কাবু করা তো দূরের কথা, তার কাছে আসার সাহস হবে কার? কোন সিংহের ঘাড়ে একটার বেশি দু'টো কেশর আছে? গণ্ডারের নাকে আছে শৃঙ্গ৷ ওদিকে তার ওজন এক টন৷ এক টন খাবার-দাবার? একবার চেষ্টা করে দেখলে হয় না?
বিজ্ঞাপন
ভিডিও-তে যে ছ'টি সিংহকে দেখা যাচ্ছে, তাদের সকলের বয়স কম, অর্থাৎ তারা উঠতি মস্তান, তায় আবার নিজেদের পাড়ায়, মানে তৃণভূমিতে৷ কিন্তু প্রতিপক্ষ হলো আফ্রিকার একটি প্রাপ্তবয়স্ক গণ্ডার, যার চামড়ায় নখ বসিয়ে ফুটো করা কিংবা গলা কামড়ে ধরার ক্ষমতা এই সিংহশাবকদের নেই৷ চামড়া তো নয়, যেন ট্যাংকের লোহার পাত! গলা কোথায়? আছে তো শুধু গর্দ্দান৷ ঐ পেল্লাই চেহারা নিয়ে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়তে পারে এই নাকে শিং বসানো জীবটি৷ সেই শিং-এর সামনে পড়লে, তার খোঁচা খেলে সিংহজন্ম শেষ হয়ে পঞ্চত্ব পেতে বেশি সময় লাগবে না৷
তবুও সিংহই তো, অথচ এরা সম্ভবত ইহজীবনে গণ্ডার দেখেনি৷ দলের সাথে মিলে বুনো মোষ শিকার করে থাকতে পারে, কিন্তু সে জীবটির ওজন বড়জোর আধ টন৷ অর্থাৎ দু'টো বুনো মোষ জুড়লে একটা গণ্ডার হয়৷ ভাগ্য ভালো যে চোখে ভালো দেখে না৷ তা-ও সিংহরা তার বিশেষ কাছে না এসে – অতিকায় জীবটিকে একটু চটিয়ে দেখছে আর কি!
ওমা, এ যে সত্যিই বদমেজাজি! না বাপু, ক্ষ্যামা দে, গণ্ডার খেতে গিয়ে শেষে কি জানটা যাবে? গণ্ডারও দেখা গেল সিংহদের কেরামতি বুঝে ফেলেছে: যে-ই আন্দাজ করেছে যে, বাপধনদের অতো সাহস নেই, তখনই সে আবার সেই নিরীহ তৃণভোজী জীব৷
শুধু একটা প্রশ্ন থেকে যায়: ঘাস খেয়ে এত গায়ের জোরই বা হয় কী করে, আর বদমেজাজই বা আসে কোথা থেকে? গত তিন বছরে যে এক কোটি একুশ লক্ষ মানুষ এই ভিডিওটি দেখেছেন, তাদের জিগ্যেস করে দেখতে পারেন৷
লেবাননে বাঘ, সিংহদের বাঁচানোর উদ্যোগ
লেবাননে বাঘ-সিংহদের খুবই খারাপ অবস্থা৷ অবস্থা এতই খারাপ যে, পশু অধিকার কর্মীরা বাঘ-সিংহ রক্ষায় মাঠে নেমেছেন৷ অবশেষে সরকারও সাড়া দিচ্ছে৷ তবু যদি ঘরে ঘরে পশুনির্যাতন বন্ধ হয়!
ছবি: Animals Lebanon
সিংহ যেন পোষা বিড়াল!
