1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
প্যানোরামাকিউবা

চে গেভারার একটি ছবি কীভাবে বিশ্বখ্যাত হলো

৯ মার্চ ২০২৫

চে গেভারার এই প্রতীকী ছবিটি ৬৫ বছর আগে তোলা৷ এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদানকারী আলোকচিত্রীর দ্রুততার সঙ্গে তোলা ছবি থেকে বানানো প্রতিকৃতি এখন বিখ্যাত বিশ্বজুড়ে৷

ইয়েমেনে সরকারবিরোধীদের আন্দোলনে চে গেভারার ছবিসম্বলিত একটি প্ল্যাকার্ড
কেবল কমিউনিস্ট আন্দোলন নন, এই ছবির কল্যাণে বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা ধরনের আন্দোলনে প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন চে গেভারাছবি: picture alliance/dpa

গেরিলা নেতার সেই প্রতিকৃতিটি এখন অগণিত ভক্তদের দেয়ালে পোস্টার হিসেবে শোভা পায়। শুধু তাই না, টি-শার্টের ডিজাইনে অথবা ফ্রিজে চুম্বক হিসাবেও শোভা পায় এই ছবি। অনেকেই এই ছবিটিকে ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে পুনরুত্পাদিত ছবিগুলোর একটি বলে অভিহিত করেন।

‘গেরিলেরো হেরোইকো' (বীর গেরিলা) নামে পরিচিত ছবিটি ১৯৬০ সালের মার্চ মাসে হাভানায় থাকা কিউবান আলোকচিত্রী আলবের্তো কোর্দার তোলা।

রাজধানী হাভানার বন্দরে গোলাবারুদ এবং গ্রেনেড নামানোর সময় ফরাসি মালবাহী জাহাজ লা কুব্রে বিস্ফোরণে নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে চে গেভারার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আলবের্তোও।

স্মরণ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, ফরাসি বুদ্ধিজীবী জ্যঁ-পল সার্ত্রে এবং সিমোন দ্য বোভোয়া এর মতো অতিথিরা।

আলবের্তো কিউবান সংবাদপত্র রেভোলুসিওনের প্রতিবেদক হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বামপন্থি প্রতিরোধ যোদ্ধা আর্নেস্তো 'চে' গেভারা মঞ্চে থাকলেও সামনের দিকে ছিলেন না। কেবল মঞ্চ থেকে নামার পর শোকাহত মানুষের ভিড়ের দিকে অল্প সময়ের জন্য এগিয়ে আসেন।

আলবের্তো বলেন, "আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। তার তীব্র দৃষ্টি আমাকে প্রায় ভীত করে তুলেছিল।"

দ্রুততার সঙ্গে তিনি মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন। ‘‘প্যাক, প্যাক করে শব্দ হলো। দুটি শট নিতে পারলাম, এর বেশি নয়,'' পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে এই ফটোগ্রাফার তার লাইকা ক্যামেরার হওয়া শব্দের স্মৃতিচারণ করেন।

গুয়েভারা আবার দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়ার আগে তিনি তার একটি পোর্ট্রেট এবং একটি ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে পেরেছিলেন।

আলবের্তো ২০০১ সালে মারা যান। তার পুরো নাম ছিল আলবের্তো দিয়াস গুতিয়েরেস। ছবি তোলার পর পোর্ট্রেটের চেয়ে ল্যান্ডস্কেপ ছবিটাই তার বেশি পছন্দ হয়েছিল।

একজন সাবেক বিজ্ঞাপন ও ফ্যাশন ফটোগ্রাফার ছবিটি সম্পাদনা করেছিলেন। ছবিটিক বাম এবং ডান দিকে তাল গাছের ডাল এবং অন্য একজনের মাথা তিনি সম্পাদনা করে সরিয়ে দেন।

এর ফলে সামান্য নীচু থেকে তোলা ছবিটিতে দেখা যায় চে তার বিখ্যাত তারকাখচিত টুপিটি পরে দূরের দিকে তাকিয়ে আছেন, তার ঢেউ খেলানো চুল প্রায় কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সেই ছবিটির ব্যবহার আজও অব্যাহত রয়েছে। পপশিল্পী ম্যাডোনার সবশেষ বিশ্ব ভ্রমণের সময় এই ছবি দিয়ে তার মঞ্চসজ্জা করা হয়। সুপারমডেল গিসেল ব্যুন্ডশেনের পরা বিকিনিতেও এই ছবি ছিল। বক্সিং আইডল মাইক টাইসন এবং সাবেক ফুটবল তারকা দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনার শরীরে চে গেভারার প্রতিকৃতির ট্যাটু রয়েছে।

আইরিশ শিল্পী জিম ফিটৎসপ্যাট্রিক ১৯৬৮ সালে ছবিটি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আরেকটি বিখ্যাত গ্রাফিক চিত্র তৈরি করেন। অ্যান্ডি ওয়ারহলের এক সহকারি এর একটি পপ আর্ট সংস্করণও তৈরি করেছিলেন।

