ইটালির গণভোট তার সংসদীয় কাঠামো নিয়ে৷ কিন্তু ব্রেক্সিট বা মার্কিন নির্বাচনের মতো এই ভোটও শুধু মাটেও রেনজির সরকারই নয়, সেই সঙ্গে ইউরো মুদ্রার ভিত নড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে৷
বিজ্ঞাপন
যে দেশে বিগত ৭০ বছরে ৬৩ বার সরকার পাল্টেছে, সেদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার স্বপ্ন দেখছে এই গণভোট – ইটালির তরুণ নেতা মাটেও রেনজি-ও যে স্বপ্ন দেখছেন৷ ইটালির বাইক্যামেরাল সংসদের নিম্নকক্ষের ৬৩০ জন ডেপুটি ও উচ্চকক্ষ বা সেনেটের ৩১৫ জন সদস্য মিলিয়ে মোট ৯৪৫ জন সাংসদ৷ ওদেকে উভয় কক্ষের কাজ ও ক্ষমতা কিন্তু সমান সমান৷
গণভোট সফল হলে, সেনেটের সদস্যসংখ্যা কমে ১০০-য় দাঁড়াবে; এছাড়া সেনেটের সদস্যদের নির্বাচিত না করে, প্রদেশগুলি থেকে মনোনীত করা হবে৷ সবচেয়ে বড় কথা, যে দল জিতবে, তারা বাড়তি আসন পাবে, ফলে ৪০ শতাংশ ভোট পেলেই একটি দল সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে৷ সরকার এভাবে স্থায়িত্ব পাবেন ও অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজগুলি শুরু করতে পারবেন, এই হলো রেনজি ও যারা ‘হ্যাঁ' ভোট দেবেন বলে ভেবেছেন, তাদের আশা৷ এমনকি রেনজি প্রথমে বলেছিলেন যে, ইটালীয়রা যদি ‘না' ভোট দেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন৷ পরে তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান৷
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আয়করের পরিমাণ
জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কী পরিমাণ আয়কর বা ট্যাক্স দিতে হয়, তা নিয়েই এই ছবিঘর৷ তবে এ সব দেশে আয়করের পরিমাণ বেশি হলেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যাতায়াত, সমাজকল্যাণে বা অবসর খাতে নানারকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়৷
ছবি: CC BY-SA 3.0/Pilgab
জার্মানি
আয়করকে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে জার্মানিতে৷ যাদের বাৎসরিক আয় ২৫ হাজার ৭৩১ ইউরোর বেশি, তাদের দিতে হয় সবচেয়ে বেশি ৪৫ ভাগ ট্যাক্স৷ যাদের বেতন বছরে ০ থেকে ৮,৩৫৪ ইউরো তাদের কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না৷ আর ৮,৩৫৫ থেকে ১৩,৪৬৯ ইউরো যাদের বেতন, সেই সব মানুষদের ট্যাক্স দিতে হয় আয়ের ১৪ থেকে ২৩.৯৭ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
ফ্রান্স
ফ্রান্সেও আয়কর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত৷ বাড়িতে ক’জন বসবাস করে তার উপর নির্ভর করে আয়কর৷ এছাড়া যাদের আয় বছরে ৫,৯৬৩ ইউরো পর্যন্ত, তাদের কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না৷ অন্যদিকে যাদের আয় ৭০,৮৩০ ইউরো বা তার বেশি তাদের সবচেয়ে বেশি, মোট আয়ের ৪১ শতাংশ কর হিসেবে দিতে হয়৷
ছবি: Fotolia/lapas77
নেদারল্যান্ডস
এই দেশে আয়করকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি আয়কর বা ট্যাক্স দিতে হয় তাদের, যাদের আয় বছরে ৫৭,৫৮৫ ইউরো বা তার বেশি৷ এদের আয়ের ৫২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়৷ যাদের বাৎসরিক আয় ০ থেকে ১৯,৮৮২ ইউরো তাদের আয়কর দিতে হয় ১.৮৫ ভাগ, যার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত নয়৷ সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা নিতে চাইলে ৩৩ ভাগ ট্যাক্স দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
স্পেন
