1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগুনে পোড়া ২০ হাজার টাকার জীবন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এক বছর আগে চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুন কেড়ে নিয়েছিল ৭১ জনের জীবন৷ সেই জীবনগুলোর বিনিময়ে তাদের অনেকের পরিবার পেয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ৷

ছবি: picture-alliance/Xinhua/S. Reza

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র অবশ্য বলেছেন, ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে৷

কিন্তু অবৈধ কেমিক্যাল কারখানার জন্য দায়ীরা সবাই এখনো আইনের আওতায় আসেনি৷ সরেনি কেমিক্যাল গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানা৷ আগুনের সূত্রপাত যে ভবন থেকে, সেই ওয়াহেদ ম্যানশনে এখনো আগুনের ভয়াবহতার চিহ্ন থাকলেও বাকি ভবনগুলো মেরামত করা হয়েছে৷ জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে এসেছে স্বাভাবিক৷ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আবারো একইভাবে আগুন আশঙ্কা রয়েছে৷

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি৷ এক বছরে দেয়া হয়নি ময়না তদন্ত প্রতিবেদন৷ এ পর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ ৯ বার পিছিয়েছে৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে৷

গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত৷ ওই আগুনে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশনসহ ৫টি ভবন পুরোপুরি ভস্মিভূত হয়৷ আর আগুনে ৭১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন অনেকে৷

কেমিক্যাল গোডাউন আবারো চালু হয়েছে, তবে কিছুটা গোপনে: আহসান উল্লাহ

This browser does not support the audio element.

আগুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ‘‘ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ তাদের চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দাহ্য পদার্থ রাখতেন৷ মানুষের জীবনের ঝুঁকি জেনেও অবৈধভাবে রাসায়নিকের গুদাম করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বাসা ভাড়া দেন৷ আর ওই দাহ্য পদার্থ থেকেই আগুন লাগে৷'' যদিও প্রথমে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছিলো যে, রাস্তায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লাগে৷ বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিষ্ফোরণের কাহিনীও ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল৷

মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দুই ভাই হাসান ও সোহেল গ্রেপ্তার হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে তারা জামিন পান৷ পুলিশ বলছে, গোডাউনের অন্য মালিকদের ঠিকানা নিশ্চিত হতে না পারায় তাদের এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি৷

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্লাহ ( ৪৫) চুড়িহাট্টা এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানার গোডাউনে কাজ করতেন৷ ওই দিন আগুনে তিনি নিহত হন৷ তার বড় ছেলে আহসান উল্লাহ এখন চকবাজারে একটি প্লাস্টিকের দোকানে কাজ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাবার লাশ আনার সময় মর্গে আমাদের ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়৷ পরে প্লাস্টিক কারখানার মালিক সমিতি ৫০ হাজার টাকা দেয়৷ আর আমাদের নোয়াখালীর এমপি দেন এক লাখ টাকা৷ এর বাইরে আমরা কোনো সহায়তা পাইনি৷’’

তারা পাঁচ ভাই-বোন৷ আহসান উল্লাহ সবার বড়৷ তিনি এখন যে চাকরি করেন, তাতে বেতন মাত্র ছয় হাজার টাকা৷ ছোট ভাই-বোনদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে৷

আগুনের পর ওই এলাকায় অবৈধ প্লাস্টিক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয় সিটি কর্পোরেশন৷ তবে তা সফল হয়নি৷ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মালিকরা৷ ওয়াহেদ ম্যানশন ছাড়া আর সব ভবনেই আবার কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক কারখানা চালু হয়েছে বলে জানান আহসান উল্লাহ৷ তিনি বলেন, ‘‘আজও (১৯ ফেব্রুয়ারি) আমি চুড়িহাট্টায় গিয়েছিলাম৷ নিহতদের পরিবারের আরো অনেক সদস্য গিয়েছিলেন৷ তাদের অবস্থাও একই রকম৷ অধিকাংশ পরিবারই হাসপাতাল মর্গের ওই ২০ হাজার টাকাই পেয়েছে৷ আর কিছু পায়নি৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ওখানে আগের মতোই দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে৷ কেমিক্যাল গোডাউন, প্লাস্টিক কারখানা আবারো চালু হয়েছে৷ তবে কিছুটা গোপনে৷’’

আগুনে নিহত জুম্মন মিয়ার ছেলে আসিফ হোসেন এখন চকবাজারেই একটি টেইলরিং শপে চাকরি করেন৷ তিনি এই ঘটনায় মামলারও বাদী৷ আসিফ হোসেন বলেন, ‘‘আমরাও ২০ হাজার টাকা পেয়েছি৷ আর কোনো সহায়তা পাইনি৷ অপরাধীরা আইনের আওতায় আসেনি৷ আমাদের দাবি, যারা এই আগুনের জন্য দায়ী তারা বিচারের আওতায় আসুক৷’’

ওই এলাকার ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমকে উন্নত করা হয়েছে: সাঈদ খোকন

This browser does not support the audio element.

চুড়িহাট্টা এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায়৷ দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগুনের পর ওই এলাকার প্লাস্টিক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউন নতুন জায়গায় সরিয়ে নেয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়৷ তাদের জন্য কেরানীগঞ্জে আলাদা পল্লী হবে৷ কিন্তু সেজন্য শিল্পমন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ আর এখন নতুন করে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওই এলাকার ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমকে উন্নত করা হয়েছে৷ খুব দ্রুত যাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আর স্থানীয়ভাবে ১৫-২০ মিনিট যাতে ফায়ারের বিরুদ্ধে ফাইট করা যায়, তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷’’

নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি তালিকা করেছি৷ সেই তালিকা ধরে আগামীকাল (২০ ফেব্রুয়ারি) আগুনের বছর পূর্তিতে ক্ষতিপুরণ দেবো৷ কাউকে চাকরি, কাউকে নগদ টাকা এবং কাউকে দোকান করার সহায়তা দেবো৷ ক্ষতি বুঝে আমরা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