চীনে তৈরি সোলার প্যানেলের উপর শাস্তিমূলক কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ জবাবে ইউরোপীয় ওয়াইন রপ্তানিতে সরকারি ভরতুকির ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবে বলে ঘোষণা করেছে চীন৷
বিজ্ঞাপন
এটাতে ঠিক ‘টিট ফর ট্যাট' বলা চলে না, কেননা চীনের পাল্টা চাল অনেকটা পাকা দাবাড়ুর মতো হলো৷ চীনে তৈরি সোলার প্যানেলের উপর বাড়তি শুল্ক বসলে লাভবান হবে জার্মানির মতো দেশ৷ অথচ জার্মানি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে বসে আছে যে, তারা সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রেও চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরোধী৷ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং-এর সাম্প্রতিক জার্মানি সফরে সেটা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
‘ঘোড়া সামলাও!
সৌরশক্তির ক্ষেত্রে একাধিক বড় জার্মান কোম্পানি – যেমন সোলার ওয়ার্ল্ড – ব্রাসেলসে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পিছনে ছিল৷ কিন্তু জার্মানি চীনে অন্যান্য বহু পণ্য রপ্তানি করে থাকে, যেমন রাসায়নিক৷ কাজেই সব মিলিয়ে চতুর্দিক বিবেচনা করেই বার্লিনকে তার অবস্থান ঠিক করতে হয়েছে৷ ওদিকে জার্মানি ইউরোপে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী; এছাড়া বেইজিং-এ বলা হয়ে থাকে যে, ব্রাসেলসকে দিয়ে যদি কোনো কাজ করিয়ে নিতে চাও, তাহলে আগে বার্লিনে যাও৷ কাজেই চীন তার পাল্টা চাল ভাবার সময় সন্তর্পণে উত্তর ইউরোপের দেশগুলিকে বাদ দিয়ে আগে দক্ষিণ ইউরোপকে এক হাত নিয়েছে৷
মহাশূন্যে হাত বাড়াচ্ছে ইউরোপ
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
তারা থেকে তারায়
চালকযুক্ত স্পেস ক্যাপসুলটির নাম ওরিয়ন৷ এসা এবং নাসা ২০১৭ সালে যৌথভাবে এই ক্যাপসুলটিকে মহাশূন্য প্রেরণ করবে৷ এসা দেবে মুখ্য মডিউলটি৷ ক্যাপসুলটি প্রথমে চন্দ্র প্রদক্ষিণ করবে৷ তারপর মহাশূন্যে অবস্থান নেবে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হিসেবে৷ হয়তো মঙ্গলগ্রহ যাত্রার পথে তা কাজে লাগবে৷
ছবি: ESA-D. Ducros, 2012
মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় অভ্যস্ত হওয়া
প্রথমে ইউরোপের নভচারীদের পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস’এ যাত্রা করার পালা৷ এসা’র অ্যাস্ট্রোনট ইটালির লুকা পার্মিতানো একটি জলের চৌবাচ্চায় স্পেস ওয়াক অভ্যেস করছেন৷ স্থান: কোলোনের কাছে ইউরোপীয় নভচারী কেন্দ্র (ইএসি)৷
ছবি: ESA/H. Rueb, 2010
আইএসএস’র জন্য তিন ইউরোপীয় নভশ্চর
লুকা পার্মিতানো আইএসএস’এ থাকবেন এ’বছরের মে মাস থেকে নভেম্বর মাস অবধি৷ ২০১৪ সালে এ’ভাবেই যাবেন জার্মানির আলেক্সান্ডার গের্স্ট৷ তারপরে যাবেন একজন মহিলা, ইটালির সামান্থা ক্রিস্টোফোরেত্তি৷
ছবি: dapd/NASA
মানুষের বদলে মাল পরিবহণ
