নিজের ইচ্ছামতো চুল বড় করতে চেয়েছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা৷ কিন্তু বাধ সাধে সামরিক কর্তৃপক্ষ৷ সেনা কর্মকর্তাও কম যান না, রীতিমতো আদালতে মামলা করে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
আদালত তার নির্দেশনায় জানিয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের চুলে অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট ছাঁট থাকবে৷ গোথিক সেনাদেরও সেই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে৷ তবে আদালত চুলের ছাঁটের বিষয়ে কঠিন নিয়ম নিয়ে সেনা কর্তৃ্পক্ষকেও বিবেচনার ও নতুন করে ভাবার পরামর্শ দিয়েছে৷
সেই গোথিক সেনা কর্মকর্তা আদালতে বলেন, অতীত ঘাটলেই দেখা যায় যে, প্রাচীন যোদ্ধাদের লম্বা চুল ছিল৷ সেই লম্বা চুল তাঁদের কোনো অসুবিধা করেছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ নেই৷ ৫১ বছর বয়সি সেই সেনা কর্মকর্তা আরো দাবি করেন, এখনকার নিয়মে যদি একজন নারী-সেনা চুল লম্বা রাখতে পারেন, তবে কেন পুরুষ সেনা পারবে না?
রূপচর্চা নিয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতে!
চুল বেশি ছোট করে ফেলায় বা চুলের রং কিংবা মেকআপ পছন্দ না হওয়ার ঘটনা তো নিয়মিতই ঘটছে, তাই না? তাই বলে বিউটিশিয়ানদের বিরুদ্ধে মামলা! হ্যাঁ, জার্মানিতে সম্প্রতি আরো কিছু অবাক করা ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/TopFoto
পারমানেন্ট মেকআপ নিয়ে বিপত্তি
জার্মানির এক নারীর নারী পারমানেন্ট আইলাইনার লাগানোর ছয় বছর পর চোখের আশেপাশে ছড়িয়ে যায়৷ বিউটিশিয়ানকে দু’বার ঠিক করার সুযোগ দেওয়ার পরও তা ঠিক হয়নি৷ শেষে সেই নারী মিউনিখ শহরের জেলা আদালতে বিউটিশিয়ানের বিরুদ্ধেই মামলা করে দেন৷ মামলার রায়ে বিউটিশিয়ানকে ২.৫০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে৷ তাছাড়াও আগামীতে আই লাইনারের কারণে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আবার সাহায্য করতে হবে৷
ছবি: Fotolia
ক্ষতিপূরণ ৮০০০ ইউরো!
জার্মানির হাম শহরের এক নারী ‘গজ দাঁত’ লাগিয়ে দাঁতের সৌন্দর্য বাড়াতে ডেন্টিস্টের কাছে যান৷ লাগানো শুরু করার সাথে সাথেই তাঁর দাঁত ও মাড়িতে ক্রনিক ইনফেকশন হওয়ায় ওই নারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ চিকিৎসা শুরুর আগে এই ঝুঁকির কথা না জানানোয় রোগীকে ৮০০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ডাক্তারকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache
চুল বেশি ছোট করে ফেলেছে!
এক নারী একটি ছবি সঙ্গে নিয়ে চুল কাটাতে গেছেন৷ ঠিক ছবির মতো চুল কাটানো চাই তাঁর৷ কাটার পর দেখা গেল চুল ছবির চেয়ে অনেক ছোট! পার্লারকর্মী গ্রাহকের দুঃখ ঘোচাতে একটি এক্সটেনশন চুল দিলেন৷ সেই চুল ব্যবহারের পর মাথা ব্যথা শুরু হলো৷ ফলে গ্রাহক পুলিশে অভিযোগ করেন৷ ঘটনাটি গত ডিসেম্বর মাসে জার্মানির ভিটেনব্যার্গে ঘটেছে৷
ছবি: DW/A. Dimitrievska
হায়রে বিকিনি!
লাইটট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিকিনি এবং গোপনাঙ্গের চুল তোলার জন্য মোট ১২টি সিটিংয়ের প্রয়োজন হয়৷ তবে এক নারীর ক্ষেত্রে চতুর্থবার সিটিংয়ের সাথে সাথেই তাঁর ত্বকের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে স্থায়ীভাবে দাগ বসে যায়৷ সেই নারীর পিগমেন্ট সমস্যার কথা বিউটিশিয়ান বোঝার পরেও চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন৷ এ কারণে ৪,০০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাঁকে৷ এই ঘটনাটি ঘটেছে জার্মনির ভুপারটাল শহরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imagechina/Xiao Yu
লাল চুলের কারণে চুক্তি বাতিল!
