পরমাণু ক্ষমতায় বাড়াচ্ছে চীন। সে কথা মাথায় রেখে, বিশেষ পরমাণু প্রকল্পে সই করেছেন বাইডেন। দাবি সংবাদমাধ্য়মের।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, গত মার্চ মাসে একটি অতি গোপন নথিতে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চীন কেন্দ্রিক পরমাণু প্রকল্পের কথা বলা আছে সেই নথিতে।
শুধু চীন নয়, উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার কথাও মাথায় রাখা হয়েছে ওই নথিতে। বলা হয়েছে, ওই দুই দেশ থেকেও অ্যামেরিকার দিকে পরমাণু আক্রমণ হতে পারে। তা প্রতিহত করার জন্যই এই নতুন প্রকল্প।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, গত মার্চ মাসে ওই নথিতে সই হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত হোয়াইট হাউস ওই নথি জনসমক্ষে আনেনি। কোনো ঘোষণাও দেয়া হয়নি। তবে, ২০২৫ সালে বাইডেন অফিস ছাড়ার আগে তা কংগ্রেসকে জানানো হবে।
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
কর্মকর্তাদের বক্তব্য
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট মানতে চাননি মার্কিন কর্মকর্তারা। অ্যামেরিকার অস্ত্র বিষয়ক অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ২০২২ সালে দেশের পরমাণু পরিকল্পনা নিয়ে বাইডেন সরকার যে অবস্থান ঘোষণা করেছিল, তা বদলেছে বলে তারা মনে করে না। অ্যামেরিকার পরমাণু অবস্থান বরাবরই রাশিয়া কেন্দ্রিক ছিল, এখনো তার পরিবর্তন হয়নি বলেই তারা মনে করেন।
হোয়াইটের মুখপাত্র সিয়ান স্যাভেটকে নির্দিষ্ট করে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি জানান, ''গত চারটি সরকারের মতো এই সরকারও একটি পরমাণু গাইডেন্স এবং এমপ্লয়মেন্ট বিষয়ক নথি প্রকাশ করেছে। এটি নতুন কিছু নয়।'' তার বক্তব্য, পুরো নথি প্রকাশ হয়নি, কারণ, কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে। তবে তা বাইরে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেখানে নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের প্রসঙ্গ বলা হয়নি। সার্বিক রূপরেখার কথা বলা হয়েছে।
চীন নিয়ে মাথাব্যাথা
কর্মকর্তারা যা-ই বলুন, চীন নিয়ে যে অ্যামেরিকা চিন্তিত তা এক কথায় মেনে নিচ্ছেন সমস্ত বিশেষজ্ঞ। অস্ত্র বিষয়ক সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড্যারিল কিম্বল বলেছেন, অ্যামেরিকার ধারণা, গত কয়েক বছরে চীন পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তা পাঁচশ থেকে এক হাজারে নিয়ে যাবে। রাশিয়ার অস্ত্রাগারে প্রায় চার হাজার পরমাণু অস্ত্র আছে। একারণেই অ্যামেরিকা পরমাণু প্রকল্পের অভিমুখ পরিবর্তন করতে চাইছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই একটি রিপোর্টে স্পষ্ট করেছে যে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চীন তাদের সামরিক শক্তি বাড়াবে। রাশিয়ার সঙ্গে তারা আরো বেশি সমন্বয় তৈরি করবে।