তিন ইউরোপীয় নভশ্চর আইএসএস’এ যাবেন রুশ সোয়ুজ রকেটে চড়ে৷ এসা ইতিমধ্যে তথাকথিত অটোম্যাটিক ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি’র মাধ্যমে আইএসএস’এ মালপত্র পাঠায়৷ পরের যাত্রা আগামী ১৮ই এপ্রিল৷ এটিভি’তে সাত টন খাদ্য ও সরঞ্জাম পাঠানো যায়৷
ছবি: ESA/S.Corvaja/dapd
চন্দ্রবাসের স্বপ্ন
চন্দ্রপীষ্ঠে এ’ধরনের একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন থেকে এসা এখনও অনেক দূর৷ সেখানে জন পাওয়া গেলে, তা’তে চাঁদের ধুলো মিশিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা যেতে পারে৷ এবং চাঁদে জল আছে কিনা, চীনের চাঙ-ই ৩ রোভার চন্দ্রযান তা এ’বছরেই জানতে পারবে৷ চন্দ্রে অবতরণের পর এসা ঐ রোভারে তথ্য পাঠানোর ভার নেবে এবং তার গতিবিধি পরিচালনা করবে৷
ছবি: ESA/Foster + Partners
ডার্মস্টাট থেকে স্যাটেলাইট পরিচালনা
এসা’র ইউরোপীয় মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বা এসক থেকে চাঙ-ই ৩’এর আগের চীনা মহাকাশযানগুলিতে তথ্য পাঠানোয় সাহায্য করা হয়েছিল৷ চীনের আগের মহাকাশযানগুলি চন্দ্র প্রদক্ষিণ করেছে কিন্তু চন্দ্রপীষ্ঠে অবতরণ করেনি৷ এসক থেকে অপরাপর বহু গবেষণা ও যোগাযোগ সংক্রান্ত স্যাটেলাইটের যাত্রার উপর নজর রাখা হয়৷
ছবি: ESA - J. Mai
থ্রি-ডি’তে আমাদের ছায়াপথ
এ’বছরের অক্টোবর মাসে স্পেস প্রোব বা মহাশূন্য অভিযাত্রী যান ‘গাইয়া’ তার যাত্রা শুরু করবে৷ ইন্টারোফেরোমিটারের সাহায্যে আলোকতরঙ্গ থেকে আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের একটি থ্রি-ডি ছবি তৈরি করবে এবং ‘মিল্কি ওয়ে’ ছায়াপথের অনেক রহস্য উদঘাটন করবে৷ এসা’র গবেষকরা অন্তত এক বিলিয়ন নতুন তারা আবিষ্কার করার আশা করছেন৷ এমনকি তিন বিলিয়নও হতে পারে৷
ছবি: ESA/Medialab
গ্রহাণুর সন্ধানে
রোজেট্টা স্পেস প্রোব’টি ২০০৪ সাল যাবৎ ৬৭/পি চুরজুমভ-গেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিমুখে যাত্রা করছে৷ ২০১৪ সালের সূচনায় মহাকাশযানটি ধূমকেতুটির কক্ষপথে যোগদান করবে৷ তবে ধূমকেতু অবধি পৌঁছতে পৌঁছতে রোজেট্টা অনেক কিছু দেখবে: নাসা’র ডিপ ইমপ্যাক্ট প্রোজেক্টাইলটি কিভাবে টেম্পল ওয়ান ধূমকেতুতে আঘাত করবে৷ এচাড়া রোজেট্টা দেখবে মঙ্গলগ্রহ এবং স্টাইনস ও লুটেশিয়া নামের দ’টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধূমকেতুর উপর অবতরণ
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে রোজেট্টা ফিলি নামের এই রোবোটটিকে ধূমকেতুর উপরে নামাবে৷ কোলোনে অবস্থিত জার্মান বিমান ও মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র ডিএলআর থেকে সেই অবতরণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷ কাজটা শক্ত হবে, কেনান ধূমকেতুটির মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি নয়৷ রোজ্ট্টা ধূমকেতুটির রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করবে৷
ছবি: ESA/AOES Medialab
স্যাটেলাইটের রিসাইক্লিং সম্ভব নয়
