ক্ষমতায় আসার আগে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রবল সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প৷ এবার তাঁরই প্রশাসনকে স্বীকার করতে হলো যে, ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চলছে৷ তবে হাল ছাড়তে এখনো নারাজ তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচির বিপদ এড়াতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল৷ লক্ষ্য ছিল, কমপক্ষে ১৫ বছরের মধ্যে ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে৷ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন৷ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই এই বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন৷ এই চুক্তিকে অ্যামেরিকার জন্য বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তিনি৷
এমনকি তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইরানের গঠনমূলক ভূমিকাও মানতে নারাজ তিনি৷ সে দেশের রাষ্ট্রীয় মদতে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো হচ্ছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে চলেছে৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর অ্যামেরিকা ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷
চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার শর্ত পূরণ করছে কিনা, তা যাচাই করার বিধান রয়েছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতি ৯০ দিন অন্তর কংগ্রেসকে সে বিষয়ে জানাতে হয়৷ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, ইরান সত্যি এই চুক্তি মান্য করে চলেছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এই মর্মে একটি চিঠি লিখেছেন৷
অর্থাৎ পরমাণু চুক্তি সত্যি কাজ করছে, এ বিষয়টি ট্রাম্প প্রশাসনকে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ইরানের উপর ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা৷ কিন্তু সেই পথে যেতেই চাইছেন না ট্রাম্প৷
টিলারসন লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃত্বে গোটা প্রক্রিয়া নতুন করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ অ্যামেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত কিনা, তা বিশ্লেষণ করা হবে৷ এ ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসকেও শামিল করা হবে৷ এর জন্য কতটা সময় ধার্য করা হয়েছে, টিলারসন সে বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেননি৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