অন্তত তা সরাসরি পান না করে, ফুটিয়ে কিংবা পরিশুদ্ধ করে খাওয়া উচিত, বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম৷ বলতে কি, প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে গিয়ে উভয়সংকটে পড়েছেন চীন সরকার৷
বিজ্ঞাপন
পানির গুণগত উৎকর্ষের বাৎসরিক জরিপটি করে ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয়৷ গতবছর তারা দেশের ২০৩টি শহরে ‘গ্রাউন্ডওয়াটার' পরীক্ষা করে দেখে এবং তা পান করা সম্ভব কিনা, সে অনুযায়ী ‘অতি খারাপ' ও ‘অপেক্ষাকৃত খারাপ' তকমা এঁটে দেয়৷ সরকারি সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা গত মঙ্গলবার এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে৷
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি পানের অযোগ্য৷ ২০১২ সালে পানের অযোগ্য পানির অনুপাত ছিল ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ, অর্থাৎ এবার তা আরও বেড়েছে৷ এবং দূষণ যদি শুধু পানিতেই সীমাবদ্ধ থাকতে, তাহলে তো কথা ছিল না৷ চীনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ঘোষণা করে যে, দেশের ১৬ শতাংশ জমি দূষিত; কৃষিজমির প্রায় বিশ শতাংশ নাকি ক্যাডমিয়াম গোত্রীয় ধাতুর দ্বারা দূষিত৷
বুড়িগঙ্গায় দূষণ: শত্রু কারা কারা?
২২শে মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস৷ সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিনটি উদযাপিত হয়৷ অথচ বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে পানির সরবরাহ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ৷ ঠিক যেমনটা ঘটছে বুড়িগঙ্গা নদীতে...
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী
একসময় মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু এই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এই ছবিটি শহরের বাবুবাজার সেতু থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নোংরা গন্ধযুক্ত পানি
ব্যবহারের অনুপোযোগী হলেও মানুষের হাত-পা বাঁধা৷ তাই বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা, গন্ধযুক্ত পানির ওপর দিয়েই খেয়াপার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব মানুষের বাস
ঢাকার এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি৷ ছবিটি সদরঘাট এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ
বুড়িগঙ্গা আজ যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছে৷ নদীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন কুচকুচে কালো, আর দুর্গন্ধযুক্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের কারণে বেড়েছে ঘনত্ব
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানির উপর দিয়ে জাহাজ চলার পরের দৃশ্য এটি৷ কি ভয়াবহ! আসলে দূষণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে গেছে বুড়িগঙ্গার৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীতে লঞ্চ চলাচল
দূষণের এই ভয়াবহ মাত্রার পরও বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে লঞ্চ৷ জিনিস-পত্র পারাপার তো বটেই, নদী পথে যে এখনও পার হচ্ছে মানুষ৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার
বুড়িগঙ্গার পানিতে রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা৷ তাঁদের কি আর কোনো উপায় নেই? তাঁরা কি আদৌ জানেন এর পরিবেশগত প্রভাব? সরকারই বা নিরব কেন?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোপাদেরও প্রয়োজন নদী
বুড়িগঙ্গার দূষিত জলেই কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ধোপারা৷ এ সব কাপড়ের বেশিরভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত বিছানার চাদর, ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, অপারেশন থিয়েটার বা ওটি-তে পড়ার ড্রেস ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া কাপড়
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত জলে ধোয়া কাপড় এবার মেলে দেওয়া হয়েছে৷ নদীর পাড়েই শুকানো হচ্ছে এগুলি৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য মিশছে সরাসরি
ঢাকা শহরের সুয়ারেজের লাইন থেকে সরাসরি বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে৷ এমন দশা চলতে থাকলে অচিরেই যে অন্ধকার নেমে আসবে – তা বলাই বাহুল্য৷ শহরের বাবুবাজার সেতুর নীচ থেকে তোলা এ ছবিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি
বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি শিল্পর বর্জ্য৷ ঢাকার হাজারীবাগে বেশ কিছু ট্যানারি শিল্প থাকলেও কারুরই নেই বর্জ্য শোধনাগার৷ তাই এ সব ট্যানারির রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিলে বুড়িগঙ্গায়৷ গত এক যুগ ধরে ঢাকার বাইরে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যানারি মালিরা কারখানাগুলো স্থানান্তর করছেন না৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুধু দূষণই নয়...