এক মডেল তরুণী তাঁর চুলে বাদামী রংয়ে সোনালী আভা চেয়েছিলেন৷ রং করার পর তরুণীটি একেবারেই অবাক, ‘‘একি, চুল যে পুরো লাল! ’’আরো দু’বার চেষ্টা করেও চুলের লাল রং ওঠানো সম্ভব হয়নি৷ শুধু কি তাই, চুলের কারণে তুরুণীটি তাঁর আন্তর্জাতিক মডেলিংয়ের চুক্তিও হারিয়েছে৷ কোলনের জেলা আদালতের রায়– মেয়েটিকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ তবে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক এখনো নির্ধারণ করা হয়নি৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
তিনি এই মুহূর্তে বনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত৷ বন শহরের আদালতেই লম্বা চুল রাখার অনুমতি চেয়ে মামলা করেছিলেন তিনি৷ তবে বৃহস্পতিবার আদালতের রায় তাঁর বিরুদ্ধে যায়৷ আদালত জানায়, সামরিক বাহিনীতে চুলকাটা বিষয়ক যে বিধান রয়েছে, তার পেছনে পর্যাপ্ত আইনগত ভিত্তি পরিলক্ষিত হয়নি ঠিকই, তবে নতুন নিয়ম না আসা পর্যন্ত এই বিধানই বহাল থাকবে৷
উল্লেখ্য জার্মান সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী, একজন সেনা কর্মকর্তার চুল তাঁর চোখ ও কান স্পর্শ করতে পারবে না৷ এবং পেছন থেকে শার্টের কলার স্পর্শ করতে পারবে না৷ নারীদের ক্ষেত্রে চুল ছোট করার বিধান না থাকলেও কখনোই চুল খোলা থাকতে পারবে না এবং চুল সব সময রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধা থাকতে হবে৷
আদালত অবশ্য এ-ও উল্লেখ করে, একই পেশায় নারী-পুরুষের সম অধিকারের যে বিধান আছে তাতে পোশাক ও সজ্জা ভিন্ন হলে তা নিয়ম ভঙ্গেরই সমান৷ এক্ষেত্রে আরো যৌক্তিক আইনগত ভিত্তি প্রয়োজন ছিল৷
এফএ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
২০১৭ সালের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মান সেনাবাহিনীর যত কেলেঙ্কারি
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে, ২০১৭ সাল ভয়ঙ্কর, বিভৎস, ভয়াবহ এবং খারাপ বছর৷ নিজের সেনাবাহিনীকে সমর্থন না করে বরং তাদের কেলেঙ্কারি তুলে ধরে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি৷ জেনে নিন জার্মান সেনাবাহিনীর কেলেঙ্কারির কথা৷
ছবি: picture alliance/akg-images
এক ভুয়া শরণার্থী
সিরীয় শরণার্থী সেজে এক জার্মান সেনা কর্মকর্তা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ সমান্তরাল এক দ্বিতীয় জীবন শুরু করেছিলেন ফ্রাংকো৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত হন তিনি৷ তার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের উপর হামলার দোষ চাপানো৷ ২০১৪ সাল থেকেই ফ্রাংকো’র ডানপন্থি আচরণের কথা জানতেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা৷ এাই ফ্রাংকো ধরা পড়ার থেকে জার্মান সেনাবাহিনিকে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
বাড রাইশেনহাল পর্বতে রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানি
ডানপন্থি সন্ত্রাসী আচরণের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য সেনাবাহিনী বর্তমানে ২৭৫ টি মামলার তদন্ত করছে৷ চলতি বছরের মার্চে জনগণ একজন ল্যান্স করপোরালের কথা জানতে পারেন, যিনি কয়েক মাস ধরে বাভেরিয়া পর্বতের রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নীপিড়ন করা হয়েছে৷ এ ঘটনার জন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
নারীদের পোল ড্যান্সে বাধ্য করা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবচেয়ে বড় যে কেলেঙ্কারির কথা বলেছেন তাহলো, ফুলেনডর্ফে স্টাওফের সেনাঘাঁটির ভয়াবহ ঘটনা৷ জানুয়ারিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নগ্ন করা ও যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ করতে বাধ্য করেছিলেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সেগুলো ভিডিও করা হয়েছিল৷ সদ্য নিয়োগ পাওয়া নারীদের ‘এনট্র্যান্স পরীক্ষা’র অংশ হিসেবে পোল ড্যান্সে বাধ্য করা হয়েছিল৷ একারণে সেনাবাহিনীর শীর্ষ প্রশিক্ষক কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Warnack
ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনার তদন্ত চলছে
জার্মান সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি কমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সাল জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই ভালো বছর ছিল না৷ ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ বা ‘জার্মানির মুক্ত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক চেতনার লঙ্ঘন’ এর মোট ৬০টি অভিযোগের ঘটনা পাওয়া গেছে৷ এমনকি সেনারা নিজেদের নাৎসি চেতনা নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে, নাৎসি সংগীত শোনে ও নাৎসি স্যালুটও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
জাহাজে মৃত্যু
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালের একটি ঘটনা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তা হলো, গর্ক ফক-এ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় ২৫ বছরের এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা৷ প্রশিক্ষণের সময় ঐ নারী জাহাজের পাল থেকে নীচে পড়ে মারা যান৷ ফলে অন্যান্য ক্যাডেটরা পালে উঠতে আর রাজি হননি৷ পরে ঐ প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rehder
জার্মান সেনাবাহিনীর জন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি সেনাবাহিনী রাখার পক্ষে ছিল না৷ পশ্চিম জার্মানিতে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে৷ পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্ব জামানির সেনাবাহিনী থেকে ২০ হাজার সদস্য নেয় কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে যখন জার্মান সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংঘাতে (কসোভো যুদ্ধ) জড়িয়ে পড়ে, তখন এতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়৷ এর আগ পর্যন্ত কেবল বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল৷
ছবি: picture alliance/akg-images
বাধ্যতামূলক সেবা নয়
বর্তমানে জার্মান সেনাবাহিনীতে সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০৷ ২০১৭ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর মোট সদস্যের ১১.৪ শতাংশ নারী৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল৷ এই মেয়াদকাল ছিল ৯ থেকে ১৮ মাস৷ বর্তমানে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ তবে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে এই আবেদনে তাদের সাড়া দেয়াটা সত্যিই কঠিন৷