জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য লড়তে গিয়ে ইসরায়েলের বিরোধিতা করে চুক্তি ভঙ্গ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বার্লিন৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কারো বিরুদ্ধে নয়, একটি আসনের জন্য লড়ছি৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় দুই দশক আগে অনানুষ্ঠানিক আঞ্চলিক জোট পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য (ডব্লিউইওজি)-এর সদস্য হয়৷ তখন জোটের সদস্যরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যে, জাতিসংঘের অস্থায়ী যে কোনো সদস্যপদের জন্য কখনো ইসরাইলের বিরোধিতা করবে না কেউ৷
জার্মানির বিরুদ্ধে ইসরায়েলপন্থি মার্কিন অধিবাসীদের অভিযোগ, তারা অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য লড়তে গিয়ে সেই চুক্তি ভঙ্গ করছে৷ কারণ, আগামী ৮ জুন সাধারণ অধিবেশনে অস্থায়ী সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানে এ অঞ্চলের দু'টি সদস্যপদের জন্য লড়ছে জার্মানি, ইসরায়েল ও বেলজিয়াম৷
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস৷ সদস্যপদের জন্য তদবির করতে তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন৷ বুধবার সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘অতীতেও দেখা গেছে, একই পদের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিযোগিতা করছে৷’’ তিনি বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বলেন, ‘‘আমরা কারো বিরুদ্ধে তো লড়ছি না৷ আমরা নিরাপত্তা পরিষদের একটি আসনের জন্য লড়ছি৷’’
জার্মানি-ইসরায়েল: একটি বিশেষ সম্পর্ক
নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের অপমৃত্যুর জের ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসরায়েলের৷ তাই ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের চরিত্র একেবারে অনন্য৷ কিছু মানুষের জীবন জুড়েও রয়েছে এ দুটি ভূখণ্ড...
গল্পগুচ্ছ
জার্মান লেখক সারা স্ট্রিকার ইসরায়েলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছেন৷ সেখানেই লিখেছেন নিজের প্রথম উপন্যাসটি৷ আর সম্প্রতি ইসরায়েলি এবং জার্মান লেখকদের কাজ নিয়ে তৈরি অভিনব একটি গল্পগুচ্ছে একটি ছোট গল্পও লিখেছেন তিনি৷
ছবি: Win Schumacher
মানুষ, প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ
এত দীর্ঘ একটা সময় ইসরায়েলে থাকার কারণে সেখানকার মানুষ, এমনকি প্রকৃতিকেও ভালোবেসে ফেলেছেন সারা৷ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বেড়ে চলেছে সহযোগিতা৷ তাই সারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷
ছবি: Win Schumacher
রন্ধনশিল্প
২০১৩ সালে জার্মানির টম ফ্রাঞ্জ ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত রান্নার অনুষ্ঠান তথা প্রতিযোগিতা ‘মাস্টার শেফ’-এ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই ইসরায়েলে তিনি একটি অতি পরিচিত নাম৷
ভালোবাসার টানে
ইসরায়েল আর সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছিলেন টম যে, আট বছর আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন৷ এ অঘটনটা ঘটেছিল ভালোবাসার টানেই৷ প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমানে টমকে জেরুসালেমের একটি ছোট্ট সিনাগগে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করতে দেখা যায়৷
রাঁধুনি পরিবার
স্ত্রীর পরিবারেই থাকেন টম৷ তাঁরাও যে রান্নায় এক-একজন ওস্তাদ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে রান্নাঘরে দারুণ সময় কাটে টমের৷ কত কী যে শিখেছেন তিনি এখানে৷ আসলে জেরুসালেমের খাবার-দাবার নিয়ে একটি বই লিখতেই তিনি এসেছিলেন ইসরায়েলে৷
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন
নাম: রিলি উইলো৷ বয়স: ৩৪৷ স্বপ্ন: দাদির মতো মস্ত গায়িকা হওয়ার৷ রিলির দাদি একসময় বার্লিনের বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন৷ তাই রিলি ইসরায়েল ছেড়ে আজ পরবাসী৷ বহুদিন হলো বার্লিনেই ঘর বেঁধেছেন তিনি, সানন্দেই৷ যদিও নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় দাদিকে৷
বার্লিনের আড্ডা
এটা ইসরায়েল নয়, জার্মানির ছবি৷ রাজধানীর ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার একটা পাবে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন রিলি উইলো আর তাঁর স্বামী বেনেডিক্ট বিন্ডেভাল্ড৷ বার্লিনের এ অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী নয়ক্যোলন এলাকায় বহু তরুণ ইসরায়েলির বাস৷
হালকা হাসির পাল্লা
ইসরায়েল থেকে আসা রিলি উইলো আর বন্ধু শাহাগ শাপিরা একটা বিষয়ে একমত৷ আর সেটা হলো: ইহুদি বুদ্ধিমত্তা আর ইসরায়েলি ব্যঙ্গ আসলেই অতীতের কালো অধ্যায়টাকে হালকা করতে সাহায্য করেছে অনেকটাই৷
ছবি: Win Schumacher
সোজা প্রশ্ন
পেশায় সাংবাদিক শাপিরার বয়স মাত্র ২৭৷ কিন্তু আজকের জার্মান সমাজে ইহুদিদের কীভাবে দেখা হয়, সেটা জানতে তাঁর দারুণ আগ্রহ৷ তাই পথে-ঘাটে কারুর সাথে দেখা হলেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন: আচ্ছা, আপনি কি ইহুদি বিদ্বেষী?
হাসতে তো মানা নেই!
বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালটি দেখতে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই নিজের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ‘সেল্ফি’ তুলতে ভোলেন না৷ ‘‘এখানে সেল্ফি তোলা নিষেধ’’ – না, সত্যি সত্যি না৷ দর্শনার্থিদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে শাপিরা প্রায়ই এমনটা বলেন৷ আর লোকজন সব ঘাবড়ে গেলে, হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি৷
10 ছবি1 | 10
নিরাপত্তা পরিষদের দশটি অস্থায়ী সদস্যপদের মধ্যে তিনটি আফ্রিকা, দু'টি করে দক্ষিণ অ্যামেরিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও পশ্চিম ইউরোপ অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ৷ পূর্ব ইউরোপ থেকে একটি দেশ নির্বাচিত হয়৷ রাষ্ট্রগুলো দুই বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত হয়৷মাস বলেন, জার্মানি আট বছর পরপর সদস্যপদের জন্য চেষ্টা করে৷ ‘‘তাই একে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা উচিত৷’’
নির্বাচিত হলে, এই নিয়ে ষষ্ঠবার এই দায়িত্ব পালন করবে জার্মানি৷ নিউইয়র্ক পোস্টের এক উপসম্পদকীয়তে সম্প্রতি জার্মানিকে ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ ক্ষমতার খেলা’ দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে৷
বার্লিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত রিচার্ড গ্রেনেলও যোগ দিয়েছেন এই কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে৷ সম্প্রতি টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘ইউরোপ যেন কথার বরখেলাপ না করে৷’’
কাউন্সিলের পদ পেতে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হয়৷ এর আগে ২০১১-১২ মেয়াদে সবশেষ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছিল জার্মানি৷ পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য হলো, ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে, জাতিসংঘে সর্বোচ্চ আর্থিক সহায়তা প্রদানকারীদের অন্যতম রাষ্ট্র৷ জার্মানি জাতিসংঘের হয়ে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত বলে জানান তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন জাতিসংঘকে আগের চেয়ে আরো বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে৷’’