নতুন ভাইরাসের প্রকোপ চীনে। আক্রান্ত বহু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত এর মোকাবিলা করার মতো কোনও ওষুধ তৈরি হয়নি।
বিজ্ঞাপন
মারণ ভাইরাসের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে চীনে। মধ্য চীনের ইউহান প্রদেশে নতুন করে ১৩৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। বেজিং জানিয়েছে, এই নিয়ে মোট ২০০ জন আক্রান্ত হলেন কোরোনা ভাইরাসে।
গত কয়েক দিন ধরেই অজানা অসুখে ভুগতে শুরু করেছিলেন চীনের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। প্রাথমিক ভাবে অসুখের কারণ বার করতে পারছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পরে আবিষ্কার হয় নতুন একটি ভাইরাসের। তার জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষ। তবে এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনও প্রতিষেধক বার করা যায়নি। সাধারণ ওষুধ দিয়েই রোগের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউ এইচ ও বা হু জানিয়েছে, সম্ভবত কোনও পশুর শরীর থেকেই এই সংক্রমণ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। কী ভাবে এর হাত থেকে বাঁচতে হবে তা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দ্রুত এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ভাইরাসটি অসম্ভব ছোঁয়াচে। অতি সহজেই তা একজনের শরীর থেকে অন্য লোকের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের লড়াই
ব্রাজিলে চার বছর আগে জিকা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ খুব ছোট মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে হাজারো শিশু যাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ তাদের কষ্টের কাহিনী থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: DW/T. Milz
ভ্রূণের মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে
২০১৫ সালে প্রথম খুব ছোট মাথা নিয়ে জন্মানো শিশুদের খবর প্রচার হয় ব্রাজিলে৷ তার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় তিন হাজার শিশু মাইক্রোসেফালি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে৷ এই ভাইরাস ভ্রূণের মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে বলে চিকিৎসকরা জ্যামাইকার ভাইরাসকে দায়ী করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Kopp
গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাস
মায়ের কোলে আড্রিয়ান, বয়স তিন বছর সাত মাস৷ মাইক্রোসেফালি ও বাঁকা মেরুদন্ড নিয়ে জন্মানো শিশুটি এতদিনে কেবল চিৎকার দিতে শিখেছে৷ আড্রিয়ানের মা কিন্তু গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলো৷
ছবি: DW/T. Milz
মশার কামড়
টাইগার ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে৷ গর্ভবতীর এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো না হওয়ায় শিশু বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EFE/G. Amador
শিশুদের কোনো ভবিষ্যত নেই
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের কোনো রকম নড়াচড়া বা অন্য কিছুই করার ক্ষমতা নেই৷ অর্থাৎ সারাটা জীবনই তাদের অন্যের উপর নির্ভর করে বাঁচতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Fabres
কষ্ট আর হতাশা
জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের জন্মের পর ব্রাজিলে প্রথমদিকে এমন ভাগ্যের সাথে মোকাবিলা করতে অনেক মায়েরই সমস্যা হয়েছিলো৷ পরে তারা ভাগ্যকে মেনে নিয়ে শিশুদের যত্নের দিকেই বেশি নজর দেওয়া শুরু করেন৷
ছবি: Reuters/J. Cabezas
এক মায়ের গল্প
ব্রাজিলের Aracaju -এ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এক মেয়ের মা ভালমিরা তাঁদের কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, অনেক বাবা নাকি সন্তানের মাইক্রোসেফালি অসুখের কথা জানার পর পালিয়ে গেছে স্ত্রী আর সন্তানকে ফেলে৷
ছবি: DW/T. Milz
মায়ের বিকল্প নেই
তারপরও এই শিশুদের মায়েরা আশার আলো দেখেন, সংসারে অভাব থাকা সত্ত্বেও শিশুদের নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান৷ হাজার হলেও নাড়ির টান তো, তাঁরা যে ‘মা’!
