চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি হতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। এর প্রভাব অ্যামেরিকার উপর পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
বিজ্ঞাপন
সাত বছর ধরে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত দুই পক্ষ মতানৈক্যে আসতে পারেনি। মঙ্গলবার অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীন সমঝোতায় পৌঁছেছে। দুই পক্ষের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে বুধবার তাতে সই করতে পারে দুই পক্ষ। এই চুক্তির ফলে ইউরোপে চীন যেমন একাধিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়াতে পারবে, তেমন চীনেও ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানি বাজার তৈরির সুযোগ পাবে। তবে চীন শেষ পর্যন্ত কতটা ছাড় দেবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
ইইউ-যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তিতে যা আছে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ যতটা সম্ভব মসৃণ করতে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাজ্য৷ চলুন দেখে নেয়া যাক চুক্তির চুম্বক অংশগুলো....
ছবি: Getty Images/AFP/G. Kirk
শূন্য শুল্ক
যুক্তরাজ্য ইইউর বাজার ছাড়ার পর পণ্যের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা দেবে এই চুক্তি৷ এর ফলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চলবে, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ ওয়াইন, অর্গ্যানিকস, অটোমোটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কেমিক্যালসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এ চুক্তিতে৷
ছবি: Aaron Chown/AFP/Getty Images
যাতায়াত
এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অবাধ যাতায়াত, চাকরি, লেখাপড়া করা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বসবাস করার সুযোগের অবসান হলো৷তবে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য ইইউভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাজ্যে যাওয়া আসার জন্য ভিসা লাগবে না৷ এছাড়া ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাসিন্দার যদি কোনো চাকরি, ব্যবসা বা অবসরভাতার মতো কোনো বিষয় কিংবা বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ থাকে, সেগুলো তাদেরই থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/S. Parsons
বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতা
যুক্তরাজ্যের যাত্রীবাহী বিমানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগের মতো মুক্তভাবে যাতায়াতের অধিকার হারাবে৷এখন থেকে দু পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিমানের নিরাপদ চলাচল, নিরাপত্তা এবং এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে৷
ছবি: Markus Mainka/picture alliance
ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের স্বীকৃতির প্রশ্ন
ইইউ এবং যুক্তরাজ্যের ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং এমন আরো কিছু পেশাজীবী যে আগে অবাধ স্বীকৃতি পেতেন, সেই সুযোগ আর থাকবে না৷
ছবি: Maciek Musialek/NurPhoto/picture alliance
জ্বালানি সহযোগিতা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন জ্বালানি বাজার, ইউরোপিয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি এবং ইইউর এমিশন ট্রেডিং সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন৷
ছবি: Gareth Fuller/empics/picture alliance
বিজ্ঞান, গবেষণা
শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এরাসমুস ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রাম, গ্যালিলিও স্যাটেলাইট সিস্টেমসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করবে যুক্তরাজ্য৷ তবে হরাইজন ইউরোপ, দ্য ইউরাটম রিসার্চ এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ ছয়টি কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে ব্রিটেন৷
ছবি: Chris Ison/empics/picture alliance
ট্রাক যাতায়াত
যুক্তরাজ্যের ট্রাক আর আগের মতো অবাধে সীমান্ত পেরিয়ে ইইউ-তে আসতে পারবে না৷তবে একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই চক্তিতে৷
গোটা বিশ্বের মতোইউরোপেও চীনের একাধিক সংস্থা ব্যবসা করে। ইউরোপে চীনের বাজারও যথেষ্ট। কিন্তু এখনো পর্যন্ত চীনের বাজার উন্মুক্ত নয়। বিদেশি সংস্থাকে সেই অর্থে চীনে বাণিজ্য করতে দেওয়া হয় না। এই নিয়েই প্রায় সাত বছর ধরে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছিল ইইউ-র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য ছিল, ইউরোপে চীনকে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে হলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশকেও চীনে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রাথমিক ভাবে চীন এই প্রস্তাবে সহমত ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে চীনের বাজার খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। রিয়েল এস্টেট, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসে ইউরোপ চীনের কাছে সমান অধিকার চেয়েছে। অর্থাৎ, চীনের সংস্থা যে সুবিধা পায়, ইউরোপের সংস্থাকেও সেই সুযোগ করে দিতে হবে।
অন্যদিকে,চীনও এনার্জি সহ একাধিক বিষয়ে ইউরোপের কাছে বিশেষ সুবিধা চেয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত এই চুক্তিতে লাভবান হবে চীন। কারণ, ইউরোপে আরো বেশি বাণিজ্যের সুযোগ পাবে তারা। ইউরোপের ক্ষেত্রে চীন বাজার পুরোপুরি খুলবে না। চীনের সংস্থা ছাড়া এখনো ইউরোপের সংস্থা গুলি সরাসরি চীনে ব্যবসা করতে পারবে না। তবে চুক্তির সম্পূর্ণ খসড়া না দেখা পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে না।
কূটনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, চুক্তিটি যতটা না আর্থিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জো বাইডেনের আমলে অ্যামেরিকা যাতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করে, তার ভূমিকা তৈরি হলো এই চুক্তিতে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অ্যামেরিকার উপর প্রভাব ফেলবে।