যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদিত একটি সিরীয় জাহাজ উত্তর লেবাননের ত্রিপোলি বন্দরে নোঙর ফেলেছে৷ অনেক বার্লি এবং গম রয়েছে জাহাজটিতে৷ বৈরুতে ইউক্রেনীয় দূতাবাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের গুদাম থেকে রাশিয়া এসব লুট করে এনেছে৷
বিজ্ঞাপন
শিপিং ডেটা ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিক জানিয়েছে, বুধবার ত্রিপোলিতে নোঙর ফেলে লাওডিসিয়া নামের এই জাহাজটি৷
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ইউক্রেনীয় দূতাবাস জানিয়েছে, জাহাজটি ক্রিমিয়া বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছে এটিতে আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল বন্ধ৷ জাহাজে পাঁচ হাজার টন বার্লি এবং পাঁচ হাজার টন ময়দা রয়েছে৷ আমাদের সন্দেহ, ইউক্রেনের গুদাম থেকে এগুলি নেয়া হয়েছিল৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রথম চুরি করা শস্য ও আটার চালান লেবাননে পৌঁছেছে৷ বৈরুতে রুশ দূতাবাস বলেছে, সিরিয়ার জাহাজ বা বেসরকারি কোম্পানিচালিত পণ্যবাহী জাহাজ লেবাননে পৌঁছানো নিয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷
কোম্পানির কর্মকর্তা জানান, জাহাজ থেকে জিনিস নামানো হয়নি৷ লেবাননের শুল্ক বিভাগ এখনো আমদানি সংক্রান্ত কাগজ দেয়নি৷ইউক্রেনের কাছ থেকে রাশিয়া এই বিপুল পরিমাণ বার্লি চুরি করেছে,এ অভিযোগ পাওয়ার পর সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ যদিও শুল্কবিভাগ রয়টার্সকে নথি দেখাতে অস্বীকার করেছে৷
শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং বন্দরের সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, চুরির অভিযোগের কারণে বৃহস্পতিবার জাহাজটি থেকে পণ্য নামানো হয়নি৷ শুক্রবার পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি লেবাননের শুল্ক বিভাগ৷
কোম্পানির কর্মকর্তা জানান, জাহাজটিতে প্রাথমিকভাবে প্রায় আট হাজার টন ময়দা এবং এক হাজার ৭০০ টন বার্লি ছিল৷
সিরিয়ার যাওয়ার কথা ছিল জাহাজটির৷ কিন্তু কোম্পানি পাঁচ হাজার টন ময়দা লেবাননে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুছে লেবানন৷ রুটির ঘাটতিও রয়েছে৷
বন্দরের এক কর্মী বলেন, জাহাজটির বাকি পণ্য সিরিয়ায় নামানোর কথা ছিল৷ লেবাননে প্রতি টন আটা ৫৯ হাজার থেকে ৬১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ সিরিয়ায় এক টন আটার দাম প্রায় ৫৬ হাজার টাকা৷ লেবাননের বেকারিগুলিতে এই সপ্তাহে মারাত্মক ভিড় দেখা গেছে৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, লেবাননের অর্ধেক মানুষের কোনো খাদ্য নিরাপত্তা নেই৷
লেবানন বেশিরভাগ গম আমদানি করত ইউক্রেন থেকে কিন্তু রুশ আগ্রাসনের ফলে ওই চালানগুলো ব্যাহত হয়েছে৷
কৃষ্ণসাগরের মূল বন্দরগুলিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধই রয়েছে বলা চলে ৷ ইউক্রেনের দূতাবাস এবং লেবাননের মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জানিয়েছেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুনভাবে লেবাননে গম রপ্তানি শুরু করেছে ইউক্রেন৷
আরকেসি/এসিবি (রয়টার্স)
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে পথের কাঁটা যারা
রুশ বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে রয়েছেন ইউক্রেনের এই যোদ্ধারা৷ সম্ভাব্য পরিণতি হয়ত মৃত্যু–তা জেনেও শত্রুশিবিরকে রুখতে সবসময় প্রস্তুত তারা৷ বিশেষ এই ব্যাটেলিয়নের কথা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
স্নায়ুর জোর
কার্পেথিয়ান জিশ নামে এই ব্যাটেলিয়নের ফিল্ড কমান্ডার ডজভিন বলেন, ‘‘যাদের মন শক্ত, এখন তারাই যুদ্ধ করতে পারবেন৷ কঠিন এবং ভীতিকর এই যুদ্ধা’’ যুদ্ধক্ষেত্রে তার নাম ডজভিন অর্থাৎ এটি হলো ‘নম দে গেররে’৷ নিরাপত্তার কারণে নিজের আসল নাম গোপন রেখেছেন তিনি৷ তার মতো সব যোদ্ধাই জানেন কখনো না কখনো বিধ্বংসী সামরিক ট্যাঙ্কের মুখোমুখি হতে পারেন তারা৷ সম্প্রতি প্রায় অক্ষত ট্যাঙ্ক ‘পাকড়াও’ করা হয়েছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
