তথাকথিত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এ যোগ দেওয়া চীনের সংখ্যালঘু উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ চীনে ফিরে ‘রক্তের নদী বইয়ে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়েছে সাইট ইনটেলিজেন্স৷ সম্প্রতি একটি নতুন ভিডিওতে এই হুমকি দেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ ‘সাইট ইনটেলিজেন্স’ নতুন এই ভিডিওটি এ সপ্তাহে প্রকাশ করে৷ আইএস-এর অনলাইনে প্রকাশ করা ভিডিওতে ইরাকে উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ছবি ধারণ করা হয়েছে৷
এই ভিডিওটিকে ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখছে বেইজিং৷ উইগুর হলো চীনের পশ্চিমাঞ্চলে শিনঝিয়াং প্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায়, যাদের মধ্যে অনেকে সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে৷ এছাড়া অবৈধভাবে এদের অনেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও তুরস্ক সফর করছে বলে ধারণা করা হয়৷ এদের নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে চীন৷ চীনাদের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দিতে ২০১৫ সালে এক চীনা জিম্মিকে হত্যার দাবি করেছিল ইসলামিক স্টেট৷ গত কয়েক বছরে শিনঝিয়াং-এ কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে উইগুর আর হান চাইনিজদের মধ্যে সংঘর্ষে৷ এই অস্থিরতার জন্য চীনা সরকার ইসলামিক জঙ্গিদের দায়ী করে আসছে৷
ইসলামিক স্টেটের ‘দ্য ইরাকি আর্ম’ আধা ঘণ্টার এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে উইগুররা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ এছাড়া এর মধ্যে কিছু দৃশ্য শিনঝিয়াং প্রদেশে ধারণ করা, যেখানে চীনা পুলিশদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ এদের মধ্যে এক যোদ্ধাকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমার ভাইয়েরা, আমরা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করছি! আমি তোমাদের বলছি, এসো এবং এখানে থাকো, শক্তিশালী হও৷ আমরা নিশ্চিতভাবে অ্যামেরিকা, চীন, রাশিয়া এবং বিশ্বের সব প্রান্তে আমাদের পতাকা গেড়ে দেবো৷’’
অন্য এক দৃশ্যে এক উইগুরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘নিপীড়িতদের চোখে যত অশ্রু বয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ আমরা তত রক্তের নদী বইয়ে দেবো৷’’ রয়টার্স অবশ্য বলছে, ভিডিওটি সত্যি কিনা তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়৷
চীনের পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেঙ শুয়াং বুধবার জানান, তিনি এখনও এই ভিডিওটি সম্পর্কে জানেন না এবং এটি তিনি দেখেননি৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘একটা বিষয় পরিষ্কার আর তা হলো, আমরা সন্ত্রাসকে কখনোই সমর্থন করি না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় আমরা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নেবো৷’’
তবে চীনের মানবাধিকার কর্মীদের মতে, শিনঝিয়াংয়ে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী নেই৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
যে মুসলিমদের পছন্দ করে চীন
চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মুসলমানের বাস৷ উইগুর মুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা অনেকেই জানেন৷ কিন্তু আরেক মুসলিম গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সুনজর আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
হুই মুসলিম
বর্তমানে চীনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ৷ এর মধ্যে হুই মুসলিমদের সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ আর যে মুসলিম গোষ্ঠী সরকারের নিপীড়নের শিকার সেই উইগুরদের সংখ্যা এক কোটির কিছু কম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong
উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ
বিভিন্নভাবে তাদের উপর নিপীড়ন চালায় চীনা সরকার৷ রোজা রাখা ও নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে উইগুরদের জন্য বিধিনিষেধ জারি করা হয়৷
ছবি: Getty Images
কিন্তু হুইদের জন্য আলাদা নিয়ম
একই দেশে থেকে উইগুররা যখন ঠিকমতো ধর্ম পালন করতে পারেন না সেখানে হুই মুসলিমদের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না৷ উপরের ছবিটিই তার প্রমাণ৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে হুই মুসলিমদের সঙ্গে একটি মসজিদে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/J. Peng
কী কারণ?
উইগুররা স্বাধীনতা চান, হুইদের সেই আগ্রহ নেই৷ উইগুররা প্রথম ভাষা হিসেবে মান্দারিন ব্যবহার করেন না, হুইরা করেন৷ সর্বোপরি হুইদের সংস্কৃতির সঙ্গে চীনা সংস্কৃতির কিছুটা মিল আছে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে বড় মসজিদ
দেখছেন চীনের সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ নাম ‘গ্রেট মস্ক অফ চিয়ান’৷ কিন্তু দেখতে কি মসজিদের মতো লাগছে, নাকি চীনের কোনো ভবন মনে হচ্ছে? তাহলেই বুঝুন হুইদের মসজিদেও কেমন চীনা সংস্কৃতির ছাপ আছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Far
আছে বাণিজ্যিক কারণও
মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী চীন৷ আর তার জন্য আরবি জানা মানুষ প্রয়োজন৷ আরব ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে নিংচিয়া রাজ্যের ইনচুয়ান শহরে একটি ইসলামিক থিম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে৷ ঐ শহরের রাস্তায় আরবিতে দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ নিংচিয়া রাজ্যে অনেক হুই বাস করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Weiken
হুই কারা?
প্রায় ১,২০০ বছর আগে আরব, পারস্য আর মঙ্গোলিয়া থেকে মুসলিম ব্যবসায়ীরা চীনে গিয়েছিলেন৷ সেখানে তাঁদের অনেকে হান চাইনিজদের বিয়ে করেন৷ সেভাবেই হুই গোষ্ঠীর সৃষ্টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reynolds
যেখানে বাস তাঁদের
আগে নিংচিয়া রাজ্যের কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলীয় আরও কয়েকটি রাজ্যেও হুইরা বাস করেন৷ এছাড়া বেইজিং, সাংহাই সহ বড় বড় শহরেও অনেক হুই থাকেন৷