দৃষ্টিহীনরা পৃথিবীকে কীভাবে দেখেন? দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও এক নারী ছবি তোলার শখ ছাড়েননি৷ অন্যান্য ইন্দ্রিয় কাজে লাগিয়ে তিনি জগতের রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ ফুটিয়ে তুলছেন ছবির মাধ্যমে৷
বিজ্ঞাপন
সিলইয়া কর্ন দৃষ্টিহীন৷ চোখ দিয়ে আর রং, রূপ বা আলো দেখতে পান না৷ তবে হাত, নাক ও কানের সাহায্যে সে সব চিনতে পারেন৷ সেই অনুভূতির সাহায্যে তিনি নিজের মোটিফ বেছে নেন৷ সিলিয়া বলেন, ‘‘যখন শব্দ, গন্ধ বা আবহের খোঁজে একাই পথে নামি, অথবা পায়ের নীচে অন্য ধরনের পাথরের অস্তিত্ব টের পাই, তখন তার ছবি তুলে ফেলি৷ অথবা পাখির ডাক শুনতে শুনতে মনে হয়, কীভাবে সেটা ধরে রাখতে পারি৷''
ছোটবেলায় তিনি সবকিছু নিজের চোখেই দেখতে পেতেন৷ তখন অনেক ছবি তুলেছেন এবং এঁকেছেন৷ কিন্তু ১২ বছর বয়সে এক গাড়ি দুর্ঘটনার পর দৃষ্টিশক্তি হারানোর ফলে তাঁর জীবন থমকে গিয়েছিল৷ বছর দশেক আগে এক পেশাদারী ফটোগ্রাফার তাঁকে আবার কাজ শুরু করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন৷ অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি কাজে লাগাতে বলেছিলেন৷ সিলইয়া কর্ন বলেন, ‘‘তখন আমি বুঝতে পারলাম, দৃষ্টি থাকা ও দৃষ্টিহীন মানুষের মধ্যে সত্যি একটা জানালা যেন খুলে গেল৷ সেই উপলব্ধির পর আমার মনে আবার কাজ শুরু করার তাগিদ জন্মালো৷ তখন থেকে আমি ছবি তুলে যাচ্ছি৷''
না দেখে ছবি তোলা
02:39
দৃষ্টিহীনদের জন্য রং শনাক্ত করার বিশেষ এক যন্ত্রের সাহায্য নেন তিনি৷ শব্দের মাধ্যমে সেই যন্ত্র রং চিনিয়ে দেয়৷ তবে নিজের তোলা ছবি তিনি দেখতে পান না৷ তখন অন্যদের সাহায্য নিতে হয়৷ সিলিয়া বলেন, ‘‘কে বর্ণনা দিচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে৷ যেমন আমার স্বামী আমাকে এতকাল ধরে চেনেন, যে তিনি জানেন কীভাবে বর্ণনা দিলে আমি বুঝবো, কল্পনা করে নিতে পারবো৷ মনে হয় যেন নিজের চোখেই দেখছি৷''
কোন ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পাবে, তিনি নিজেই সেই সিদ্ধান্ত নেন৷ সিলইয়া ঠাট্টা করে বলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে মনগড়া কথা বললেও তিনি ঠিক তা ধরতে পারেন৷
সিলইয়া কর্ন জগতকে যেভাবে দেখেন, তাঁর ছবির মাধ্যমে আমরা তার স্বাদ পেতে পারি৷
কিয়ো ড্যোরার/এসবি
শিশুর ক্যামেরায় নিজের জগত
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাইয়েলিচা এলাকার শিশুরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেসবের ছবি তোলে৷ ক্যামেরা হাতে আশেপাশের ছবি তুলে বেড়ায় ওরা৷ কাইয়েলিচায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস, তাঁদের প্রায় সবাই খুব গরিব৷
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
একদিনের রিপোর্টার
‘‘জীবনে সত্যি যা ভালোবাসো তা দেখাও’’ – ঠিক এই কথাটাই বলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছয় বছর বয়সি এই শিশুদের৷ এই প্রথম ক্যামেরা হাতে নিয়েছে ওরা৷ কয়েক ঘণ্টা ক্যামেরা চালানো শেখার পর নেমে পড়েছে সেরা ছবি তোলার কাজে৷
ছবি: Karin Banduhn
‘নতুন বাড়ি’
কোসা ভাষায় কাইয়েলিচা মানে ‘নতুন বাড়ি’৷ সরকার চায় এলাকায় নতুন ঘর-বাড়ি হোক৷ কিন্তু লিখতার পরিবারের মতো অনেকেরই কাঠের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠার সাধ্য নেই৷
ছবি: Liktha/Karin Banduhn
ভরপুর বাড়ি
সিফোকাজির পরিবারে এক ছাদের নীচে বাস করে তিন প্রজন্ম৷ কাইয়েলিচার বেশির ভাগ পরিবারের মতো এ পরিবারেরও মূল উপার্জনকারী বাবা, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্য বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মা৷ মা-বাবা যখন কাজে ব্যস্ত, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন দাদা-দাদি৷
ছবি: Siphokazi/Karin Banduhn
অমূল্য সম্পদ
খেলনা খুব প্রিয় মাহলের৷ বেশিরভাগ খেলনাই তার স্কুলে আসে জার্মানির হামবুর্গ শহরের শুলকাম্প প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে৷ কাইয়েলিচা সংস্থা ওদের স্কুলের পাশে আছে সবসময়৷
ছবি: Mahle/Karin Banduhn
ছেলেদের খেলনা
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি একটা গাড়ি থাকলে কার না ভালো লাগে! জায়গা নেই বলে কাইয়েলিচার বাচ্চারা বাড়িতে খুব একটা খেলতে পারে না৷ খুদে ফটোগ্রাফার ইভিভসে তাই খালি ক্যান দিয়েই বানিয়ে নিয়েছে রেস ট্র্যাক৷
ছবি: Ivivse/Karin Banduhn
ক্ষুধা নিবারণ
লুলুথো স্কুল থেকে ফেরে ভীষণ ক্ষুধা নিয়ে৷ ঘরে সবসময় খাওয়ার মতো কিছু না কিছু থাকে বলে রক্ষা৷ কাইয়েলিচার অধিকাংশ পরিবার খাবারের পেছনে প্রতিদিন খরচ করে ২২ রান্ড, অর্থাৎ ১.৭০ ইউরোর মতো৷
ছবি: Lulutho/Karin Banduhn
ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন জীবন
স্থানীয়দের অধিকাংশই কোসা জনগোষ্ঠীর৷ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁদের ভাষা এক৷ তাঁদের কাছে ঐতিহ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সাধারণত মেয়েরা রান্না করে আর ছেলেরা কাজ করতে যায় বাইরে৷
ছবি: Yandise/Karin Banduhn
কাইয়েলিচার শিশুরা
ফটোসাংবাদিক এলেথুর জন্য বন্ধুরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সুখি মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এটা দরকারও, কেননা শিশুদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যৎ!