চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬১ জন, যা ছাড়িয়েছে ২০০২ সালের সার্স সংক্রমণে মৃত্যুকেও৷
বিজ্ঞাপন
করোনা ভাইরাসের কারণে সোমবার আরো ৫৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন৷ ২০০২-২০০৩ সালে চীনে ছড়িয়ে পড়ে সার্স ভাইরাস, যার ফলে মারা যান ৩৪৯ জন৷ করোনা ভাইরাসের ছোবল ইতিমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ভয়ানক সার্সের মৃত্যুকে৷
কমিশন জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরো দুই হাজার ৮২৯ জন৷ এখন পর্যন্ত, চীনে এই ভাইরাসের কবলে মোট ১৭ হাজার ২০৫ জন৷ সারা বিশ্বে করোনা-আক্রান্তদের সংখ্যা ১৭ হাজার ৩০০৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও (হু) জানিয়েছে, এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷ তারা বলছে এখনও সম্ভাব্য করোনা-আক্রান্ত কয়েক হাজার স্পেসিমেনের পরীক্ষা হওয়া বাকি, যা নিশ্চিত হলে বাড়বে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তদের সংখ্যা৷
যখন যখন ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও৷ এর আগেও নানা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জরুরি অবস্থা জারি করে৷
ছবি: AP
জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
বিশ্বের কোথাও মরণব্যাধির প্রাদুর্ভাব হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একদল বিশেষজ্ঞ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ (পিএইচইআইসি) ঘোষণা করেন৷ ২০০৫ সাল থেকে পিএইচআইসি ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ছয় বার বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: AP
করোনা ভাইরাস
উহান শহরে প্রাদুর্ভাবের পর করোনা ভাইরাস দ্রুত আশেপাশের নগরীতে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতে চীনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ কিন্তু আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Yu
সোয়াইন ফ্লু
২০১৯ সালে মেক্সিকোর ভেরাক্রুজ নগরীতে এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জার (সোয়াইন ফ্লু নামে পরিচিত) প্রাদুর্ভাব হয়৷ যা পরে আরো কয়েকটি দেশে জড়িয়ে পড়ে৷ সোয়াইন ফ্লুতে প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ যদিও আনুষ্ঠানিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার বলা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা
পশ্চিম আফ্রিকার তিন দেশ সিয়েরা লিওন, গিনি ও লাইবেরিয়ায় ২০১৩ ও ২০১৬ সালে ইবোলা ভাইরাস মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে দেশগুলোতে ১১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: Reuters
পোলিও
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখন পোলিও মুক্ত৷ কিন্তু পাকিস্তান সরকার দেশজুড়ে পোলিও প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাধ্য হয়ে রোগটি আবারও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ পাকিস্তান, সিরিয়া ও ক্যামেরনে এখনো শিশুদের পোলিও আক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ বিশ্বে বর্তমানে পোলিও আক্রান্ত ৪১৭ শিশুর মধ্যে এক-পঞ্চমাংশের বেশি পাকিস্তানি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Achakzai
জিকা
২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস নিয়ে ডব্লিউএইচও ‘পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন’ জারি করে৷ তার এক বছর আগে ব্রাজিলে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়, যা পরে আরো ৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ এমনিতে প্রাণঘাতী না হলেও অন্তঃস্বত্তা নারী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশু মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হতে পারে৷ ওই সময় প্রায় ২৩০০ শিশু মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lacerda
কঙ্গোতে ইবোলা
২০১৯ সালের জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে৷ ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইবোলা রোগী সনাক্ত হয়৷ যাদের মধ্যে ২২৩৬ জনা মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
7 ছবি1 | 7
গোটা বিশ্বে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়া করোনা-আতঙ্কের আঁচ এসে পড়ছে চীনের শেয়ার বাজারেও৷ ফলে, আগের চেয়ে ৯ শতাংশ নেমেছে চীনা শেয়ারের দাম৷
চীনের উহান অঞ্চলে প্রথম এই ভাইরাস দেখা যাওয়ার পর তা ছড়িয়েছে দেশের আরো ১৪টি শহরে৷ আপাতত পুরোপুরি গৃহবন্দি রয়েছেন সেই অঞ্চলের বাসিন্দারা৷
চীনের বাইরেও করোনার ছোবল
চীনের বাইরে ফিলিপাইনসে প্রথম ছড়ায় এই ভাইরাস৷ এরপর থেকে করোনার শিকার হয়েছেন জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, ইসরায়েল, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইটালি, সুইডেন, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, স্পেনের বাসিন্দারা৷ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন ভারতীয়ও৷
এদিকে, করোনা সংক্রমণ বিষয়ে সচেতনতা ছড়াতে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু। বৃহস্পতিবার সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল বিবৃতি দিয়ে জানান, করোনা যাতে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্যই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও জারি হয়েছে নাগরিক স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা৷ চীন থেকে বিদেশি নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেকড়া বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷
এসএস/কেএম (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
জার্মানি কিভাবে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে?