যীশুর ছবির সামনে
পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি রুখতে কার্পেথিয়ান জিশ সবসময় প্রস্তুত৷ রুশ সেনা মোকাবিলায় কিয়েভের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল ইউক্রেনীয় এবং বিদেশি নাগরিকদের এই ইউনিট৷ দেখা যাচ্ছে, যীশু খ্রিস্টের একটি ছবির সামনে হ্যান্ড গ্রেনেড রেখে দিয়েছেন তারা৷ তাদের চিন্তা রুশ ড্রোনগুলিকে নিয়ে৷ সেগুলিকে ‘কালো মেঘ’ বলছেন এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখা
এই যোদ্ধারা বলছেন, তারা ইউক্রেনের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এ এক ভয়ঙ্কর প্রতিশ্রুতি৷ এতে তারা সবাই একসঙ্গে যুক্ত৷ এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘গতকাল ভোররাতে একটা, দুইটা এবং চারটায় গোলাবর্ষণ করছিল ওরা, যাতে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়৷ তবে আমাদের ইতিবাচক থাকতেই হবে৷’’ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পেরেছেন৷ ফলে সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন তারা, পাবেন সেনা ভাতাও৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
অবকাশ কোথায়?
রুশিন নামের এক যোদ্ধা (নিরাপত্তার কারণে আসল নাম প্রকাশ গোপন রাখা হয়েছে) কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি সোফায় বসে রয়েছেন৷ কিন্তু অবসর মোটেও নেই তাদের৷এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে থাকার সম্ভাব্য পরিণতি আমরা সকলেই জানি এবং আমরা সবাই এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে চলেছি৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
মর্টার দিয়ে আক্রমণ
কার্পেথিয়ান ব্যাটেলিয়নের যোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছেন মর্টার দিয়ে৷ আলোকচিত্রীর ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাহায্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন অসংখ্য ইউক্রেনীয় এমনকি অনেক বিদেশি সহযোগীও৷ লিও নামের বছর তেত্রিশের এক তরুণবলেন, ‘‘আমি নাৎসি নই, আমি জাতীয়তাবাদী৷ রাশিয়ান ছাড়া সব জাতীয়তার, সব বর্ণের মানুষকে আমি সম্মান করি৷ রাশিয়ানরা শত্রু৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
টার্গেট পুটিনের ছবি
নিজেদের শারীরিক ক্ষমতায় যাতে কোনোভাবেই মরচে না ধরে, তার জন্য শারীরিক কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন যোগ দেয়া সদস্যরা৷ প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে তারা প্রশিক্ষণ নেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের ছবি সামনে রেখে সেটিকে টার্গেট করে অনুশীলন করছেন যোদ্ধারা এমন ছবিও দেখা গিয়েছে৷ ডেনিস পোলিশচুক নামে এক যোদ্ধা বলেন, ‘‘ যুদ্ধের সময় তিনি কী করেছিলেন- সন্তানরা জানতে চাইলে তিনি বলতে পারবেন যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন৷’’
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা
কার্পেথিয়ান জিশ ব্যাটেলিয়নের চিকিৎসক এবং সদস্য দেখে নিচ্ছেন ঘাঁটিতে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে কি না৷ ছবিতে ধরা পড়েছে এই দৃশ্য৷ কনর নামে এক ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক এবং ফ্রন্টলাইনে কর্মরত সাবেক সেনা চিকিৎসক বলেন, ‘‘যত বেশি সময় যুদ্ধ চলবে, এটি ততই ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে৷’’ আহত নারী, শিশু এবং যোদ্ধাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা পেতে ব্যর্থ হওয়ার ছবি দেখে ব্রিটেন থেকে ইউক্রেনের হয়ে লড়তে এসেছেন তিনি৷