শুধু দূষণেই থেমে নেই বুড়িগঙ্গা৷ আছে দখলও৷ দূষণ আর দখলে থেমে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গার গতিপথ৷ কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা যেন এখন মরা খাল!
ছবি: DW/M. Mamun
আর এক শত্রু প্লাস্টিক
শিল্প আর মানব বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গা দূষণের আরেক অংশীদার প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য৷ প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য মিশছে বুড়িঙ্গার জলে৷ এ ছবিটি বাদামতলী থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
বিপদ সহসাও ঘনাতে পারে, যার উদাহরণ হলো পশ্চিম চীনের লানঝু শহর, যেখানে এ মাসের সূচনায় কলের জলে মাত্রাধিক বেনজিন পাওয়া যাবার পর বাসিন্দারা বোতলে সোডাওয়াটার কিনে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছিলেন৷ – বেশ কয়েক দশকের লাগামছাড়া প্রবৃদ্ধির দাম চোকাতে হয়েছে চীনের পরিবেশকে৷ আপাতত চীনের পরিবেশ সুরক্ষা আইনের সংশোধন নিয়ে বিতর্ক চলেছে এবং চীনের জাতীয় গণকংগ্রেসে সেই সব সংশোধন পেশ করা হয়েছে৷ গত ২৫ বছরের মধ্যে পরিবেশ আইনে এই প্রথম পরিবর্তন, কাজেই তা আশার সঞ্চার করবে বৈকি৷
অপরদিকে দূষণ প্রতিরোধ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সাফল্যের দাবি করছেন চীন সরকার৷ কিন্তু বাধা কি শুধু একটি? জাতিসংঘের কার্বন ক্রেডিট প্রক্রিয়া থেকে ভালোই রোজগার হচ্ছিল চীনের সংস্থাগুলির: গতবছর সেটা কমে ২০১২ সালের দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে যায়৷ জাতিসংঘের ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম বা সিডিএম বস্তুত কিয়োতো চুক্তির অংশ৷ উন্নয়নশীল দেশগুলির কোনো প্রকল্প যদি প্রমাণ করতে পারে যে, সেই প্রকল্পের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমেছে, তাহলে সেই প্রকল্প সার্টিফায়েড এমিশনস রিডাকশনস বা সিইআর সার্টিফিকেট পায়৷ প্রকল্পটি তখন সেই ‘কার্বন ক্রেডিট' অন্যান্য সরকার কিংবা কোম্পানিকে বেচে মুনাফা করতে পারে৷
২০০৬ সাল থেকে চীনা কোম্পানিগুলি মোট ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের কার্বন ক্রেডিট পেয়েছে এবং তা জাপান ও ইউরোপে বেচেছে অন্তত ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যে! সেই অর্থ আবার অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে, যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি কিংবা জ্বালানির অপচয় রোধ৷
কিন্তু বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিল্পসংস্থাগুলির কার্বন নির্গমন কমে গেছে, যার ফলে কার্বন ক্রেডিটের জন্য ইইউ-এর অ্যালাওয়েন্স নেমে এসেছে ২৫ ডলার থেকে ২৩ সেন্টে! কাজেই বাজারে কার্বন পার্মিট বেচার তরফে লোক বেশি, কেনার তরফে লোক কম৷ ফলে চীন এখন যে পন্থাটি নিচ্ছে, সেটি হলো: স্বদেশেই একটি এমিশনস মার্কেট সৃষ্টি করা, যা থেকে নতুন পুঁজি সৃষ্টি হবে৷