স্পেনে আয়কর আটটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত৷ যাদের বছরে আয় ৫,১৫০ ইউরো, তাদের কোনো আয়কর দিতে হয় না৷ আর যাদের আয় বছরে ৩০ লাখ ইউরো বা তার বেশি, সরকারকে সর্বোচ্চ ৫২ ভাগ ট্যাক্স বা মোট বেতনের ৫২ শতাংশ কর বাবদ দিতে হয় তাদের৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Thomas
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডে মোট আয়ের সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ ট্যাক্স হিসেবে দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
সুইডেন, ডেনমার্ক ও নরওয়ে
স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে আয়কর অনেক বেশি৷ এই যেমন সুইডেন ও ডেনমার্কে সর্বোচ্চ ৫৬.৬ ভাগ আয়কর দিতে হয়৷ অন্যদিকে নরওয়েতে সর্বোচ্চ আয়কর দিতে হয় আয়ের ৪৬.৯ শতাংশ৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
ইটালি
ইটালিতে আয়কর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত৷ বছরে ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত যাদের আয়, তাদের ট্যাক্স দিতে হয় বেতনের ২৩ ভাগ অর্থ৷ আর যাদের আয় বছরে ৭৫ হাজার ইউরো বা তার বেশি তাদের সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Merola
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে আয়কর চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত৷ যাদের আয় বছরে ১১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত, তাদের কোনো আয়কর দিতে হয় না৷ অন্যদিকে যাদের আয় বছরে দেড় লাখ পাউন্ড বা তার চেয়ে বেশি তাদের সর্বোচ্চ ৪৫ ভাগ আয়কর দিতে হয়৷
ছবি: CC BY-SA 3.0/Pilgab
8 ছবি1 | 8
অধিকাংশ জরিপে কিন্তু ‘না' পক্ষের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার কথাই বলা হচ্ছে৷ অর্থবাজার নার্ভাস৷ ইটালির গভর্নমেন্ট বন্ডসের সুদের হার দ্বিগুণ হয়ে দুই শতাংশের বেশিতে পৌঁছেছে৷ ফ্রাংকফুর্টের সেন্টিক্স গবেষণা সংস্থা অর্থবাজারের এক হাজার পেশাদারের জরিপ করে দেখেছে, গণভোটে ‘না' জিতলে, ইটালির ইউরো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দাঁড়াবে নাকি প্রায় ২০ শতাংশে, বলে তারা মনে করেন – যা এর আগে কখনো হয়নি৷
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হাঁড়ির হাল, যা রেনজির পক্ষে অনুকূল নয়৷ ইটালিতে বেকারত্বের হার প্রায় ১২ শতাংশ, তরুণ ও যুব মহলের প্রায় ৪০ শতাংশ বেকার৷ ইটালির অর্থনৈতিক উৎপাদন আজ দশ বছর আগে যা ছিল, তার চেয়ে কম৷ ইটালির জাতীয় ঋণ তার জিডিপি-র ১৩০ শতাংশের বেশি – অর্থাৎ জাতীয় ঋণের ক্ষেত্রে একমাত্র গ্রিস ইটালিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে৷
গণভোটে ‘না' ভোট দিয়ে ইটালীয়রা তাদের ক্ষোভ ও রোষ ব্যক্ত করতে চান: খোলাবাজারের অর্থনীতি ও সংস্কারের প্রতি ‘না' বলছেন তারা; ‘না' বলছেন সাশ্রয় নীতি ও সরকারের প্রতি; এছাড়া ইউরো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘না'৷ কাজেই ব্রেক্সিট আর ট্রাম্পের নির্বাচনের পর একটি তৃতীয় চমকের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকাই বোধহয় ভালো৷
আন্ড্রেয়াস বেকার/এসি
ইউরো ব্যাংকনোট কিভাবে তৈরি করা হয় জানেন?
ইসিবি, অর্থাৎ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নতুন ৫০ ইউরোর নোট বাজারে ছাড়ছে, যা জাল করা আরো বেশি শক্ত হবে৷ কিন্তু আসল নোট তৈরি হয় কিভাবে?
ছবি: Giesecke & Devrient
নরম তুলো থেকে হার্ড ক্যাশ!
ইউরো ব্যাংকনোট তৈরির আসল উপাদান হল কার্পাস তুলো৷ এভাবে তৈরি নোট কাগজের নোটের চেয়ে বেশি টেকসই হয় – এমনকি ভুল করে ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ফেললেও ভিজে ‘তুলোট’ হয়ে যায় না!