সম্প্রতি জার্মানিতেও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে৷ করোনায় আক্রান্ত রোগের মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এমন রোগের বিরুদ্ধে জার্মানির প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই সুদৃঢ়৷ ছবিঘরে রয়েছে বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
বিশেষজ্ঞদের আস্থা
সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির জনগণকে বড় কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে হবে না৷ ইবোলার মত ভাইরাস আক্রান্তদেরও বাঁচাতে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Center of Disease Control
আইনি সুরক্ষা
সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় জনগণ আইনি সুরক্ষা পান জার্মানিতে৷ এখানে আছে ‘প্রোটেকশন অ্যাগেইনস্ট ইনফেকশন অ্যাক্ট’৷ এই আইনের আওতায় সব নাগরিককে সংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দেয়া সরকারের দায়িত্ব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
সংক্রামক রোগ নিরাময় নেটওয়ার্ক
২০০৩ সাল থেকে ভয়াবহ সংক্রামক রোগের নিরাময়ে মেডিকেল সেন্টারগুলোর সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক সদা সতর্ক রয়েছে৷ এই ক্লিনিকগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে আছে৷ কেউ আক্রান্ত হলে সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে এর যে কোনো একটিতে নিয়ে যাওয়া যায়৷ সেখানকার চিকিৎসক ও অন্য স্টাফরা খুবই দক্ষ৷ তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা নিশ্চিত করার সবরকমের প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে রাজ্য সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
বিশেষায়িত বিমানবন্দর
জার্মানির হামবুর্গ, ড্যুসলডর্ফ, ফ্রাঙ্কফুর্ট ও মিউনিখ-এই চারটি বিমানবন্দর সংক্রামক রোগাক্রান্তদের ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষায়িত৷ কোনো ফ্লাইটে কেউ আক্রান্ত আছেন বোঝা গেলে বিমানটিকে সাথে সাথে এর যে কোনো একটি বন্দরে নিয়ে আসা হয়৷ রোগীদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা থাকে৷ সেখানে তাদের আলাদা করে প্রাথমিক ব্যবস্খা নিয়ে দ্রুত যথাযথ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ব্যবস্থাপনায় দ্রুততা
এখন পর্যন্ত যতগুলো মারাত্মক সংক্রামক রোগের যতগুলো ঘটনা জার্মানিতে ঘটেছে, সেগুলোকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সামাল দেয়া হয়েছে৷ এমনকি ইবোলার সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সফলতা দেখিয়েছে দেশটি৷
ছবি: imago/ZUMA Press/M. Heine
নিয়মিত প্রশিক্ষণ
জার্মানির জনগণের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ তারা চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে৷ বিশেষ করে মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলো নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রায়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
তথ্য সরবরাহ ও সমন্বয়
বিশেষ পরিস্থিতিতে সমন্বয় কেমন করে করতে হয়, তার উদাহরণ জার্মানি৷ কোনো সংক্রামক রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে পরিস্থিতি কী করে সামাল দিতে হবে, তার তথ্য বিরামহীনভাবে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলোতে সরবরাহ করা হয়৷ সমন্বিতভাবে কাজটি করে চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ফার্মাসিস্টদের নিজস্ব ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো৷ ইবোলার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
২৪ ঘন্টা জরুরি ব্যবস্থা
বিশেষ পরিস্থিতিতে শুধু চিকিৎসা নয়, গবেষক ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ২৪ ঘন্টা জরুরি সেবা চালু রাখা হয়৷ যেমন, বার্নহার্ড নখট ইনস্টিটিউট ফর ট্রপিকাল মেডিসিন ও মারবুর্গ ইউনিভার্সিটির ভাইরলজি ইনস্টিটিউট রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করতে ২৪ ঘন্টা তৈরি থাকে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটে একটি ২৪ ঘন্টা হটলাইন নম্বর রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
যাত্রীদের জন্য তথ্য সেবা
যাত্রীদের জন্যও আলাদা তথ্যসেবা দেয়া হয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ‘ট্রাভেল ও সেফটি ইনফরমেশন’-এর অধীনে তো এমনিতেই থাকে এসব তথ্য৷ এছাড়া সম্ভাব্য ভাইরাসের আক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে আলাদা তথ্য থাকে৷ উপসর্গ দেখা গেলে কী করতে হবে তাও লেখা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/S. Grassegger
কেন্দ্র ও রাজ্যের তথ্যের আদান-প্রদান
বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন এবং তথ্যের আদান প্রদান করেন৷ সেখানে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ হয়৷ তারা একে অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