চেন্নাইতে সাড়ে ছয় লাখ বিহারী ভোটার? ইসি বলছে মিথ্যা, বিতর্ক
৫ আগস্ট ২০২৫
বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের পর ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ গেছে। কমিশন জানিয়েছে, তারা কেউ মৃত, কেউ স্থায়ীভাবে বিহার থেকে চলে গেছে, কারো নাম একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় আছে। কমিশন এখন পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বলা হয়েছে, ভারতের সব রাজ্যে এই কাজ হবে। এরই মধ্যে সাবেক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এমন একটা অভিযোগ করেছেন, যার জেরে তামিলনাড়ুতে রীতিমতো আলোড়ন দেখা দিয়েছে।
কী বলেছেন চিদাম্বরম?
সাবেক স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ হলো, ''তামিলনাড়ুতে সাড়ে ছয় লাখ বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা খুবই চিন্তাজনক ও বেআইনি কাজ। নির্বাচন কমিশন রাজ্যের ভোটার-চরিত্র বদল করতে চাইছে।''
চিদাম্বরমের এই অভিযোগের কেন্দ্রে আছে, নির্বাচন কমিশনের বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে একটি ঘোষণা। তারা জানিয়েছে, বিহারে ৩৬ লাখ ভোটার হয় স্থায়ীভাবে বিহার ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
চিদাম্বরম বলেছেন, ''''বিহারে ৬৫ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার হারাতে চলেছেন। তামিলনাড়ুতে সাড়ে ছয় লাখ ভোটদাতাকে যুক্ত করার রিপোর্ট খুবই চিন্তাজনক। চিদাম্বরম বলেছেন, ''তারা পাকাপাকিভাবে তামিলনাড়ুতে চলে এসেছেন, এটা বলা আসলে পরিযায়ী শ্রমিকদের অপমান করা। তামিলনাড়ুর মানুষের তাদের পছন্দসই সরকার বেছে নেয়ার অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।''
চিদম্বরমের প্রশ্ন, ''পরিযায়ী শ্রমিকরা কেন বিহারে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন না, যেমনটা তারা প্রতিবছর দেন? তারা কি ছট পুজোর সময় বিহারে যান না? কোনো পরিযায়ী শ্রমিকের নাম ভোটার তালিকায় থাকতে গেলে তার আইনসিদ্ধ স্থায়ী বাসস্থান সেই রাজ্যে থাকতে হবে। এই পরিযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী ঠিকানা বিহারে, তারা বিহারের বাসিন্দা। তাহলে তাদের নাম কী করে তামিলনাড়ুর ভোটার তালিকায় তোলা হবে?''
তার অভিযোগ, ''নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। রাজনৈতিকভাবে ও আইনি পদ্ধতিতে তাদের এই ক্ষমতার অপব্যবহার রুখতে হবে।''
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ''তামিলানড়ুতে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন হয়নি। তাই বিহারের সঙ্গে তামিলনাড়ুর তুলনা টানাটা অবাস্তব। রাজনৈতিক নেতারা যেন নিবিড় সংশোধন নিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।''
কমিশনের মতে, ''১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধি আইন অনুসারে কোনো এলাকার সাধারণ বাসিন্দা হলেই ভোটার তালিকায় নাম তোলা যায়। এক্ষেত্রে ভোটাররাই এগিয়ে আসেন। তারাই কোনো কেন্দ্রে তাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলেন। কমিশনের নজরে এসেছে যে, তামিলনাড়ুতে সাড়ে ছয় লাখ বিহারের ভোটারের কথা বলা হচ্ছে, এটা মিথ্যা কথা।''
কমিশন জানিয়েছে, ''ভারতের সংবিধান অনুসারে যে কোনো নাগরিক দেশের যে কোনো জায়গায় গিয়ে থাকতে পারেন। সাধারণ বাসিন্দা হলেই তিনি ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেন। তামিলনাড়ুর মানুষ যদি দিল্লিতে সাধারণভাবে থাকেন, তাহলে তিনি দিল্লির ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেন। বিহারের কোনো বাসিন্দা যদি চেন্নাইতে থাকেন, তাহলে তিনিও সেখানে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেন।''
বিতর্ক চলছে
পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরম বলেছেন, ''ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের ফলে গরিব, প্রান্তিক মানুষ এবং সংখ্যালঘুদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। ৬৫ লাখ মানুষের নাম বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। এর মধ্যে বলা হচ্ছে, বড় অংশ বাইরের রাজ্যে চলে গেছে। সেখানেই বলা হয়েছে, সাড়ে ছয় লাখ মানুষ তামিলনাড়ুর ভোটার। অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিক নির্মাণ ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজের জন্য আসেন। তারা স্থায়ী বাসিন্দা নন। যদি সাড়ে ছয় লাখ বিহারী তামিলনাড়ুর ভোটার, তাহলে সেক্ষেত্রে ভোটারের চরিত্র বদল হয়।''
কার্তি বলেছেন, ''যদি কেউ স্থায়ীভাবে চলে আসেন, তাহলে তিনি ভোটার হবেন। কিন্তু যারা ছয় মাস পরে তিনি অন্য রাজ্যে চলে যাবেন, তারা পরিযায়ী শ্রমিক। তারা উৎসবে নিজের রাজ্যে চলে যান। তারা প্রকল্প অনুসারে কাজ করতে আসেন। তারা কখনো চেন্নাই থাকেন, কখনো মাদুরাই, কখনো অন্য রাজ্যে চলে যান। নির্বাচন কমিশন বলছে, সাড়ে ছয় লাখ ভোটার তামিলনাড়ুতে চলে গেছে। এখন কী করে ও কোন ভিত্তিতে তাদের তামিলনাড়ুর ভোটার করা হলো?''
কার্তি বলেছেন, ''একটা বিধানসভায় ১০ হাজার ভোটার যুক্ত করলে তার গুরুতর ফল হবে। স্থায়ী বাসিন্দাদের গুরুত্ব কমে যাবে। এগুলি খুবই ন্যায্য় আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। নির্বাচতন কমিশনের উচিত হয়নি, বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নিবিড় সংশোধনের কাজ করা। ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে তথ্য জানানো হচ্ছে না।''
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তারা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের বিরুদ্ধে।
তামিলনাড়ু বিজেপি-র সহ সভাপতি নারায়ণন তিরুপতি বলেছেন, ''চিদম্বরমের প্রতি আমার করুণা হচ্ছে। তারা একদিকে বলছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভোট দেবে বলে ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আবার তিনি বলছেন, সেই ভোটদাতারাই বিজেপি-কে ভোট দেবেন বলে তামিলনাড়ুর ভোটার তালিকায় তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে। কী করে তিনি এই কথা বলতে পারেন? তার হুঁশ আছে তো? তার মতো মানুষের এই ধরনের রাজনীতি করা উচিত নয়। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।''
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা এ রাজা বলেছেন, ''ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন কেন করা হচ্ছে, কীভাবে করছে, এটা কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে কেন তা করা হচ্ছে, কেন এইভাবে সংশোধন হচ্ছে?''
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''প্রশ্ন হলো, বিহারের তালিকায় বাদ পড়া সাড়ে ছয় লাখ ভোটদাতা কি তামিলনাড়ুর ভোটার? তারা কি বিহার ছেড়ে এখন তামিলনাড়ুতেই থাকেন? তারা পরিযায়ী শ্রমিক হলে তো তাদের নাম তামিলনাড়ুর ভোটার তালিকায় থাকবে কি? এই প্রশ্নের জবাব না পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে না।''
জিএইচ/এসজি