অর্ধশতাব্দী ধরে মহাকাশে রকেট ও স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় প্রায় ছ’লাখ নানা ধরনের ও আকারের স্ক্র্যাপ এ’ভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ এসা চাপ দিচ্ছে মহাশূন্যে আবর্জনা কমানোর জন্য: অকেজো স্যাটেলাইটগুলোকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিতভাবে ভূপাতিত করতে হবে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
চীনে সুরা রপ্তানি করে থাকে প্রধানত ফ্রান্স ও ইটালি৷ তারাই এবার চিন্তায় পড়বে, জার্মানি নয়৷ জার্মানি তো ইতিমধ্যেই ব্রাসেলসে চাপ সৃষ্টি করে চীনা সোলার প্যানেলের উপর শাস্তিমূলক করের পরিমাণ কম করে এনেছে: আদতে যা ভাবা হয়েছিল, সেই গড়ে ৪৭ শতাংশের তুলনায় প্রাথমিকভাবে মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ৷ সব পক্ষই যে নিজের নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে, তা যেমন স্পষ্ট, তেমনই স্বাভাবিক৷ আসল পরিস্থিতি তো কারো অজানা নয়৷ চীন থেকে যে সোলার প্যানেল বেচা হয়, তার দাম ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচের চেয়েও ৮০ শতাংশ নীচে: যাকে প্রাইস ডাম্পিং ছাড়া আর কিছু বলা চলে না৷ এবং এটা সম্ভব একমাত্র সরকারি ভরতুকি থাকলে৷
যত গর্জে তত বর্ষে না
তার ডাম্পিং-বিরোধী এবং ভরতুকি-বিরোধী নীতি অনুযায়ি ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো শুধু একটি দেশ কিংবা অর্থনীতি নয়৷ বৈঠকখানার রাজনীতি আর অন্দরমহলের রাজনীতির মধ্যেও ফারাক থাকে৷ কাজেই ইইউ-কে এমনভাবে এগোতে হচ্ছে যা-তে বেইজিং সেই অন্তর্নিহিত বার্তাটি পায়৷ বেইজিং-এরও একই মনোভাব, একই বার্তা৷ চীন বলছে: ভরতুকি তো আমরা একা দিই না; বাণিজ্য যুদ্ধেও আমাদের বিশেষ আগ্রহ নেই৷ অর্থাৎ এবার শুরু হবে আপোশের খোঁজ, যা-তে দু'পক্ষেরই মুখরক্ষা হয়৷
জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী ফিলিপ রোয়েসলার ইতিমধ্যেই একটি সতর্ক প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় পুনরায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ডাক দিয়েছেন এবং ব্যাপকতর বাণিজ্য লড়াইয়ের বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ রোয়েসলার বলেছেন একটি ‘‘ন্যায্য নির্মাণকাঠামোর'' কথা – অর্থাৎ এমন একটি আপোশ যা-তে দু'পক্ষই লাভবান হয়৷ চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একদিকে যেমন তাদের আলাপ-আলোচনায় আগ্রহের কথা বলছে, অপরদিকে তেমন হুমকি দিচ্ছে, তারা নাকি দেশি সুরা শিল্পের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে; ইউরোপ থেকে ওয়াইন আমদানি সম্প্রতি অতি দ্রুত হারে বেড়েছে, ইত্যাদি৷
কথাটা সত্যি বৈ মিথ্যে নয়৷ চীন গতবছর ৪৩ কোটি লিটার ওয়াইন আমদানি করে, তার দুই-তৃতীয়াংশ ইউরোপ থেকে৷ চীনের শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ি এক ফ্রান্স থেকেই আসে ১৭ কোটি লিটার ওয়াইন৷ ওদিকে ২০১২ সালে ফ্রান্সের মোট সুরা রপ্তানির ৯ শতাংশ, যার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ইউরো, গেছে চীনে৷ কিন্তু চীনা সুরা প্রস্তুতকারকদের অভিযোগ দৃশ্যত স্পেন থেকে আমদানি করা অতি সস্তা ওয়াইনের কারণে৷