চীনের বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি সাজাতে ভারতে আসছেন মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও। সঙ্গে আসবেন মার্কিন সামরিক সচিবও।
বিজ্ঞাপন
আগামী সপ্তাহেই ভারতে আসবেন মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও। বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিল অ্যামেরিকা। পম্পেও-র সঙ্গে আসার কথা অ্যামেরিকার সামরিক সচিব মার্ক এসপারেরও। মঙ্গলবার এসপারই বিবৃতি জারি করেছেন। চীনের সঙ্গে ভারতের চলতি সংঘাত এবং এশিয়া প্যাসিফিকে ভারত এবং অ্যামেরিকার যৌথ শক্তিবৃদ্ধির বিষয়ে তাঁরা ভারতীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে এসপার বিবৃতিতে জানিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতেচীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অন্য দিকে গত এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের লাদাখ সংঘাত চলছে। এখনো পর্যন্ত কোনো দেশই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে রাজি হয়নি। বরং বিতর্ক আরও বেড়েছে। চীন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশকে তারা ভারতের অংশ বলেই মনে করে না। অন্য দিকে কাশ্মীর প্রসঙ্গে চীন এবং পাকিস্তান একজোট হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সরকার বরাবরই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। লাদাখ সংঘাতে অ্যামেরিকা ঘোষিত ভাবে ভারতকে সমর্থন করেছে। কিন্তু মঙ্গলবার এসপার যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। এসপার বলেছেন, চীনের স্ট্র্যাটেজিক চ্যালেঞ্জ রুখতে ভারত এবং অ্যামেরিকা আলোচনা করবে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের শক্তি কী ভাবে ক্ষয় করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে। অর্থাৎ, চীন নিয়ে আলোচনা করতেই যে পম্পেও এবং এসপার ভারতে আসছেন, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
এসপারের বক্তব্য, উপমহাদেশ এবং এশিয়া প্যাসিফিকে ভারত অ্যামেরিকার স্ট্র্যাটেজিক বন্ধু। দুই দেশ সামরিক স্তরে অনেক কিছু বিনিময়ও করে। ভারতীয় প্রশাসন সূত্র জানাচ্ছে, এ বার পম্পেও এবং এসপারের সঙ্গে বৈঠকের পর ইনটেলিজেন্স শেয়ারিংয়ের ব্যবস্থা হতে পারে। অর্থাৎ, ভারতীয় গোয়েন্দারা মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করবে। বোঝাই যাচ্ছে, চীন সম্পর্কিত তথ্যের জন্যই দ্রুত এই ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়াও সামরিক পোশাক এবং সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও ভারত এবং অ্যামেরিকার চুক্তি রয়েছে। লাদাখ সংঘাতের জন্য এক সপ্তাহ আগেই অ্যামেরিকার কাছ থেকে বিশেষ ধরনের শীতের সরঞ্জাম আনিয়েছিল ভারত।
সম্প্রতি জাপানে চীন নিয়েই অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া বৈঠক করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং অ্যামেরিকা ভারতের মালাবার উপকূলে নভেম্বরে নৌ মহড়া করবে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ চীন সমুদ্র এবং লাদাখে চীনের উপর যৌথ ভাবে চাপ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে হংকং এবং তাইওয়ান নিয়েও চীনের উপর ক্রমশ চাপ তৈরি করা হচ্ছে।
সৈন্য হস্তান্তর
এ দিকে সোমবার পূর্ব লাদাখে এক চীনের সেনাকে আটক করেছিল ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনা সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, মেষপালকদের সাহায্য করতে গিয়ে চীনের ওই সেনা ভুল করে এলএসি পার করে ফেলেছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে ভারতীয় সেনা। সোমবার রাতেই চীন ভারতকে জানায়, তাদের একজন সেনা অফিসার ভারতে ঢুকে পড়েছেন। মঙ্গলবার রাতে প্রোটোকল মেনে ভারতীয় সেনা ওই চীনা সেনাকে চীনের হাতে তুলে দিয়েছে। ওই সেনাকে খাবার, গরম জামা দেওয়া হয়েছে বলেও ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে। প্রোটোকল মেনে সেনা হস্তান্তর হলেও দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের অবসান হয়নি। এখনো পর্যন্ত একটি বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি।