সুইজারল্যান্ডের চুটি হেফটলি স্টিকার অ্যালবাম: ইউরোপীয় ফুটবলের তারকাদের ছবি দেওয়া স্টিকার এই হেফটলি বা অ্যালবামে লাগানো যায়৷ স্টিকারের ছবিগুলো কিন্তু ফটো বা ডিজিটাল নয়, বিভিন্ন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি৷
বিজ্ঞাপন
শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি দিয়ে অ্যালবাম
04:19
আঁকা হচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ছবি৷ কেভিন সুসেট থাকেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে৷ রোনাল্ডোর ছবিটি আঁকছেন ‘চুটি হেফটলি' নামের একটি স্টিকার অ্যালবামের জন্য৷
এমনকি শিল্পীর আত্মপ্রতিকৃতিও স্টিকার হিসেবে পাওয়া যায়৷ ছবি-আঁকিয়ে কেভিন সুসেট বলেন, ‘‘রোনাল্ডোর ছবি আঁকাটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল কেননা সকলেই তাকে চেনে – সবাই তাকে পছন্দ করে কিনা, সেটা আরেক কথা৷ দ্বন্দ্বটা চিরকালই পর্তুগিজ দলে ছিল, তাদের আকর্ষণও বেড়েছে ঐ কারণে৷''
আগামী ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে, এমন প্রত্যেকটি দলের সদস্যদের ছবি আঁকার ভার দেওয়া হয়েছে আলাদা একজন শিল্পীকে৷ চুটি হেফটলি স্টিকার অ্যালবামের ছবি আঁকার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য কেভিন সুসেট-কে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়েছে ও জিনেদিন জিদানের ছবি আঁকতে হয়েছে৷ সারা ইউরোপ থেকে প্রায় ২০০ শিল্পী ছবি পাঠিয়েছিলেন – জুরি তাদের মধ্যে সেরা ২৪ জনকে বেছে নেন৷
ছবি রং করলে মানসিক চাপ কমে?
শিশুদের শান্ত রাখার জন্য রং পেনসিল আর ছবির বই দিয়ে ছবি আঁকতে বসিয়ে দেয় বড়রা৷ ছবি রং করে মনকে শান্ত করার এই পদ্ধতি কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ কীভাবে? জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
রঙিন অবসর
আজকাল কিন্তু অনেক বড়রাও বিভিন্ন রঙের পেন্সিল দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবির চারিদিকে রং করেন মূলত মানসিক চাপ কমানোর জন্য৷ অন্তত গত কয়েক বছরে বড়দের ছবি রং করার বই বিক্রি সেই কথাই বলে৷ কারণ এত বেশি ছবির বই বিক্রি হয়েছে যে এখন আর সেসব বই ‘বেস্টসেলার লিস্ট’ থেকে বাদ যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
পড়ার চেয়ে ভালো
যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে বই অর্ডার দেওয়ার লিস্টে প্রায়ই দেখা যায় এক নম্বরেই রয়েছে বড়দের ছবি রং করার বই৷ আর এই ট্রেন্ড কিন্তু এখন জার্মানিতেও এসেছে৷ এমনকি অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট অ্যামাজন-এর অর্ডারের শীর্ষেও দশটি বইয়ের তালিকায় রয়েছে দু’টি ছবির বইয়ের নাম৷
ছবি: Getty Images/B. Pruchnie
প্রতিটি ছবির বইয়ের সাথেই রং পেন্সিল
অ্যামাজন থেকে ছবি রং করার বইয়ের অর্ডার দিলে তার সাথে রং পেন্সিলও থাকে৷ বলা বাহুল্য, বিষয়টি পেন্সিল উৎপাদনকারী কোম্পানির জন্য অত্যন্ত আনন্দের৷ আর রং পেন্সিলের চাহিদা এখন এত বেড়ে গেছে যে কোনো কোনো পেন্সিল কোম্পানি কর্মীদের কাজের শিফট বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T.Koene
মেডিটেশনের নতুন রূপ
আপনার কি দীর্ঘদিন ধরে ঘাড়, পিঠ ও মাথায় ব্যথা হচ্ছে? তাহলে ছবির বই কিনে রং করতে শুরু করে দিন৷ দেখবেন আস্তে আস্তে স্ট্রেসের কারণে হওয়া এ সব ব্যথা থেকে আপনি মুক্তি পাচ্ছেন৷ ছবি রং করে মানসিক চাপ কমার এই সাফল্য দেখে থেরাপিস্টরাো নাকি বিস্মিত!
ছবি: APTN
সামাজিক ছবি পেইন্টিং
যাঁরা একাকী, নিঃসঙ্গ তাঁরা সাধারণত নিজেদের ভাবনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্যদের সাথে শেয়ার করেন৷ তাই টুইটারে #AdultColouring লিখলেই পাবেন অনেক গুণী শিল্পীর রং করা ভালো কিছু ছবি৷ শুধু তাই নয়, মাঝে মধ্যে তাঁরা রং করার জন্য ছবির বইও নাকি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T.Koene
5 ছবি1 | 5
কেভিন সুসেট রং-পেন্সিল দিয়ে একটি ছবি এঁকেছেন৷ প্রতিটি ছবির জন্য তাঁর আধদিন সময় লাগে৷ কেভিন বললেন, ‘‘আজকাল বহু ছবি আঁকা হয় কম্পিউটারে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে৷ আমার এখনও হাতে আঁকতেই ভালো লাগে, পেন্সিল হাতে নিয়ে৷ তার পিছনে যে নন্দনতত্ত্ব আছে, সেটা ভালো লাগে৷''
চুটি হেফটলি-র প্রতিষ্ঠাতা সিলভান গ্লানৎসমান, ‘‘চুটেন হচ্ছে একটি সুইস-জার্মান শব্দ, যার মানে হলো ফুটবল খেলা৷ এসেছে ইংরেজি ‘টু শুট' কথাটা থেকে, মানে বল কিক করা৷ ইংল্যান্ড থেকে ফুটবল খেলাটা যখন সুইজারল্যান্ডে আসে, তখন ঐ টু শুট কথাটা জার্মান হয়ে গিয়ে দাঁড়ায় চুটেন-এ৷''
প্রথম চুটি হেফটলি স্টিকার অ্যালবামটি বেরোয় ২০০৮ সালে – প্রথমে শুধু বন্ধুবান্ধব আর পৃষ্ঠপোষকদের জন্য, যারা সকলেই লুসার্ন শহরের বাসিন্দা ছিলেন৷ খুব বেশি ছাপা হতো না৷ প্যাকেটগুলো হাতেই তৈরি করা হতো৷ গ্লানৎসমান বলেন, ‘‘প্রতিটি স্টিকারের শ'পাঁচেক কপি ছাপা হতো৷ তারপর সেগুলো খামে পুরে পাঠানো দরকার৷ আমরা খাম কিনে, বাড়িতে বসেই খামে দশটি নানা ধরনের স্টিকার পুরে, ক্রেতাদের কাছে পাঠাতে শুরু করলাম৷ রাতের পর রাত জেগে খামে স্টিকার পুরে পাঠিয়েছি আমরা৷''
ফ্যান মানে ফ্যানাটিক!
রং মেখে, সং সেজে, ফুটবল ফ্যানরা যত না ইউরো ২০১৬ দেখতে যান, তার চেয়ে বেশি যান নিজেদের সাজ দেখাতে৷
আলবেনিয়ার ফ্যানরা নাচের ভঙ্গিতে দু’হাত মুড়ে স্বদেশের পতাকার ‘ডাবল ইগল’ বা দুমুখো বাজপাখির নকল করতে পারেন৷ অনেকে আবার নিজের মুখের উপরই ডাবল ইগল এঁকে বসে থাকেন!
ছবি: Getty Images/C. Brunskill
ফরাসি মোরগ
ফ্রান্সের ‘একিপ ত্রিকলর’ বা তেরঙ্গা দলের প্রতীক হলো ঝুঁটিওয়ালা মোরগ৷ বাঁদিকের ফ্যানটি যে কেন মাথার ওপর এক ডালমেশিয়ান কুকুর পরে আছেন, তা তিনিই জানেন৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
আলুভাজার দেশ বেলজিয়াম
বেলজিয়ামেই ‘পম ফ্রিৎ’ বা ফিংগার চিপস আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে শোনা যায়৷ বেলজিয়ামের এই মহিলা ফ্যান সেটিকেই নিজের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বানিয়ে নিয়েছেন বলে মনে হতে পারে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
আইসল্যান্ডের ভাইকিং যোদ্ধারা...
...যেন আবার ফিরে এসেছেন ইউরো ২০১৬-র টানে৷ মোট ত্রিশ হাজার আইসল্যান্ডবাসী ফ্রান্সে এসেছেন দলকে সাপোর্ট করতে – যা কিনা আইসল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/M. Steele
ব্লোয়িং এ কিস
ক্রোয়েশিয়ান ফ্যানরা শুধু বাজি ফাটান না, দরকার হলে চুম্বন ছুঁড়ে দেন৷ পোশাকে কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ফ্ল্যাগের লাল-সাদা থাকা চাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Allaman
রোমক সৈন্য
ইটালি থেকে এসেছেন জুলিয়াস সিজারের ভায়রাভাই, মানে তাঁর সৈন্যরা৷ ইটালির ফুটবলাররাও এবার পোড় খাওয়া রোমক লেজিওনারিদের মতোই তাঁদের অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Dal Zennaro
পিপি লংস্টকিং-এর সর্বাধুনিক সংস্করণ
এক মাথার লালচুলো বিনুনিটি ছাড়া অবশ্য আর কিছুই মেলে না৷ সুইডেনের অমর শিশুসাহিত্যিক অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন তাঁর ন’বছর বয়সের মেয়ের জন্যে পিপি লংস্টকিং-এর কাহিনিগুলি রচনা করেন৷ দাড়িগোঁফওয়ালা ফুটবল ফ্যানদের মাথায় পিপি-র পরচুলা ফুটবলের না হোক, নারীত্বের একটা বড় জয় বৈকি৷
লুসার্নের এই বইয়ের দোকানটি থেকে প্রথম স্টিকারগুলি বিক্রি করা হতো৷ দোকানের মালিক সিলভিও কোলার নিজেই গত আট বছর ধরে স্টিকার জমাচ্ছেন – তিনি নিজেই কলেক্টর৷ চুটি বিল্ডলি – মানে ফুটবলারদের ছবি কিনতে কারা আগ্রহী, সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন৷ দশটি স্টিকারের দাম পড়ে দেড় ইউরো৷ বই-এর দোকানের মালিক সিলভিও কোলার বলেন, ‘‘যারা ফুটবলের অন্যান্য সব সুভেনির কেনেন, অথবা যারা সাধারণ স্টিকার অ্যালবামের ভক্ত, তাদের থেকে চুটি হেফটলি-র খদ্দেররা আলাদা৷ এমনকি তাদের সবাই যে ফুটবল ফ্যান, এমন নয়৷ তারা হাইপে কান না দিয়ে, কোনো বিকল্প খোঁজেন৷''
আট বছর আগে লুসার্নের ভাল্ডস্টেটার লেকের পাশে চুটি হেফটলি-র জন্ম৷ এ বছর চল্লিশ লাখ স্টিকার ছাপা হয়েছে৷ বিক্রির টাকার একটি অংশ যায় ‘ট্যার দেজ অম' দাতব্য প্রতিষ্ঠানের শিশুকল্যাণ প্রকল্পে৷ আরেকটি অংশ যায় চারটি দেশের অঙ্কণশিল্পীদের পারিশ্রমিক হিসেবে৷