চারদিনে পাঁচ দেশ সফরে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উজবেকিস্তানে ফলপ্রসূ আলোচনা। চীন-রাশিয়াকে আলোচনায় আহ্বান।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দুইটি দেশের দূতাবাস এখনো কাবুলে খোলা। চীন এবং রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ, দুইটি দেশই নিজেদের মতো করে তালেবানের সঙ্গে একপ্রকার রফাসূত্রে পৌঁছেছে। সে কারণেই তারা এখনো সেখানে দূতাবাস খোলা রেখেছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের জরুরি বৈঠকে এই দুই দেশকে সকলের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, চার দিনের পাঁচ দেশ সফরে সোমবার হাইকো মাস কথা বলেছেন উজবেকিস্তানের প্রশাসনের সঙ্গে। মাস জানিয়েছেন, জার্মানিতে আফগান শরণার্থীপাঠানোর বিষয়ে উজবেকিস্তান সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে।
উজবেকিস্তানের প্রতিশ্রুতি
উজবেকিস্তান জানিয়েছে, আফগান শরণার্থীদের তাদের দেশের মাধ্যমে জার্মানিতে পাঠানোর ব্যবস্থা তারা করবে। আফগানিস্তানের সঙ্গে উজবেকিস্তানের সীমান্ত আছে। সেই সীমান্ত দিয়ে কীভাবে আফগান শরণার্থীদের উজবেকিস্তানে নিয়ে আসা হবে, সে বিষয়ে অবশ্য কোনো পক্ষই কিছু জানায়নি। তবে উজবেকিস্তান জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে আফগান শরণার্থীদের তাদের দেশে জায়গা দেওয়া হবে। তারপর কাগজপত্র পরীক্ষা করে তাদের জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
২০ বছরের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষ
৯/১১-র ঠিক পরেই আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা। ২০ বছর পর কাবুল ছাড়ল মার্কিন সেনা। শেষ হলো ২০ বছরের যুদ্ধ।
ছবি: AFP/W. Kohsar
ঘটনাবহুল ২০ বছর
গত ২০ বছরে নানা ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। তালেবান, আইএস-এর সঙ্গে লাগাতার যুদ্ধ চলেছে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর। আফগান সেনাও সেই বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। শেষপর্যন্ত আফগান বাহিনীর হাত থেকে ক্ষমতা দখল করে তালেবান ফৌজ।
ছবি: Getty Images/A. Renneisen
৯/১১ এবং যুদ্ধ
২০০১ সালে অ্যামেরিকার টুইন টাওয়ারে বিধ্বংসী আক্রমণ চালায় আল কায়দা। গোটা বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় বিমান দিয়ে টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে দেওয়ার সেই দৃশ্য দেখে।
ছবি: Imago/ZUMA Press
জর্জ বুশের যুদ্ধ ঘোষণা
ওই ঘটনার পরেই যুদ্ধ ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ জুনিয়র। তিনি বলেন, বিশ্ব হয় তাদের দিকে, অথবা সন্ত্রাসবাদের দিকে। ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে প্রথম হামলা চালায় মার্কিন সেনা।
ছবি: Jim Watson/AFP /Getty Images
প্রথম তালেবান শাসন
আফগানিস্তানে তখন তালেবানের শাসন। ১৯৯৬ সালে তালেবান আফগানিস্তানে প্রথমবার ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করে, তালেবান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে আছে, এবং তালেবান তাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানায় বুশ প্রশাসন।
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausaf Newspaper
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা
৯/১১-র পরেই আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে মার্কিন সেনা। তালেবান এবং আই এস-এর সঙ্গে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়।
ছবি: AFP/Getty Images
তালেবানের পতন এবং নতুন সরকার
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর আক্রমণের সামনে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতন হয়। অ্যামেরিকার তত্ত্বাবধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় আফগানিস্তানে।
ছবি: Reuters/M. Ismail
হামিদ কারজাই প্রধানমন্ত্রী
২০০৪ সালে নির্বাচনের আয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হামিদ কারজাই। পরবর্তী নির্বাচনেও তিনিই নির্বাচিত হন। তৈরি হয় নতুন আফগান সেনাবাহিনী। অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তির সাহায্যে আফগানিস্তান শাসন করতে শুরু করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। যদিও কোনো কোনো মহলের অভিযোগ, কারজাই কার্যত অ্যামেরিকার পুতুল হিসেবেই কাজ করেছেন।
ছবি: AP
ওসামা বিন লাদেনের হত্যা
২০১১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনী হত্যা করে ওসামা বিন লাদেনকে। ২ মে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করা হয়।
