দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত চীনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের এক সাবেক সদস্য আত্মহত্যা করেছেন৷ দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ঝ্যাং ইয়াং-এর সাথে অভিযুক্ত দুই সাবেক জেনারেলের যোগসাজশের তদন্ত শুরুর পর এ ঘটনা ঘটে৷
বিজ্ঞাপন
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানায়, গত ২৩ নভেম্বর নিজের বাসায় আত্মহত্যা করেন ঝ্যাংইয়াং৷ মিলিটারি কমিশনের প্রভাবশালী এ সাবেক সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করার অভিযোগ উঠেছিল৷ মূলত অভিযুক্ত দুই জেনারেলের সাথে পলিটিক্যাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং- যোগাযোগের বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে৷দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৬ সালের জুলাইয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন জেনারেল গুও বক্সিয়ং৷ ২০১৫ সালে বিচার চলার সময়ই মারা যান আরেক জেনারেল জু কাইহাও৷ দু'জনেই পর্যায়ক্রমে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন৷
২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছেন৷ সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের অসংখ্য কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৩ লাখ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷
দুর্নীতিগ্রস্ত সব বিশ্বনেতারা
দুর্নীতি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহার৷ চলুন জেনে নেয়া যাক, গত কয়েক বছরে কোন কোন বিশ্বনেতার বিরুদ্ধে এ সব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, ব্রাজিল
লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের৷ ঘুস গ্রহণের মামলায় আগেই সাড়ে নয় বছরের জেল হয়েছিল৷ তবে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা লুলা আপিল করেছিলেন৷ শুক্রবার তাঁকে কুরিচিবা শহরের পুলিশ সদরদপ্তরে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের ফেডারেল বিচারক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
পার্ক জিউন-হাই, দক্ষিণ কোরিয়া
২০১৬ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পার্ক জিউন-হাই৷ চাঁদাবাজি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা শুরু হয়েছিল তারপর৷ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত৷
ছবি: Getty Images/A.Young-Joon
ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দে কির্সনের, আর্জেন্টিনা
প্রথমে ফার্স্ট লেডি এবং পরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট (২০০৭ থেকে ২০১৫) হওয়া ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ কির্শনার ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ পছন্দের ঠিকাদার কোম্পানিকে সরকারি নির্মাণ কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাইছেন৷ কেউ কেউ বলছেন, তিনি এলে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. La Valle
ইহুদ ওলমের, ইসরায়েল
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ওলমের ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর জেল হয়৷ অবশ্য পরের বছরেরর জুলাই মাসে ছাড়াও পেয়ে যান৷ জেলে যাওয়া ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম৷ পরে তাঁকে অনুসরণ করেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
ছবি: Reuters/O. Zwigenberg
আদ্রিয়ান নাসটাসে, রোমানিয়া
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১২ সালে এবং এরপর দু’বছরের জন্য জেলও খাটেন৷ রোমানিয়ান রেভোলিউশনের পরের ২৩ বছরে তিনিই প্রথম কোনো সরকার প্রধান, যাঁকে জেলের ভাত খেতে হয়েছে৷ আদ্রিয়ান নাসটাসে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/
চার্লস জি. টেলর, লাইবেরিয়া
নব্বইয়ের দশকে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সময় নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে ২০১২ সালে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া কোনো রাষ্ট্রপ্রধান টেলর৷ ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. van Weel
6 ছবি1 | 6
সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক অনেক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, সামগ্রিকভাবে সেনাবাহিনীর কর্মক্ষমতার উপরও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে, অনেকেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, সরকার বিরোধী ও সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এ অভিযান৷