গৃহযুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দেশটিতে৷ লাখো মানুষ খাদ্যাভাবে রয়েছে, দেখা দিয়েছে কলেরা, ডিপথেরিয়া এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগ৷

সানা’র ন্যাশনাল অনকোলজি সেন্টারে প্রতি মাসে অন্তত ৬০০ জন নতুন ক্যানসার রোগী ভর্তি হচ্ছেন৷ গত বছর হাসপাতালটি আন্তর্জাতিক ও সরকারি সহায়তা পেয়েছে মাত্র ১০ লাখ ডলার৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর আগে হাসপাতালটি প্রতি বছর দেড় কোটি মার্কিন ডলার সরকারি সহায়তা পেতো৷ বাজেটে একটি অংশ থাকতো অনকোলজি সেন্টারসহ পুরো দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য কেমোথেরাপি চিকিৎসা, ক্যানসারবিরোধী ওষুধ ইত্যাদি কেনার জন্য৷

ইয়েমেনের পশ্চিম উপকূল থেকে মায়ের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য হোডাইডাহ শহরের একটি ক্লিনিকে এসেছেন মোহাম্মেদ আল হোসামি৷ চিকিৎসায় সাহায্য করেছেন তাঁর গ্রামের মানুষ৷ তিনি জানালেন, ক্যানসারের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল এবং সব মানুষের পক্ষে এই চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়৷

এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক মা তাঁর সন্তানকে নিয়ে রাজধানী সানা’র জাতীয় অনকোলজি সেন্টারে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছেন৷

এই ছবিতে এক ক্যানসার আক্রান্ত শিশুকে দেখা যাচ্ছে৷ শিশুটির হাতে ইনট্রাভেনাস ড্রিপ লাগানো৷

শিশুদের জন্য হাসপাতালে খুব কম সংখ্যক ‘বেড’ রয়েছে৷ অনেক রোগীকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় চেয়ারে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে, যাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট৷

ছবিতে ন্যাশনাল অনকোলজি সেন্টারের বেডে শুয়ে আছে ক্যানসার আক্রান্ত ছোট্ট এই মেয়েটি৷

অনকোলজি সেন্টারের রেডিয়েশন থেরাপি কক্ষে একজন ক্যানসার রোগী৷

আল আমাল সেন্টার ফর ক্যানসার ট্রিটমেন্ট-এর প্রধান ইয়াসির আবদুল্লাহ নূর রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোডাইডাহ-র এ হাসপাতালটিতে ৫ হাজার ৩০০’র বেশি ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য উপকরণের অভাবে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের৷ সরকারি সহায়তা না পেলে হয়ত খুব শিগগিরই হাসপাতালটি বন্ধ করে দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি৷

এই কিশোরীর হাতে কিন্তু খেলনা বন্দুক! হোদাইদায় শিশু-কিশোররা এখন জেগে যুদ্ধ দেখে, স্বপ্নেও বোধহয় যুদ্ধই দেখে৷ প্রাণ হাতে নিয়ে যখন সবাই শহর ছেড়ে পালাচ্ছে এই কিশোরী কিন্তু খেলনা বন্দুকটি সঙ্গে নিতে ভোলেনি!

সম্প্রতি ইয়েমেনের বন্দর নগর হোদাইদায় জোরদার হামলা চালায় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট৷ গৃহহারা হয় অনেক মানুষ৷ ছবির এই মা-মেয়েও এখন ঘরছাড়া৷ হোদাইদার এক স্কুলই তাদের অস্থায় ঘর৷

শহর ছেড়ে পালাচ্ছে হোদাইদার এক গৃহহারা পরিবার৷ যাত্রাপথে গাড়িতেই এক শিশুর ঘুম৷

বাবা-মা ঘরছাড়া, তাই এই শিশুরও দিন-রাত কাটে স্কুলে৷ স্কুলই তার ক্রীড়াঙ্গন৷

কে জানে এই মা আর শিশুর ভবিষ্যতে কী আছে!

আতঙ্কে, নাকি অনাহারে কাঁদছে স্কুলে আশ্রয় পাওয়া এই শিশু?

যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে এসেছে রেড ক্রস৷ ত্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরছেন একজন৷

খেলার মাঠ আর নিরাপদ নয়৷ তাই স্কুলের ভেতরেই খেলায় মেতেছে দুই কিশোর৷

হোদাইদার এক স্কুল এখন আশ্রয়শিবির৷ সেখানে আশ্রয় পেতেও নাম,ঠিকানা লেখাতে হয়৷ তাই স্কুলের সামনে নারী-শিশুদের ভিড়৷

শহর ছাড়তে হবে৷ তাই তল্পিতল্পা নিয়ে গাড়ির সামনে অপেক্ষায় কিছু আতঙ্কিত মানুষ৷

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের এক আতঙ্কের নগরীতে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন এক মা৷ মায়ের জন্য এর চেয়ে বড় সুখ আর কী হতে পারে!