আদর্শবাদী গেরিলা হিসেবে চে গেভারার মিথ তৈরিতে এই প্রতিকৃতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। তবে তার সমালোচকদের কাছে তিনি ছিলেন একজন নির্দয় খুনি।

কিউবার বিপ্লবে কাস্ত্রো ভাইদের সহযোদ্ধা হিসাবে তিনি লড়াই করেছিলেন এবং বিপ্লবে বিজয়ের পর তিনি একাধিক সরকারি পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন।

মেক্সিকোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে এই ছবিতে আলবের্তোর সই করা একটি প্রিন্ট রয়েছে। সেখানকার ইমেজ সেন্টারের মারিয়ানা হুয়ের্তা বলেন, ‘‘ছবিটি একটি ধারণায় পরিণত হয়েছে। এটি আর কোনও ব্যক্তির কথা নয়, বরং একটি প্রতীকের কথা বলে।"

'প্রতিরোধ, রূপান্তর, আদর্শ', হুয়ের্তা মনে করেন, ছবিটি যে প্রেক্ষাপটে তোলা হয়েছিল তার বাইরে গিয়ে এর পেছনের বার্তা অনেক বেশি ছড়িয়েছে।

ছবিটি অবশ্য বিশ্বজুড়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি।

স্মরণসভার পর আলবের্তোর সংবাদপত্রও প্রাথমিকভাবে এটি ব্যবহার করেনি। কারণ সেখানে গেভারা প্রধান ব্যক্তি ছিলেন না।

প্রায় এক বছর পর ১৯৬১ সালে কিউবার শিল্পমন্ত্রী হিসেবে গেভারার একটি টিভি ভাষণের বার্তা ঘোষণা করার জন্য ছবিটির একটি ছোট প্রতিলিপি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল।

ছবিটি আলবের্তোর ফটো স্টুডিওর দেয়ালে বছরের পর বছর ধরে ঝুলছিল। ১৯৬৭ সালে একদিন ইটালিয়ান প্রকাশক এবং কমিউনিস্ট আন্দোলন কর্মী জিয়ানজিয়াকোমো ফেলত্রিনেল্লি তার কাছে চে-এর একটি ছবি চেয়েছিলেন। আলবার্তো তাকে বিনামূল্যেই এই ছবির দুইটি প্রিন্ট দেন।

এরপর ছবিটি ইউরোপে যায় এবং ১৯৬৭ সালের আগস্টে ‘প্যারিস ম্যাচ' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। সেখানে ফটোগ্রাফার হিসাবে আলবের্তোর কোনও উল্লেখ করা হয়নি। ম্যাগাজিনটিতে ছবিটির সঙ্গে প্রকাশিত টাইটেল ছিল, ‘চে গেভারা: উ ইত ইল দুংক?' (চে গেভারা: আসলে তিনি কোথায়?)। বলিভিয়ায় বিপ্লব শুরু করার জন্য তখন আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এই গেরিলা নেতা।

দুই মাস পর অক্টোবরে ৩৯ বছর বয়সি গেভারা বলিভিয়ান সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুই এই ছবির সুখ্যাতির সূচনা করে

ফেলত্রিনেল্লি এই ছবিটি ব্যবহার করে লাখ লাখ পোস্টার ছাপান। ১৯৬৮ সালের ছাত্রবিক্ষোভের সময় প্রতিকৃতিটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বামপন্থি গেরিলাদের জন্য এক প্রতীকী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন গেভারা।

চে গেভারাকে নিয়ে লুই লোপেজ এবং ত্রিশা জিফের তৈরি ‘চেভোলিউশন' (২০০৮) ডকুমেন্টারিতে আলবের্তোর মেয়ে ডায়ানা দিয়াজ বলেন, ‘‘এক চে মারা গেলেও অন্য চে'দের জন্ম হয়েছে।''

আলবের্তো কিউবান বিপ্লবের একজন কট্টর সমর্থক ছিলেন এবং ছবির কপিরাইটের প্রতি খুব একটা যত্নবান ছিলেন না।

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এই ফটোগ্রাফার এবং তার পরিবার ভদকা প্রস্তুতকারক স্মিরনফ এবং ঘড়ি প্রস্তুতকারক সোয়াচের মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এই ছবির বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণে মামলা করেছিলেন। তারা মামলায় জিতেছিলেন।

২০০১ সালে একটি প্রদর্শনীর জন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে থাকাকালীন ৭২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আলবের্তো কোর্দা।

ডকুমেন্টারিতে তার মেয়ে বলেন, ‘‘এই ছবিটি তাকে ধনী বানায়নি। তবে এটি তার জীবনকে আবেগ দিয়ে বদলে দিয়েছে।''

ডায়ানা জানান, এই ছবিটি নিয়ে গর্বিত ছিলেন আলবের্তো। ডায়ানা বলেন, ‘‘তিনি আমাকে বলেছিলেন: কল্পনা করো, এই ছবির কারণে আমি কতটা বিখ্যাত হয়েছি। এবং আমি এর জন্য কিছুই করিনি।''

এডিকে/এফএস (ডিপিএ)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