চলতি বছরের গোড়ার দিকে সালমান রুশদির উপর আক্রমণ হয়েছিল। তার জেরেই একটি চোখ হারিয়েছেন তিনি। অকেজো একটি হাত।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি একটি স্প্যানিশ খবরের কাগজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সালমান রুশদির এজেন্ট। সেখানে তিনি বলেছেন, আশঙ্কামুক্ত হলেও আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারবেন না লেখক। তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। একটি হাত কার্যত অব্যবহার্য হয়েছে। কারণ, ওই হাতের প্রায় সমস্ত নার্ভ কেটে গেছে। এছাড়াও তার গলায় এবং বুকে ভয়াবহ ক্ষত আছে। যে কোনো সময় যা থেকে সমস্যা তৈরি হতে পারে। শুধু বুকেই ১৫ টি ক্ষত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রুশদি কোথায় আছেন, এবিষয়ে তিনি একটিও মন্তব্য করবেন না বলে সাংবাদিকদের জানান তার এজেন্ট। তবে তিনি জানিয়েছেন, রুশদি এখনো হাসপাতালে ভর্তি। প্রাণহানির আর কোনো আশঙ্কা নেই।
অ্যামেরিকার বাফেলো শহর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে লেক এরির পাশে বক্তৃতা করতে গেছিলেন রুশদি। সেখআনেই স্টেজের উপর তার উপর ভয়বাহ হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই পড়ে যান রুশদি। তৎক্ষণাফৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক করা হয় অভিযুক্তকে।
সালমান রুশদিনামা
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ব্রিটিশ ভারতীয় এই লেখকের বিখ্যাত রচনাগুলো৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hanson/PA Wire
কুইক্সোট (২০১৯)
সালমান রুশদির কুইক্সোট আধুনিক যুগের ‘ডন কুইকসোট’ এর পুনর্নির্মাণ৷ এটি এবারের বুকার পুরষ্কারের জন্য দীর্ঘদিন তালিকাভুক্তও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মিডনাইট চিলড্রেন (১৯৮১)
মিডনাইট চিলড্রেন লিখে সাহিত্য অঙ্গনে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি৷ এটি আসলে ভারতের স্বাধীনতার প্রতিলিপি৷ বইটি ১৯৮১ সালে বুকার পুরষ্কার জিতে, এটি বুকারের সেরা হিসেবেও বিবেচিত হয়৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hanson/PA Wire
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস (১৯৮৮)
রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর বিশ্বেজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়৷ উপন্যাসে মুসলমানদের বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে৷ এজন্য ইরানের নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেন৷ এরপর আত্মগোপনে চলে যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Shamsudin
দ্য গ্রাউন্ড বেনেথ হার ফেট (১৯৯৯)
‘দ্য গ্রাউন্ড বিনেথ হার ফেট’ এ গীতিকথা যোগ থাকায় এটি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়৷ রুশদির এই রচনাকে আধুনিক রক সংগীতের বিকল্প ইতিহাস বলেও মনে করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
লুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ (২০১০)
রুশদি বাচ্চাদের জন্যও বই লিখেছেন৷ নিজের ১৩ বছর বয়সের ছেলের কথা মাথায় রেখে ‘লুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ’ নামের সিক্যুয়েলটি লিখেন তিনি৷
ছবি: Random House
জোসেফ আন্তন: এ মেমোয়ার (২০১২)
লেখক জোসেফ কনরাড এবং আন্তন চেখভকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জোসেফ আন্তন ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন রুশদি৷ ফতোয়ার কারণে রুশদির নয় বছর আত্মগোপনে থাকার ঘটনাগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ ওই সময় তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে আরও দুটি বিয়ে করেন৷
ছবি: DW/H. Kiesel
টু ইয়ার্স, এইট মানথ অ্যান্ড টুয়িন্ট এইট নাইটস (২০১৫)
এই বইটি প্রকাশের পর রুশদিকে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বই মেলায় মূল বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ এর প্রতিবাদে ইরান ওই বই মেলা বর্জন করেছিল৷ কারণ রুশদির ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে মুসলমানদের বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে অভিযোগ তোলে আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
হোম (২০১৭)
নন-ফিকশনও লিখেছিলেন রুশদি৷ যেমন- ইমাজিনারি হোমল্যান্ডস: অ্যাসেজ অ্যান্ড ক্রিটিসিজন, ১৮৮১-১৯৯১ (১৯৯২)৷ উপরের ছবিতে তিনি ২০১৭ সালের বই ভিনটেজ মিনস সিরিজের ‘হোম’ প্রদর্শন করছেন৷
২৪ বছরের ওই অভিযুক্তের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জন্মসূত্রে লেবাননের ওই যুবকের বাড়ি অ্যামেরিকার নিউ জার্সিতে। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হলেও আদালতে ওই ব্যক্তি দোষ স্বীকার করেননি। যদিও ঘটনার পরেই এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই যুবক বলেছিলেন, এতবার মারার পরেও রুশদি মারা যাননি দেখে তিনি অবাক। ইরানের সর্বোচ্চ শাসকের প্রতি নিজের সম্মান জানিয়ে তিনি বলেছেন, রুশদির বই তিনি পছন্দ করেন না। তা ইসলামবিরোধী বলে তিনি মনে করেন। স্যাটানিক ভার্সের কয়েকপাতা তিনি পড়ে দেখেন বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
১৯৮৯ সালে রুশদির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ওঠে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। রুশদির মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। কড়া নিরাপত্তার অন্তরালে চলে যান রুশদি। এরপর বহু বছর কেটে গেছে। রুশদি নিরাপত্তা কমিয়েছেন। গত কয়েক দশক ফের প্রকাশ্যে বার হতে শুরু করেছিলেন তিনি। নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।
তার এজেন্ট জানিয়েছেন, বরাবরই রুশদি এবং তার ভয় ছিল, এমনভাবে কখনো হামলা হবে, যেখানে আততায়ীকে চেনাই যাবে না। আচমকাই হামলা হবে তার উপর। বাস্তবেও ঠিক তা-ই ঘটল।