ছবি: Getty Images/AFP
আশরাফ গনি প্রধানমন্ত্রী
২০১৪ সালে আফগানিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন আশরাফ গনি। সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রশাসনে রেখে নতুন আফগানিস্তান তৈরির অঙ্গীকার করেন গনি।
ছবি: Sajjad Hussain/AFP/Getty Images
ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ঐতিহাসিক চুক্তি
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে ট্রাম্প প্রশাসন। স্থির হয়, এক বছরের মধ্যে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে আফগানিস্তানের মাটি থেকে।
ছবি: U.S. Department of State/AA/picture alliance
ন্যাটোর আপত্তি
দ্রুত সেনা সরানোয় আপত্তি জানিয়েছিল ন্যাটো এবং ইউরোপের একাধিক দেশ। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই আপত্তি শুনতে চায়নি। বাইডেন ৩১ অগাস্ট ডেডলাইন স্থির করেন।
ছবি: Daniel Kubirski/dpa/picture alliance
আট দিনে দখল
অগাস্টের গোড়ায় মাত্র আটদিনের মধ্যে কার্যত পুরো আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। মার্কিন সেনার হাতে থাকে কেবলমাত্র কাবুল বিমানবন্দর।
ছবি: Zabi Karim/AP/picture alliance
উদ্ধারকাজ এবং লড়াই
গত দুই সপ্তাহে আফগানিস্তান থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশের সেনা। বহু আফগানকেও দেশ ছাড়তে সাহায্য করা হয়েছে। ৩০ অগাস্ট মধ্যরাতে শেষ মার্কিন বিমান আফগানিস্তানের জমি ছাড়ে। মাঝের দুই দিন কাবুল বিমানবন্দরে একাধিক হামলা করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন সেনাও পাল্টা ড্রোন আক্রমণ করেছে।
ছবি: 1stLt. Mark Andries/U.S. Marine Corps/Handout/REUTERS
পালানোর অপেক্ষায় বহু আফগান
অ্যামেরিকা চলে গেছে। কিন্তু এখনো দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন বহু আফগান। সমস্ত বিদেশিকেও উদ্ধার করা যায়নি।
২০ বছর ধরে চলা অ্যামেরিকার আফগান যুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রাণ গেছে এক লাখ ৭২ জন মানুষ। এর মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় চার হাজার মার্কিন কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য দেশের সেনা মারা গেছে প্রায় এগারোশ।
ছবি: Getty Images/AFP/W. Kohsar
আফগানের মৃত্যু
যুদ্ধে বহু আফগান সেনার মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৬ হাজার। ৪৭ হাজার সাধারণ আফগানের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে। তালেবান এবং আইএস যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে ৫১ হাজারের কিছু বেশি।
ছবি: Getty Images/AFP/N. Mohammad
16 ছবি1 | 16
উজবেকদের চিন্তা
উজবেক সাধারণ মানুষ অবশ্য এখন আফগান শরণার্থী নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। ডিডাব্লিউয়ের রিপোর্টারকে সেখানকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের ধারণা, দ্রুত দেশটি একটি আফগান শরণার্থী শিবিরে পরিণত হবে। কারণ, হাজার হাজার আফগান তাদের দেশের মাধ্যমে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
উজবেকিস্তান অবশ্য একটি কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের জন্য তারা কোনো আফগান শরণার্থীকে দেশে রাখবে না। উজবেকিস্তানকে কেবল ট্রানসিট হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে।
এরপর কাতার
সোমবার উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান সফর করেছেন মাস। মঙ্গলবার তার কাতারে যাওয়ার কথা। কাতারে দেশের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বললেও তালেবানের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন না। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দফতর আছে। এতদিন সেখান থেকেই তারা আলোচনা চালিয়েছে। মাস জানিয়েছেন, তালেবানের সঙ্গে কথা বলবেন জার্মান প্রতিনিধি মার্কুস পোটসেল। কাতারে মার্কুসের সঙ্গে বৈঠক করবেন মাস।
রাশিয়া এবং চীন নিয়ে মন্তব্য
অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ একত্রে বৈঠক করে আফগানিস্তান নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। জাতিসংঘে ইতিমধ্যেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সেখানে চীন এবং রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে মাস চাইছেন রাশিয়া এবং চীনও এ বিষয়ে সহযোগিতা করুক। কারণ, আফগান প্রশ্নে রাশিয়া এবং চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগ, দুইটি দেশই তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা সূত্রে পৌঁছেছে। সে কারণেই তারা এখনো আফগানিস্তানে নিজেদের দূতাবাস খুলে রেখেছে।