মাদক পাচারের অভিযোগে চীনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো এক ক্যানাডিয়ান নাগরিককে৷ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালে, ৩৬ বছর বয়সি ক্যানাডিয়ান নাগরিক রবার্ট শেলেনবার্গকে মাদক পাচারের দায়ে চীনের গুয়াংঝোউ বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ অভিযোগপত্র অনুযায়ী, মোট ২২২ কিলোগ্রাম মেথামফেটামিন অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের চেষ্টা করছিলেন রবার্ট৷ ঘটনাটি ২০১৪ সালে সেভাবে খবরে না এলেও গত কয়েক মাসে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা৷
প্রথমে আদালত ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সাজা বাড়িয়ে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়৷
এ ঘটনা ঘিরে চাপান-উতোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে চীন-ক্যানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক৷ ইতিমধ্যে ফাঁসির আদেশের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্যানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো৷
মাদক-জালে চীন-ক্যানাডা সম্পর্ক
রবার্টের এর আগে ক্যানাডাতেও মাদক পাচারের দায়ে জেল খাটার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ ক্যানাডিয়ান সূত্র অনুযায়ী, সেখানেও তিনি মাদকচক্রের সাথে জড়িত ছিলেন৷
যেসব দেশে গাঁজা বৈধ
গাঁজাসহ বেশ কিছু মাদক পৃথিবীর অনেক দেশেই অবৈধ৷ কিন্তু কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই বৈধ হয়েছে এসবের সীমিত সেবন ও বেচাকেনা৷ বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/empics/D. Dyck
আর্জেন্টিনা
গাঁজা সেবন অনেক দেশেই আইনতভাবে অপরাধ নয়৷ এমনই একটি দেশ ল্যাটিন অ্যামেরিকার আর্জেন্টিনা৷ সেখানে চিকিৎসার জন্য গাঁজা আগে থেকেই বৈধ হলেও ব্যক্তিগত পছন্দে সেবনের জন্য গাঁজাকে ২০০৯ সাল থেকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Abramovich
জার্মানি
২০১৭ সালের ১০ মার্চ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীদের গাঁজা সংগ্রহের অনুমতি দেয় জার্মান সরকার৷ অনুমোদনের পর দেশটিতে গাঁজার চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে৷
ছবি: Imago/C. Mang
অস্ট্রেলিয়া
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গাঁজার সেবন ও চাষ অস্ট্রেলিয়ায় বৈধ৷ সেই দেশের আদিবাসীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের মাত্রা শহরাঞ্চলে কিছুটা কম বলে জানা যায়৷
ছবি: Getty Images/P.Kane
বেলজিয়াম
প্রাপ্তবয়স্করা সেবনের জন্য তিন গ্রাম ওজন পর্যন্ত গাঁজা সঙ্গে রাখতে পারবেন ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে৷ ২০০৩ সাল থেকে কার্যকরী এই আইনে মাথাপিছু একটি গাঁজা গাছ লাগানোকেও বৈধতা দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
বলিভিয়া
মাথাপিছু ৫০ গ্রাম গাঁজা কেনা বলিভিয়ায় বৈধ৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
ক্যানাডা
সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলে সব রকমের গাঁজা সেবন ও চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ক্যানাডা সরকার৷ ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নতুন আইন এনে গাঁজা সার্বিকভাবে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/empics/The Canadian Press/J. Franson
চিলি
ল্যাটিন অ্যামেরিকার আরেক দেশ চিলিতেও ২০০৫ সাল থেকে বৈধ হয়েছে গাঁজা বা মারিহুয়ানার সেবন ও বিক্রি৷
ছবি: Nelson Vergara/Revista Minga
নেদারল্যান্ডস
সেই ১৯৭৬ সাল থেকেই ইউরোপের নেদারল্যান্ডসে গাঁজা বৈধ৷ সেই দেশের বিখ্যাত ‘কফিশপ’-গুলিতে গাঁজা বিক্রি ও সেবন বৈধ হলেও পাঁচ গ্রামের বেশি গাঁজা রাখতে পারবেন না কেউ৷
ছবি: Getty images/AFP/J. Juinen
দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৮ সালে গাঁজা সেবন ও গাঁজা চাষকে বৈধতা দেয়৷ প্রসঙ্গত, এই দেশের ডাক্তারেরা চিকিৎসার প্রয়োজনে গাঁজা সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন ঠিকই, কিন্তু কোনো বিশেষ দোকান বা হাসপাতালে তা বিক্রির পরিষেবা এই মুহূর্তে নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch
উরুগুয়ে
২০১৩ সাল থেকে উরুগুয়েতে সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়েছে গাঁজা সেবন ও বিক্রি৷ শুধু তাই নয়, নিষেধাজ্ঞা উঠেছে গাঁজা চাষের ওপর থেকেও৷
ছবি: Reuters/A. Stapff
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
অঞ্চল অনুসারে ভিন্ন আইন থাকায় গাঁজা বা অন্যান্য মাদক বিষয়ক আইনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন৷ কিছু রাজ্যে ব্যক্তিগত সেবন বৈধ হলেও দেখা যায় যে, সেখানে গাঁজার চাষে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ কিন্তু ডাক্তারি পরামর্শে গাঁজা সেবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশেই বৈধ বলে জানা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. Locher
11 ছবি1 | 11
কিন্তু রবার্টের আইনজীবীর মতে, এই তথ্যগুলি আগেই আদালতের কাছে পেশ করা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে আদালত রবার্টকে ১৫ বছর কারাবাসের সাজা দেয়৷
যথেষ্ট নতুন সাক্ষ্য বা প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে একদিনের মধ্যেই রবার্টের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যদণ্ড করা হলো, তা নিয়ে অনেকেই আঙুল তুলছেন চীন ও ক্যানাডার মধ্যে খারাপ হতে থাকা সম্পর্কের দিকে৷
গত ডিসেম্বরে চীনা নাগরিক ও প্রযুক্তি সংস্থা ‘হুয়াওয়েই'-র কর্মকর্তা মেং ওয়ানচৌ-কেও মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেপ্তার করে ক্যানাডিয়ান পুলিশ৷
ডিসেম্বরের পর থেকে আরো দু'জন ক্যানাডিয়ান নাগরিককে অবৈধ মাদক পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু কারো সাজাই রবার্টের মতন চরম হয়নি৷ যদিও চীনা পুলিশের মতে রবার্টের গ্রেপ্তার হওয়ার সাথে বাকি দুটি ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
কোন মাদকের কারণে শরীরে কী ক্ষতি হয়?
বাংলাদেশে মাদকাসক্তি একটি বড় সমস্যা৷ মাদক হিসেবে একসময় ফেনসিডিল ও গাঁজার বেশ চল থাকলেও এখন সেই স্থান নিয়েছে ইয়াবা৷ এছাড়া আছে হেরোইন, আফিম, অ্যালকোহল, প্যাথিডিন ইত্যাদি৷
ছবি: bdnews24.com
ইয়াবা
বাংলাদেশে বর্তমানে মাদক হিসেবে এটিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে৷ এর ফলে কিডনি, লিভার ও ফুসফস ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়৷ এছাড়া ইয়াবার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
ফেনসিডিল
একসময় এটিই প্রধান মাদক ছিল৷ ইয়াবা আসার পর ফেনসিডিলের ব্যবহার কিছুটা কমেছে৷ এটি খাওয়ার কারণে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়৷ ফলে খাবার না খাওয়ায় শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না৷ এতে স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ ইয়াবার মতো ফেনসিডিলও যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়৷ এছাড়া শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
ছবি: bdnews24.com
গাঁজা
রক্তবাহী শিরার ক্ষতি করে, ফলে রক্ত পরিবহনে সমস্যা হয়৷ মস্তিষ্কের উপর প্রভাবের কারণে স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়৷ তাছাড়া মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে৷ পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টিকুলার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ অনেকের ধারণা গাঁজা খেলে সৃজনশীলতা বাড়ে৷ তবে এটি ভুল বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে৷ গাঁজা খেলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, চোখের দৃষ্টি কমে যায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/F. K. Godhuly
হেরোইন
যারা অধিক পরিমাণে হেরোইন সেবন করেন তারা নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েন৷ যেমন লিভার সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ, তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনি রোগ, হার্ট ও ত্বকে সমস্যা, হেপাটাইটিস, নারীদের সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা, গর্ভপাত ইত্যাদি৷
ছবি: bdnews24.com
আফিম
আফিম খেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা থেকে অবচেতন হয়ে পড়া এবং বেশি পরিমাণে খেলে মৃত্যুও হতে পারে৷ এছাড়া মুখ ও নাক শুকিয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
অ্যালকোহল
জার্মানির সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ফর মেন্টাল হেল্থ-এর ফাল্ক কিফার বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ হয়ে জীবনের মূল্যবান বছরগুলি হারিয়ে যায়৷ লিভার সিরোসিস থেকে শুরু করে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন অনেকে৷ ডাব্লিউএইচও-র রিপোর্ট বলছে, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ৩.৩ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন৷ এছাড়া ২০০টি নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে পারে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের কারণে৷