1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনে এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্য

১২ ডিসেম্বর ২০১১

এইচআইভি আক্রান্ত মানুষরা সারা বিশ্বেই বৈষম্যের শিকার৷ চীনেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না৷ এই সব মানুষ সর্বদা আতঙ্কে থাকেন, তাদের সংক্রমণের কথা জানাজানি হলে হয়তোবা বৈষম্য বা বিদ্বেষের শিকার হতে হবে৷ বাস্তব ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে৷

চীনে এইচআইভি এবং এইডস বিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচিছবি: picture-alliance/Photoshot

চীনে এইচআইভিতে সংক্রমিত মানুষরা সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার৷ এই রকমই এক মানুষ ওয়াং টাও৷ মৃদু স্বরে কথা বলেন তিনি, বাঁ চোখটা দেখলে মনে হবে একটু ট্যারা৷ চীনের বসন্ত উত্সবের সময় আতসবাজির বিস্ফোরণে প্রচণ্ড আঘাত লাগে চোখে৷ ৩৮ বছর বয়স্ক ওয়াংকে তক্ষুণি চীনের দক্ষিণাঞ্চলে তাঁর নিজের গ্রামের হাসপাতালে নেয়া হয়৷ চিকিত্সকরা জানান, তাঁর চোখ অপারেশন করতে হবে অতি দ্রুত৷ ওয়াং টাও এইচআইভি পজিটিভ৷ রক্ত দানের সময় সংক্রমিত হয়েছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ডাক্তাররা যখন জানতে পারলেন যে, আমি এইচআইভি পজিটিভ, তখন তাঁরা আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেন৷ বাধ্য হয়ে আমাকে বেইজিং যেতে হয়৷ সেখানেও আমাকে নানা সমস্যার সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷''

হাসপাতালের চিকিত্সায় বাধা

বেইজিং'এর চক্ষু হাসপাতালেও অপারেশন করতে চাননি ওয়াংকে ডাক্তাররা৷ তাঁরা সংক্রমণের একটি বিশেষ ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁকে৷ সেখানে আবার চক্ষু চিকিত্সার কোন বিশেষ শাখা ছিলনা৷ সব মিলিয়ে চিকিত্সার জন্য তাঁকে ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷ ফলাফল ওয়াং টাও'এর বাঁ চোখের মণিটা নষ্ট হয়ে যায়৷ লাগাতে হয় একটি কাঁচের চোখ৷

ওয়াং টাও এই ভুক্তভোগী মানুষটির আসল নাম নয়৷ নিজের প্রকৃত নামটা প্রকাশ করতে তাঁর খুব ভয়৷ এখন তিনি পরিবারসহ বেইজিং'এ বসবাস করছেন৷ সরকার থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন৷ ওয়াং টাও'এর স্ত্রী ও বাবা মা তাঁর রোগটি সম্পর্কে জানেন৷ তবে তাঁর বন্ধুবান্ধব ও ৭ বছরের ছেলেকে এ সম্পর্কে কিছুই জানাননি তিনি৷ ওয়াং টাও বলেন, ‘‘আমার ছেলের স্কুলের কেউ জানেনা যে, আমি এইচআইভি আক্রান্ত৷ চীনে এরকম বহু দৃষ্টান্ত আছে যে, এইচআইভি আক্রান্ত মানুষদের সন্তানরা বৈষম্যের শিকার হয়৷ অনেক বাচ্চাই আর স্কুলে যেতে পারেনা৷ আমার অসুখের কারণে ছেলে কোনো অসুবিধায় পড়ুক, সেটা আমি চাইনা৷''

ছবি: AP

চীনে এইচআইভি আক্রান্তদের বেসরকারি সংগঠনের প্রধান মেং লিনের মতে, এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণ এক বিরাট সমস্যা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ব্যক্তিগত জীবনের সর্বত্রই তাঁদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ যেমন কোনো চাকরি পেতে হলে বা কোথাও ভ্রমণে যেতে হলে দেখা দেয় নানারকম বাধাবিঘ্ন৷ এইসব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু তা খুব সহজ নয়৷''

পরিবারের কাছেও ব্রাত্য হতে হয়

মেং লিন'এর নিজেরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ ১৯৯৫ সালে যখন জানা গেল যে, লিন এইচআইভি আক্রান্ত, তখন তাঁর পরিবার তাঁকে ত্যাগ করে৷ আজ পর্যন্ত তাঁর মা বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই৷ টেলিভিশনে একটি সাক্ষাত্কার দেয়ার পর ব্যবসায়ী লিনের খদ্দেররা দূরে সরে যেতে লাগলেন, কাজের অর্ডার কমে যেতে লাগলো৷ অবশেষে তাঁর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে গেল৷

ইউএনএইডস'এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে চীনে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ এইচআইভি সংক্রমিত৷ বেশিরভাগই যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত ও সমকামী৷ এই সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে জাতিসংঘ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিল যে, ২০১০ সাল নাগাদ চীনে এক কোটি মানুষ এইচআইভি সংক্রমিত হবে৷ তবে চীন সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে, যেমন নিখরচায় এইচআইভি পরীক্ষা ও চিকিত্সা এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই ভয়ংকর রোগটাকে কিছুটা এড়াতে পেরেছে৷ এছাড়া সরকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ে নানা আইন কানুনও প্রণয়ন করেছে, যা অত্যন্ত প্রগতিশীল বলা যায়, জানান চীনে জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সমন্বয়কারী মার্ক স্টার্লিং৷ অবশ্য স্থানীয় নিয়ম কানুন জাতীয় আইনের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়৷ মার্ক স্টার্লিং জানান, ‘‘আমাদের দুই ক্ষেত্রে লড়াই করতে হচ্ছে৷ একদিকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে যে, স্থানীয় নিয়ম কানুনগুলো যেন জাতীয় আইনের সঙ্গে খাপ খায়৷ অন্য দিকে জনসাধারণকে এইডস সম্পর্কে সচেতন করতে হচ্ছে৷''

এ প্রসঙ্গে মেং লিন বলেন, এইচ আই ভি সংক্রমিতদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দূর হতে বহু দিন লাগবে৷ আগামী ১০ বছরে খুব একটা পরিবর্তন হবেনা৷ সম্ভবত ১০০ বছরে এই পরিবর্তন সম্ভব৷ এই বিশ্বাস লিন'এর৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