে চায় চীন। তা করতে পারলে আরও সহজ একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু ভারত তা হতে দিতে চায় না। গালওয়ান সমস্যার মূল কারণ এটিই।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
সিয়াচেন সমস্যা
দারবুক, শাইয়োক হয়ে সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে ভারত। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলে দৌলত বেগ ওল্ডিতে ১৬ হাজার ৬১৪ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের উচ্চতম এয়ার স্ট্রিপ তৈরি করেছে ভারত। এই এয়ার স্ট্রিপ এবং সিয়াচেন পর্যন্ত রাস্তা নিয়ে চীনের আপত্তি আছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Khawer
অরুণাচল সমস্যা
১৯১৪ সালে ব্রিটিশ আমলে উত্তর পূর্ব ভারত এবং তিব্বতের সীমান্ত নির্দিষ্ট হয়েছিল ম্যাকমোহন লাইনের মাধ্যমে। সিমলা চুক্তির মাধ্যমে এই লাইন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতে চীনকে নেওয়া হয়নি। সেই তখন থেকেই অরুণাচল নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে অরুণাচল অন্যতম কারণ ছিল। ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৬ সালে এই সমস্যার সমাধানে দুই দেশ আলোচনা করেছে। তবে চীন এখনও মনে করে অরুণাচল তাদের।
ছবি: Prabhakar Mani
যুদ্ধ এবং প্রক্সি ওয়ার
সীমান্ত সমস্যার জেরে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর সরাসরি দুই দেশের মধ্যে আর কোনও যুদ্ধ হয়নি। কিন্তু ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথু লা-য় দুই দেশের সৈন্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালে অরুণাচলের তুলু লা-তে ফের সংঘর্ষ হয় দুই দেশের সেনার। যদিও কোনওটাই দীর্ঘ সংঘর্ষ বা যুদ্ধের স্তরে পৌঁছয়নি। তবে জুন মাসে গালওয়ানের ঘটনা নজিরবিহীন।
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
সুবিধাটি এখন কেন?
১৭ জুন লাদাখে চীনের সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাতে ভারতের ২০ সেনা নিহত হয়৷ এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে৷ তার দুই দিন পরেই বাংলাদেশকে চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার খবর এল৷ চলমান পরিস্থিতিতে চীন বাংলাদেশকে কাছে টানতেই পদক্ষেপটি নিয়েছে বলে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে৷
তবে ড. মোস্তাফিজুর রহমান তেমনটা মনে করেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এসেছে৷ বাংলাদেশ অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিল৷ যাতে অন্যান্য এলডিসির মতো সুবিধা পায়৷ সুতরাং বাংলাদেশকে বাড়তি কিছু চীন দেয়নি৷ চীনের এলডিসি স্কিমে যে ৯৭ ভাগের কথা বলা আছে এবং যেখান থেকে বাংলাদেশে ক্ষেত্রে ব্যাত্যয় করা হয়েছিল এখন সেটাই আমাদেরকে দেয়া হয়েছে৷ এটা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল৷ এগুলো হঠাৎ করে হয় না৷ চীন অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের মত বাংলাদেশকেও একই সুবিধা দিয়েছে, এখানে বাড়তিও কিছু দেয়া হয়নি, কমতিও কিছু দেয়া হয়নি৷’’
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ করে চীন সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়৷ এ অনুরোধের প্রেক্ষিতে চীনের স্টেট কাউন্সিলের ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এ সুবিধা প্রদান করে নোটিশ জারি করে৷’’
২০ মে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায় দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে করোনা মহামারি মোকাবিলা ছাড়াও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়৷ প্রায় ২৫ মিনিটের এই আলাপে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চীন সব সময় পাশে থাকবে বলে হাসিনাকে জানান জিনপিং৷ পাশাপাশি কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক জোরদারে চীনের আগ্রহের কথাও জানান তিনি৷
মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব
এরইমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমেছে ব্যাপকভাবে৷ দেখা দিয়েছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ার শঙ্কা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রপ্তানি ধস
লকডাউনের কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের কেনাকাটা কার্যত বন্ধ৷ এসব দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, কয়েকশো কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল করেছে৷ এর প্রভাবে এপ্রিলে রপ্তানি আয় নেমে এসেছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে, যা আগের বছরে একই মাসের চেয়ে ৮২.৮৫% কম৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসেব বলছে চলতি বছর সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ৩২% পর্যন্ত কমতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yu Fangping
প্রবাসী আয়ে টান
এপ্রিলে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ ভাগ কমেছে৷ প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে৷ জ্বালানি তেলের দাম কমায় তাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ে পড়েছে৷ সেইসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা৷ এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স গত বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমে যাবে, বলছে বিশ্বব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/R. Abd
চাকুরির অনিশ্চয়তা
দেশের ভিতরে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে তার কারণেও বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ৷ এসব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরি করছেন, যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক চীনে করোনার প্রকোপ শুরুর পর বলেছিল, বাংলাদেশের প্রায় নয় লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাতে পারে৷ তবে এখন তৈরি পোশাক খাতেই অনেক শ্রমিকের চাকুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
খাদ্য নিরাপত্তা
গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল, এই সময়ে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩.৫৩ লাখ মেট্রিক টন৷ নতুন বছরে তা ১০ লাখ মেট্রিক টন বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএ৷ সরকারের খাদ্য গুদামে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে৷ বোরো মৌসুমে আরো ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার৷ সেক্ষেত্রে খাদ্যাভাব দেখা দেয়ার আশংকা তেমন নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের হাতে খাদ্য কেনার টাকা থাকবে কিনা৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
দারিদ্র্য বাড়ছে
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সোয়া তিন কোটির বেশি৷ এর বাইরে গত দেড় যুগে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন৷ উপার্জন না থাকলে দ্রুতই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন৷ ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এক জরিপেও দেখা গেছে করোনার প্রভাবে দেশের নিম্নবিত্তের আয় ৭৫ ভাগ কমে গেছে, হতদরিদ্র বা যাদের দৈনিক আয় ১৬০ টাকার কম এমন মানুষের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সরকারের প্রণোদনা
অর্থনীতি বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের সরকারও আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, যার আকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প আর কৃষি খাতে ঋণ হিসেবে৷ পাশাপাশি লক-ডাউনের কারণে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের ব্যাংক হিসাব তৈরি করে এককালীন নগদ অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোরও৷
ছবি: Reuters/A. Rahman
টাকার সন্ধান
বাজেটের ঘাটতি মেটাতে এরিমধ্যে ব্যাংক থেকে সারাবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ করে ফেলেছে সরকার৷ নতুন ঋণ নেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে৷ বিভিন্ন খাতের ব্যয় কমিয়েও অর্থ সংস্থানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা ছাপিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যেতে পারে৷ তবে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কায় টাকা ছাপানোর পক্ষে নন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ৷
ছবি: DW
মন্দার শঙ্কা
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মহামন্দার আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা৷ এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও৷ এরইমধ্যে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি৷ মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশ কতটা সামলাতে পারবে তা বৈশ্বিক পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্ভর করছে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপরে৷