ছবি: DW/T. Milz
বিশ্বাস শুধু ঈশ্বরকে
সন্তানের ভবিষ্যৎ কেবল ঈশ্বরের হাতেই রয়েছে, এমন কথাই বেশিরভাগ মায়েরা বলেন, তাছাড়া তাদের যে আর কোনো পথও নেই! অসুস্থ শিশু নিয়ে নিম্ন আয়ের একক মায়েদের বেশ কষ্ট হয় সবকিছু সামলে নিতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Almeida
মায়েদের WhatsApp গ্রুপ
ব্রাজিলের Aracaju হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কিন্তু মায়েদের কোনো আশার বাণী শোনান না৷ শিশুদের মায়েরাই নিজেদের মধ্যে ‘হোয়াটস অ্যাপ’ গ্রুপ তৈরি করে একে অপরকে মানসিক শক্তি দিয়ে সাহায্য করে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
জিকা ভাইরাস এখনো সক্রিয়
জিকা ভাইরাস এখনো সক্রিয়, ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মাত্র কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Arguedas
10 ছবি1 | 10
তবে পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না যায়, তার জন্য চীন সরকারের তরফ থেকেও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এ দিকে জাপান এবং থাইল্যান্ডেও ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। অ্যামেরিকা ইতিমধ্যে তাদের দেশের বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়িয়েছে। পূর্ব এশিয়া থেকে যাওয়া যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে কোনও ভাবে তাদের শরীরে সংক্রমণ আছে কি না।
এর আগে একাধিক ভাইরাসের আক্রমণে মহামারি হয়েছে চীন সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। তবে চীন প্রশাসন জানিয়েছে, মহামারি আটকাতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আবার ইবোলার হানা
২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ এ মাসের শুরুর দিকে কঙ্গোতে আবারো নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করা হয়৷ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অসুখ বনাম বিজ্ঞান
মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবোলা নদী থেকে ইবোলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়৷ সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়৷ ১৯৭৬ সালের পর এ নিয়ে নবমবারের মতো ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কঙ্গোতে৷ ভীষণরকম ছোঁয়াচে এই ভাইরাস রুখতে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের অভিযান৷ কঙ্গোর গবেষণাগারে চলছে ইবোলা সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
রোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা
কঙ্গোতে ইবোলার প্রাদুর্ভাব ‘ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা’ স্পষ্ট৷ কারণ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে৷ এর মধ্যেই রোগের মোকাবিলা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ ছবিতে কঙ্গোর জনৈক ব্যক্তির শরীরে ক্লোরিন স্প্রে করছেন স্বাস্থ্যকর্মী৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
অন্যরকম স্বাগত জানাচ্ছে কঙ্গো
ইবোলা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ‘মহামারীর সময়ের’ মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগ মোকাবিলার চেষ্টা চালিয়েছে যাচ্ছেন৷ এমনকি বিমানে করে যাঁরা কঙ্গোতে এসে নামছেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
নানারকম কর্মসূচি
কঙ্গোর শহরাঞ্চলেও বহু মানুষের শরীরে ইবোলা শনাক্ত করা হয়েছে৷ ইবোলার প্রাদুর্ভাব যাতে শহর এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সর্বত্র ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে৷ ছবিতে বিকোরো হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্লিচিং পাউডার ছড়াচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/J. R. N'Kengo
ইবোলা রুখতে জোর
ইবোলাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ এমনকি বিমানবন্দরেও সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
জরুরি
ইবোলা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ৷ তাই কোনোভাবেই ইবোলা ভাইরাস আটকাতে দেরি করা যাবে না৷ সাধারণভাবে পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় যে কোনো সংক্রমণ ঠেকাতে৷ তাই কঙ্গোতেও ইবোলা রুখতে জরুরি পদক্ষেপ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
বিষাদ
কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিকোরো শহর এবং ইবোকো নামের একটি গ্রামে নতুন করে দু’জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁরা ইবোলায় আক্রান্ত৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই দু’জন নিয়ে মোট ৩১ জন ইবোলা আক্রান্ত রোগীকে সন্দেহের তালিকায় থাকা ৫২ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে৷ ছবিতে কঙ্গোর একটি হাসপাতালের ব্যালকনিতে ইবোলা আক্রান্ত রোগীরা দাঁড়িয়ে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
দরকার টিকা
কঙ্গো নদীর তীরের জনপদ, অর্থাৎ বন্দর নগরী বানডাকা থেকে রাজধানী কিনশাসায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ তাই চিকিৎসা বা সেবাকর্মীরা যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনও চালু হয়েছে ইতিমধ্যে৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
আপৎকালীন পরিস্থিতি
আক্রান্ত রোগীর শরীর নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ থেকে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ তাই কঙ্গোর সরকারকে এ মুহূর্তে রীতিমত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সজাগ থাকতে হচ্ছে, যাতে ইবোলা মহামারি না হয়ে দাঁড়ায়৷ ছবিতে উপযুক্ত সুরক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেওয়ার আপৎকালীন কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/K. Katombe
ইবোলা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কঙ্গোর পার্শ্ববর্তী ন’টি দেশের সঙ্গে কাজ করছে তারা৷ টিকাদানের জন্য কঙ্গোতে অস্থায়ী শিবিরও তৈরি হচ্ছে তাদের উদ্যোগে৷