লেবাননে সিংহদের এখন ঠিক এমন অবস্থা৷ চিড়িয়াখানায় সিংহী বাচ্চা প্রসব করে৷ সেই বাচ্চা কয়েকদিন পরই চলে যায় কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তির ঘরে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুকুর, বিড়াল বা পাখি পোষার চল আছে৷ লেবাননের ধনাঢ্যদের কুকুর-বিড়ালে মন ভরে না, তাই ঘরে সিংহ বা বাঘের ছানা পোষেন তারা৷ বাঘ-সিংহের ছানা নিয়ে এভাবে ছবিও তোলেন অনেকে৷
ছবি: Animals Lebanon/Maglebanon
অসহায় ‘রানি’
ছবির এই প্রাণীটি কিন্তু সিংহী৷ নাম তার ‘কুইন’, অর্থাৎ রানি৷ কিন্তু সিংহ ‘বনের রাজা’ হলে কী হবে, লেবাননে বনের রাজা, বনের রানি – সবারই খুব দুরবস্থা৷ ছবির এই সিংহীর অবস্থা দেখুন৷ খুব ছোটবেলায় তাকে এক চিড়িয়াখানা থেকে কিনে নিয়েছিল একজন৷ শুরুতে একটু আদর-যত্ন পেলেও কয়েকদিন পর এত নিষ্ঠুর আচরণ শুরু হলো যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল রানি৷ শেষমেশ পুলিশ তাকে উদ্ধার করে৷
ছবি: Animals Lebanon
চিড়িয়াখানায় টাকার অভাব?
কেউ কেউ মনে করেন, ব্যয় বহন করার সামর্থ নেই বলেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাঘ, সিংহ বা অন্য কিছু প্রাণীর বাচ্চা বিক্রি করে৷ তবে বেশির ভাগ চিড়িয়াখানা মালিকের মধ্যে দর্শনার্থীদের টিকিটের টাকার চেয়ে পশু বিক্রি করে অল্প সময়ে বেশি আয়ের লোভটাই বেশি৷ সে কারণেই চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহ নানা ঘরের পোষা প্রাণী হয়ে নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে বলে পশু অধিকার কর্মীরা মনে করেন৷
ছবি: DW/M. Jay
এভাবে বাঁচা যায়?
লেবাননের চিড়িয়াখানায় বেশিরভাগ প্রাণীর জন্য ন্যূনতম সুব্যবস্থাও নেই৷ এই হাঁসগুলোর অবস্থা দেখুন৷ কোনো পানির ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য৷
ছবি: DW/M. Jay
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ চিড়িয়াখানা
ছবির এই বাঘটির নাম লাজিজ৷ কয়েকদিন আগে তাকে গাজার এমন এক চিড়িয়াখানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, যেটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ চিড়িয়াখানা’ হিসেবে বর্ণনা করছে সংবাদমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Four Paws
শিশুদের বিনোদন
লেবাননের কোনো কোনো ধনাঢ্য পরিবারের শিশু বাবা-মায়ের কাছে আজকাল বিড়াল-কুকুরের পরিবর্তে বাঘ-সিংহ বা চিড়িয়াখানার অন্য কোনো প্রাণীর ছানা কিনে দেয়ার আবদার করে৷ আব্দার রক্ষার্থে বাবা তা কিনেও দেন৷ নিজের পোষা প্রাণীর সঙ্গে সেল্ফি তুলে স্কুলের বন্ধুদের প্রায়ই সেই সেল্ফি দেখায় শিশুরা৷
ছবি: DW/M. Jay
পশু অধিকার রক্ষায় আন্দোলন
সম্প্রতি লেবাননের পশুদের অধিকার সংরক্ষনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে পশু অধিকার সংস্থা ‘লেবানন অ্যানিমেলস’৷ সংস্থাটি চায় চিড়িয়াখানায় পশু বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করা হোক৷ লেবানন অ্যানিমেলস-এর পরিচালক জ্যাসন মায়ার ডিডাব্লিউকে বললেন, ‘‘চিড়িয়াখানায় পশু বিক্রি হবে এটা একেবারেই ঠিক নয়৷ এটা রোধ করতে হবে৷’’
ছবি: DW/M. Jay
ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার
একটু দেরিতে হলেও সরকারের অবশেষে টনক নড়েছে৷ সম্প্রতি পশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে৷ লেবাননের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানা থেকে পশু পাচার রোধ করতে ইতিমধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পুলিশ৷ শিগগিরই চিড়িয়াখানা থেকে পশু পাচার এবং সর্বত্র পশুনির্যাতন বন্ধ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি৷