মিথানলের বিষক্রিয়া
১৩ অক্টোবর ২০১২বলা হয় প্রাগের কেন্দ্রস্থলে কাসা হাভানায় সবচেয়ে ভালো ককটেল পাওয়া যায়৷ সাধারণত এই পাবে শেষ জায়গাটি পর্যন্ত ভরে যায়৷ কিন্তু ইদানীং এক মনমরা আবহ বিরাজ করছে সেখানে৷ বার কিপার অনড্রেই অ্যালকোহল বিহীন ফলের ককটেল মেশান মুখ ভার করে৷
অনড্রেই জানান, ‘‘এটা এক সত্যিকারের সমস্যা আমাদের পাবের জন্য৷ আমাদের এখানে লোকজন প্রায় আসছেই না৷ এই নিষাধাজ্ঞা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটানো ছাড়া উপায় থাকবে না৷''
সম্প্রতি চেক প্রজাতন্ত্রে মিথানল বা মিথাইল মদের কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে পড়ে৷ মিথানল মেশানো ভেজাল রাম ও ভদকা মদ পান করে অনেক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ মারা গেছে কমপক্ষে ২০ জনেরও বেশি৷
বাহ্যিক দিক দিয়ে বোঝার উপায় নেই
মিথানল এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ৷ স্বচ্ছ, বর্ণহীন, দাহ্য তরল পদার্থ৷ সাধারণত স্পিরিট হিসাবে কাঠ পালিশ, প্লাস্টিক, রঙ ও ছাপা শিল্পেই ব্যবহৃত হয় এই পদার্থ৷ এই পদার্থ পানের পর যে সব লক্ষণ দেখা দেয়, তাও মদ্যপানের পরের লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়, তাই প্রথম অবস্থায় এর ভয়াবহতা বোঝা যায় না৷
বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরে মিথানল ঢুকলে ফরমিক অ্যাসিড তৈরি হয়৷ এর ফলে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় হাইপোক্সিয়া৷ দেখা দেয় মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বমিবমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি উপসর্গ৷ শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে, তা কিডনির পক্ষে শরীর থেকে বের করা সম্ভব হয় না৷ ফলে কিডনির কাজ ব্যাহত হয়৷ স্নায়ুতন্ত্র, যকৃত, ফুসফুস ও অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে৷ পরিণতিতে যা মৃত্যু ডেকে আনে৷ বেঁচে থাকলেও অন্ধত্ব বরণ করতে হয় অনেককে৷
সাধারণত ইথানল বা বিশুদ্ধ মদ দেহে ঢুকিয়ে মিথানল-বিষক্রিয়ার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে৷ এর ফলে ফুসফুস ও কিডনির মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ অনেকটা বের হয়ে যায়৷
উৎসবের আনন্দ মাটি
চেক প্রজাতন্ত্রের টমাস স্যুনটিভ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে তাঁর জন্মদিন পালন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এই উৎসবের যে, এই রকম করুণ পরিণতি হবে, তা কেউ ভাবেনি৷ এক বোতল ভদকা, ঘটায় এই অঘটন৷ এই ভদকা পান করে টমাস ও তাঁর বন্ধুদের অনেককেই হাসপাতালের পথ ধরতে হয়েছে৷ টমাস জানান, ‘‘মনে হয় চোখের সামনে যেন কুয়াশার পর্দাঘেরা৷'' আংশিক অন্ধও হয়ে গেছেন তিনি৷ বন্ধুরা মদের বোতলটি ছোট একটি দোকান থেকে কিনেছিলেন৷ কিন্তু এটা যে বিষাক্ত মিথানল ককটেল ছিল, তা কেউ বোঝেনি৷
চেক প্রজাতন্ত্রের আশেপাশের দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে মদ থেকে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা, আক্রান্তও হয় অনেকে৷ স্লোভাকিয়ার এক পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে চেক রিপাবলিক থেকে ২০ লিটার প্লাম ফলের মদ কেনা হয়েছিল৷ ঘরে তৈরি এই মদ কোনো কোম্পানির নাম ছাড়াই প্লাস্টিক বোতলে ভরা ছিল৷ এই মদ পানের পর অনুষ্ঠানের ১৭ জন অতিথিকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়৷ চার জনের ক্ষেত্রে মিথানলের বিষক্রিয়া শনাক্ত করা গেছে৷ তবে তারা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে গেছেন৷ মিথানলের পরিমাণ খুব কম থাকায় স্বাস্থ্যের ওপর তেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা৷
চেক প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দেয়া হয়, তারা যেন দোকান থেকে, যে মদে ২০ শতাংশের বেশি অ্যালকোহল রয়েছে, তা না কেনে বা পাবেও ওসবের দিকে হাত না বাড়ায়৷ তবে এতে বিরক্তও অনেকে৷ এক ক্রেতা বলেন, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞায় কোনো কাজ হবে না৷ বরং উল্টোটাই হতে পারে৷ মানুষ তখন কালো বাজারেই অ্যালকোহল কিনতে যাবে৷''
প্রতিবেদন: হাইনলাইন শ্টেফান/আরবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