মঙ্গলবারের ঘটনা৷ টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা পড়ে দেশ জুড়ে সম্প্রচারিত হবার পর দৃশ্যটি চীনের ইন্টারনেটে ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি৷ লাল ড্রেস পরা এক মহিলা সাংবাদিক একটি লম্বা ও বিরক্তিকর প্রশ্ন করছেন, যার উদ্দেশ্য দৃশ্যত আমলা মহোদয়কে একটি অনুরূপ লম্বা ও বিরক্তিকর উত্তর দেবার সুযোগ করে দেওয়া – এছাড়া শি জিনপিং-এর মাহাত্ম্য বর্ণন তো আছেই৷ প্রায় ৪০ সেকেন্ড ধরে বকে গেলেন ঝাং হুইজুন, অ্যামেরিকান মাল্টিমিডিয়া টেলিভিশন বা এএমটিভি নামের ক্যালিফর্নিয়াভিত্তিক একটি চীনা ভাষায় টেলিভিশন কেন্দ্র, যারা নাকি চীনের সরকারি সিসিটিভি-র সহযোগী৷
ঝাং-এর পাশে বসে ছিলেন শাংহাই-এর ফাইন্যান্সিয়াল নিউজ সার্ভিস ইচাই মিডিয়ার সাংবাদিক লিয়াং সিয়াংগি (নীল পোশাক পরা)৷ ঝাং-এর কর্তাভজা ধরনের প্রশ্ন ও তার ভঙ্গিমা সহ্য করতে না পেরে, চোখ ঘুরিয়ে, মুখ ফিরিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন লিয়াং৷ লিয়াং-এর অভিব্যক্তির ক্লোজ-আপ চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং সার্ভিস উইচ্যাট-এ ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে৷ দুপুরের মধ্যে লিয়াং-এর নাম চীনে টুইটারের বিকল্প সিনা ওয়াইবো-তে ট্রেন্ড করেছে; তাওবাও-এর মতো অনলাইন স্টোরে লিয়াং-এর ছবি দেওয়া টি-শার্ট আর মোবাইল কভার বিক্রি করা হচ্ছে৷
ততক্ষণে কমিউনিস্ট পার্টির সেন্সরদেরও টনক নড়েছে৷ কাজেই সব সার্চ ব্লক করে দিতেও বেশি সময় লাগেনি৷ শেষ খবর, চীনের বাৎসরিক জাতীয় কংগ্রেসের রিপোর্টার হিসেবে লিয়াং-এর অনুমতিপত্র নাকি বাতিল করা হয়েছে ও তাঁর ওয়াইবো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে৷ তবে ইচাই মিডিয়ায় তাঁর চাকরি যাবার খবরটা নাকি ঠিক নয়৷
এসি/এসিবি
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। ছবিঘরে দেখুন তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: Reuters/Jason Leeকমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা শি ঝংজুন ছিলেন তাঁর পিতা৷ পিতার কীর্তি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তে শুরুর দিকে বাধা তৈরি করে৷ ১৯৬২-তে দল থেকে বহিষ্কৃত হন ঝংজুন৷ কয়েক বছর পর চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় নিপীড়িত হন, এমনকি জেলেও যেতে হয় তাঁকে৷ সেই পিতার ছেলের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করে অবশেষে ১৯৭৪-এ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টি৷ সেই থেকে শুরু শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media/Pictures From Historyরসায়ন প্রকৌশলের ছাত্র শি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে৷ কঠিন পরিশ্রম করেন৷ আট বছর পর দলের পক্ষে প্রথম বড় পদটি পান৷ ১৯৮২ সালে নির্বাচিত হন দলের হের্বেই রাজ্যের সম্পাদক৷ এরপর একে একে বেশ কয়েকটি প্রদেশের গভর্নর নির্বাচিত হন৷ এমনকি চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ও ব্যবসাকেন্দ্র সাংহাই রাজ্যদলের প্রধানের পদটিও ঝুলিতে পুরে নেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/CPAশি’র ক্যারিয়ারে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ যে দল তাঁর পিতাকে বহিষ্কার করেছে সেই কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি৷ এমন কি কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত করে, যার অর্থ হলো, অলিখিতভাবে তিনি হয়ে ওঠেন চীনের নেতা৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও-এর দু’বারের মেয়াদ শেষ হবার পর চীনের জাতীয় কংগ্রেস তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে৷
ছবি: GOH CHAI HIN/AFP/Getty Imagesনির্বাচনের পর শি-এর রাজনৈতিক শ্লোগান হয় ‘চাইনিজ ড্রিম’৷ অনেকে একে আমেরিকান ড্রিমের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললেও আসলে এর অর্থ চীনের নবউত্থান৷ শি একে ‘চীনা জাতির মহাউত্থান’ হিসেবেই উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, চীনকে পৃথিবীতে এর ‘প্রাপ্য জায়গা’ নিশ্চিত করতে হবে৷ তাঁর মতে, সেই জায়গা করতে গিয়ে ‘শত্রুর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে’ যেতেও পিছপা হবে না চীন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Wong১৯৪৯ সালের চীনের গৃহযুদ্ধের পর শি’ই প্রথম কোনো চীনা নেতা যিনি তাইওয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইয়িং-জু’য়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি৷ তার মানে এই নয় যে তিনি ছাড় দিতে রাজি আছেন৷ ২০১৮ সালের মার্চে তিনি তাইওয়ানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি আলাদা হবার চিন্তা আসে মাথায়, তাহলে ‘ইতিহাসের শাস্তি’ জুটবে তাদের কপালে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/W. Maye-E২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শি কমিউনিস্ট পার্টির মূল নেতার স্বীকৃতি পান৷ এ স্বীকৃতি এর আগে কেবল আধুনিক চীনের স্থপতি, দলের সাবেক চেয়ারম্যান মাও সেতুং এবং আরেক সাবেক চেয়ারম্যান দেং জিয়াওপিং ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন পেয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/Feng Li২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চীনের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (যেটি মূলত সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে) নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়৷ এতে করে ৬ লাখ ৬০ হাজার শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photoএকনায়কতন্ত্রের খড়গ হতে দেশকে বাঁচাতে ১৯৮২ সালে জিয়াওপিং নিয়ম করেন যে, একজন দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না৷ ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ, চীনের সংসদ শি’কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে এবং ভোটের মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করে যে, একজন প্রেসিডেন্টের দু’বার নয়, বরং অনির্দিষ্টবারের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন৷ তাই শি-এর সামনে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকার পথ খোলা৷
ছবি: Reuters/Jason Lee