ছবি: tobias kromke/Fotolia
তুলো থেকে মণ্ড হয়ে কাগজ
তুলো ব্লিচ করে, ধুয়ে, পাল্প বা মণ্ড তৈরি করা হয় – যার ফর্মুলা টপ সিক্রেট৷ তারপর একটি সিলিন্ডার মোল্ড যন্ত্র দিয়ে মণ্ডটি কেটে কাগজের লম্বা লম্বা ফালি করে ফেলা হয়৷ এর মধ্যেই কিন্তু সেই কাগজে ভবিষ্যৎ ইউরো নোটের একাধিক নিরাপত্তা চিহ্ন বসানো হয়ে গেছে, যেমন জলছাপ ও সিকিউরিটি থ্রেড৷
ছবি: Giesecke & Devrient
নোট জাল করা রোখা
ইউরো ব্যাংকনোটে দশটি বিভিন্ন নিরাপত্তা চিহ্ন রাখা হয়েছে৷ তার মধ্যে একটি হলো এক ফয়েল অ্যাপ্লিকেশন, যা একটি বেসরকারি ছাপাখানায় নোটের কাগজের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
জালিয়াতরাও কিছু কম যায় না
নোট জাল করা যতই কঠিন হোক না কেন, জালিয়াতরা তবু হাজার হাজার জাল নোট বাজারে ছাড়তে পেরেছে৷ ২০০২ সালে ইউরো আসা যাবৎ গতবছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি জাল নোট ধরা পড়েছে৷ সারা বিশ্বে প্রায় ন’লাখ জাল ইউরো নোট ঘুরছে, বলে ইসিবি-র ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ইউরো নোটে যার আঁকা ছবি
ইউরো ব্যাংকনোটগুলি ডিজাইনের দায়িত্ব রাইনহোল্ড গ্যারস্টেটারের উপর ন্যস্ত৷ সাবেক ডয়েচে মার্ক বিদায় নেবার আগে তার শেষ সিরিজ গ্যারস্টেটারের অঙ্কণশৈলীর পরিচয় বহণ করছে৷ এখনও প্রতিটি ইউরো নোটের উপর ইউরোপীয় স্থাপত্যের কোনো একটি বিশেষ যুগের নিদর্শন থাকে৷ পাঁচ ইউরোর নোটে যদি কোনো সুপ্রাচীন খিলানে ঢাকা পথ দেখা যায়, তো পাঁচশ’ ইউরোর নোটে দেখা যাবে একটি ইস্পাতের সেতু৷
ছবি: Getty Images/AFP
প্রতিটি নোটই অনন্য
কেননা প্রতিটি নোটের নম্বর আলাদা৷ সেই নম্বর দেখলেই বোঝা যায়, ইউরোপের প্রায় এক ডজন সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ছাপাখানার মধ্যে কোন ছাপাখানায় এই বিশেষ নোটটি ছাপা হয়েছে৷ তারপর সেই নোটগুলিকে একটি বিশেষ সূত্র অনুযায়ী বিভিন্ন ইউরো দেশের মধ্যে বেঁটে দেওয়া হয়৷
ছবি: Giesecke & Devrient
একটি পাঁচশ’ ইউরো নোটের দাম
নোটের বান্ডিলগুলোকে বেঁধে শ্রিঙ্ক-ব়্যাপ করে বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ একটি ব্যাংকনোট তৈরির খরচ পড়ে সাত থেকে ষোলো সেন্ট৷ নোটের ডিনমিনেশন বা মূ্ল্য যতো বেশি হবে, বানানোর খরচও সেইরকম বেশি হবে৷
ছবি: Giesecke & Devrient
দাম নয়, খরচ কমানো
আগে সব দেশের নিজের ট্যাঁকশাল ছিল৷ আজকাল জার্মানির ফেডারাল বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক জার্মানির বাইরেও নোট ছাপতে দেয়৷ ২০১৫ সালে জার্মান মুদ্রণ সংস্থা গিজেকে ডেভ্রিয়েন্ট মিউনিখে তাদের ছাপাখানা বন্ধ করে, কেননা লাইপজিগে তো বটেই, এমনকি মালয়েশিয়াতেও নোট ছাপানোর খরচ কম৷
ছবি: Giesecke & Devrient
পুরনো বাতিল করে নতুন
২০১৩ সালে নতুন পাঁচ ইউরোর নোট চালু করা হয়৷ ২০১৫ সালে আসে নতুন দশ ইউরোর নোট৷ এরপর ২০১৬-য় এসেছে নতুন ২০ ইউরোর নোট৷ ২০১৭-য় নতুন ৫০ ইউরোর নোট৷ ২০১৮-য় আসছে ১০০ আর ২০০ ইউরোর নতুন নোট৷ আর ২০১৯ সালে নাকি ৫০০ ইউরোর নতুন নোট বেরনোর কথা – অবশ্য তার আগেই যদি ৫০০ ইউরোর নোট বাতিল না করা হয়৷