দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের সংস্থা আসিয়ান৷ এর সদস্য ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের বিবাদ রয়েছে৷ আসিয়ানের অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলো হচ্ছে কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড৷
গত বৃহস্পতিবার চীনের কোস্ট গার্ডের তিনটি জাহাজ ফিলিপাইন্সের দুটি নৌকার পথ রোধ করে ও তাদের দিকে অনেক জোরে পানি ছুড়ে মারে৷ ফিলিপাইন্সের নৌকা দুটি দক্ষিণ চীন সাগরের এক বালুচরে থাকা তাদের সেনাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাচ্ছিল৷ কিন্তু চীনের বাধার কারণে তাদের ফিরে যেতে হয়৷ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে ‘বিপজ্জনক, উসকানিমূলক ও অযৌক্তিক' বলে আখ্যায়িত করেছিল৷ ফিলিপাইন্সের নৌকায় সশস্ত্র হামলা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তিকে সক্রিয় করবে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷
সোমবার শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন কখনই ছোট দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবে না৷ ‘‘চীন সবসময় আসিয়ানের ভালো বন্ধু, প্রতিবেশী ও অংশীদার ছিল, আছে এবং থাকবে,'' বলেন তিনি৷
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ছবিঘরে দেখুন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: Reuters/Jason Leeকমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা শি ঝংজুন ছিলেন তাঁর পিতা৷ পিতার কীর্তি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে শুরুর দিকে বাধা তৈরি করে৷ ১৯৬২-তে দল থেকে বহিষ্কৃত হন ঝংজুন৷ কয়েক বছর পর চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নিপীড়িত হন, এমনকি জেলেও যেতে হয় তাঁকে৷ সেই পিতার ছেলের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করে অবশেষে ১৯৭৪-এ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টি৷ সেই থেকে শুরু শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media/Pictures From Historyরসায়ন প্রকৌশলের ছাত্র শি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে৷ কঠিন পরিশ্রম করেন৷ আট বছর পর দলের পক্ষে প্রথম বড় পদটি পান৷ ১৯৮২ সালে নির্বাচিত হন দলের হের্বেই রাজ্যের সম্পাদক৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি প্রদেশের গভর্নর নির্বাচিত হন৷ এমনকি চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ও ব্যবসাকেন্দ্র সাংহাই রাজ্যদলের প্রধানের পদটিও ঝুলিতে পুরে নেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/CPAশি’র ক্যারিয়ারে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ যে দল তাঁর পিতাকে বহিষ্কার করেছে সেই কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি৷ এমন কি কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করে, যার অর্থ হলো, অলিখিতভাবে তিনি হয়ে ওঠেন চীনের নেতা৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও-এর দু’বারের মেয়াদ শেষ হবার পর চীনের জাতীয় কংগ্রেস তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে৷
ছবি: GOH CHAI HIN/AFP/Getty Imagesনির্বাচনের পর শি-এর রাজনৈতিক শ্লোগান হয় ‘চাইনিজ ড্রিম’৷ অনেকে একে আমেরিকান ড্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললেও আসলে এর অর্থ চীনের নবউত্থান৷ শি একে ‘চীনা জাতির মহাউত্থান’ হিসেবেই উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, চীনকে পৃথিবীতে এর ‘প্রাপ্য জায়গা’ নিশ্চিত করতে হবে৷ তাঁর মতে, সেই জায়গা করতে গিয়ে ‘শত্রুর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে’ যেতেও পিছপা হবে না চীন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong১৯৪৯ সালের চীনের গৃহযুদ্ধের পর শি’ই প্রথম কোনো চীনা নেতা যিনি তাইওয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইয়িং-জু’য়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি৷ তার মানে এই নয় যে তিনি ছাড় দিতে রাজি আছেন৷ ২০১৮ সালের মার্চে তিনি তাইওয়ানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি আলাদা হবার চিন্তা আসে মাথায়, তাহলে ‘ইতিহাসের শাস্তি’ জুটবে তাদের কপালে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শি কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতার স্বীকৃতি পান৷ এ স্বীকৃতি এর আগে কেবল আধুনিক চীনের স্থপতি, দলের সাবেক চেয়ারম্যান মাও সেতুং এবং আরেক সাবেক চেয়ারম্যান দেং জিয়াওপিং ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন পেয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/Feng Li২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (যেটি মূলত সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে) নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়৷ এতে করে ৬ লাখ ৬০ হাজার শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photoএকনায়কতন্ত্রের খড়গ হতে দেশকে বাঁচাতে ১৯৮২ সালে জিয়াওপিং নিয়ম করেন যে, একজন দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না৷ ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ, চীনের সংসদ শি’কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে এবং ভোটের মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করে যে, একজন প্রেসিডেন্টের দু’বার নয়, বরং অনির্দিষ্টবারের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন৷ তাই শি-এর সামনে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকার পথ খোলা৷
ছবি: Reuters/Jason Lee ফিলিপাইন্সের নৌকা আটকে দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে সম্মেলনে বলেন, তিনি এই ধরনের বিবাদ ‘ঘৃণা' করেন৷ দুতার্তে বলেন, এসব বিবাদ মেটানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে আইনের শাসন৷ তিনি ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক সালিসের দেয়া এক রায়ের কথা উল্লেখ করেন৷ সেখানে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের দাবির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই৷
সোমবারের সম্মেলনে মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না৷ তাৎক্ষণিকভাবে এর কারণ জানা যায়নি৷ মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রকে ফোন করেও উত্তর পাওয়া যায়নি৷
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার আসিয়ানের কোনো প্রতিনিধিকে অং সান সু চিসহ আটক করা অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি৷ সে কারণে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের শাসক জেনারেল মিন অং লায়িংকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি৷
জেডএইচ/কেএম (রয়টার্স, এপি)