চীন, জাপান, অ্যামেরিকা, কোরিয়া, ব্রাজিলে করোনা ছড়াচ্ছে। তাই এবার আগে থেকেই সতর্ক কেন্দ্রীয় সরকার।
বিজ্ঞাপন
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর দেহ থেকে নেয়া নমুনা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে, কোন ধরনের ভাইরাস ভারতে সক্রিয়। ভাইরাসের রূপবদল হয়েছে কি না। নতুন প্রজাতির ভাইরাসের দেখা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব সব রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখেছেন। সেখানেই সতর্কতামূলক কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা বলেছেন। ভারতে এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব হলো, ভারতে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৪০৮ জন। কিন্তু বিশ্বে এখন ৩৫ লাখ মানুষ প্রতি সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেছেন, চীন-সহ বিভিন্ন দেশে করোনার প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় আমাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি করোনা রোগীর শরীর থেকে নেয়া নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোন প্রজাতির করোনা ভাইরাসে রোগী আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনার গ্রাসে কলকাতার ব্যান্ডপার্টি
একসময় কলকাতাবাসীর আনন্দ-অনুষ্ঠানের সঙ্গী ছিল ব্যান্ডপার্টি। কিন্তু করোনাকালে তাদের আর কেউ ডাকছে না। সংকটে শিল্পীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
একের পর এক ব্যান্ড
মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে কলেজ স্ট্রিটের মোড় থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যাবে একের পর এক ব্যান্ডপার্টির অফিস। মেহবুব ব্যান্ড, ভারত ব্যান্ড, পাঞ্জাব ব্যান্ড, মহারাজা ব্যান্ড, এরকম বিভিন্ন নামের প্রায় পঞ্চাশটা দোকান রয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কলকাতাবাসীর জীবনের অঙ্গ
একটা সময় ছিল, যখন ব্যান্ডপার্টি ছাড়া অনুষ্ঠানের কথা ভাবাই যেত না। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পাড়ার ক্লাবের শিল্ড জেতার আনন্দ, পুজোর বিসর্জন সহ যে কোনো অনুষ্ঠানেই ব্যান্ডপার্টির উপস্থিতি অনিবার্য ছিল। কলকাতার অনুষ্ঠান ও উৎসব-সংস্কৃতির সঙ্গে পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল ব্যান্ডপার্টি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ব্যান্ডপার্টির ইতিহাস
ভারত তখনো স্বাধীন হয়নি, পেটের টানে কলকাতায় এসেছিলেন বিহার ও উত্তরপ্রদেশের একদল যুবক, ভেবেছিলেন বাজনা বাজিয়ে রোজগার করবেন। এই শহরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয় তদের বাজনা। মহাত্মা গান্ধী রোডে তৈরি হতে থাকে একের পর এক ব্যান্ডপার্টির দোকান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সময় বদলের ফলে
সময় বদলেছে। বদলেছে বিনোদনের ধারণা। তৈরি হয়েছে বাংলা ব্যান্ডের দল। ডিজে সংস্কৃতি এসেছে। ইন্টারনেট, সেলফোন বদলে দিয়েছে বিনোদনের জগতটাকেই। ব্যান্ডপার্টির কদর কমেছে। এর সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের রুটিরুজিতে টান পড়েছে। তবে সব হিসাব বদলে দিয়েছে করোনা। গত দুই বছর ধরে চলতে থাকা করোনার ফলে ব্যান্ডপার্টির অফিস বন্ধ হওয়ার জোগাড়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখনো আশা নিয়ে
অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েও আশা হারাচ্ছেন না ব্যান্ডপার্টির মালিকরা। অন্যতম পুরনো ব্যান্ডপার্টি হলো মেহবুব ব্যান্ড। মাস্টার মেহবুবের নামে তৈরি। মেহবুব ব্যান্ডের শওকত আলি জানালেন, এই পেশা ছেড়ে যাওয়ার কথা তারা ভাবতে পারেন না। তাই ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়েও আশা করছেন, সুদিন আসবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অন্য পেশার সন্ধানে
এমনিতেই এই পেশায় সারাবছর কাজ থাকে না। উৎসবের মরশুম ছাড়া বাকি সময় অন্য পেশার খোঁজ করতে হয় এই শিল্পীদের। বছরের বাকি সময় কেউ রান্নার কাজ, কেউ বা ফল বিক্রি করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নহবত এখন ইতিহাস
একসময় সম্ভ্রান্ত বিয়েবাড়িতে নিয়ম করে নহবত বসানোর চল ছিল। ঢোকার মুখে উঁচু জায়গায় বসে শানাই বাজাতেন শিল্পীরা। তার সুরে মাতোয়ারা হয়ে থাকত বিয়েবাড়ি। আজ তা প্রায় উঠেই গেছে। বরকত হোসেনদের মত অনেক শানাই বাদকই আজ বড় বিপদে। তারা এখন সরকারি সাহায্য চাইছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
করোনার সময়ে
মেহবুবা ব্যান্ডের মালিক মহম্মদ আশফাক বললেন, করোনার কড়াকড়িতে ব্যান্ডপার্টির বারোটা বেজে গেছে। এখন অনুষ্ঠান বাড়িতে পঞ্চাশজনের বেশি কাউকে ডাকা যায় না। আমাদের ব্যান্ডপার্টির দলই হয় কম করে ২৫ জনের, মানুষ আমাদের নেবে, নাকি আত্মীয়-বন্ধুদের ডাকবে?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারের কাছে
সেন্ট্রাল ক্যালকাটা ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন গত ১৫জানুয়ারি সরকারের কাছে আবেদন করে চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের আবেদন, ব্যান্ডপার্টির অন্তত ১১জনের দলকে যেন অনুষ্ঠানবাড়িতে বাজানোর অনুমতি দেয়া হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আশায় বাঁচা
একসময় নিজেদের রাজ্য ছেড়ে পেটের টানে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা মানুষগুলো আজ প্রায় কর্মহীন। অন্য পেশা বা দেশের বাড়ির চাষবাসের আশায় ফিরে গেছেন অনেকে। অনেকেই পুরো বেকার। সুদিনের আশায় বেঁচে আছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সামান্য রোজগার
একদিন অনুষ্ঠানবাড়িতে বাজিয়ে দুইশ টাকা রোজগার, সঙ্গে উপরি পাওনা অনুষ্ঠানবাড়ির বকশিস। এই রোজগারটুকুও কোভিডকালে আর নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হারিয়ে যাওয়ার মুখে
তাহলে কি এই ব্যান্ডপার্টিও ইতিহাস হয়ে যাবে? সম্ভাবনা যথেষ্ট। করোনা আর কিছুদিন থাকলে একের পর এক বন্ধ হবে ব্যান্ডপার্টির অফিস। যে শিল্পীরা সুরের জাদুতে মন জয় করতেন, তারা চলে যাবেন অন্য পেশায়। অনেকে কলকাতা ছেড়েই চলে যাবেন। কঠিন সময়ের সঙ্গে যুদ্ধে তারা টিকে থাকতে পারবেন না। যদি পারেন, তাহলে কলকাতার এই সংস্কৃতিও বেঁচে থাকবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
12 ছবি1 | 12
স্বাস্থ্যসচিবের মতে, এই ব্যবস্থা নিতে পারলে নতুন প্রজাতির ভাইরাসের দেখা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। তিনি জানিয়েছেন, ভারত আগের মতো করোনাকে রুখতে পাঁচমুখি কর্মসূচি নিয়ে চলবে। করোনা পরীক্ষা করা হবে, করোনার ভাইরাস পাওয়া গেলে দেখা হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তাদেরও পরীক্ষা হবে। করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। ভ্যাকসিন চালু থাকবে এবং সবাইকে কোভিড-বিধি মানতে হবে। এখন সপ্তাহে এক হাজার দুইশজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যেহেতু প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।