হ্যামস্টার, ইঁদুরের একটি প্রজাতি। বিভিন্ন পশুপাখির দোকান থেকে ওই প্রাণির মাধ্যমে করোনা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই তাদের মারা হবে।
বিজ্ঞাপন
দেখতে অনেকটা ধেড়ে ইঁদুরের মতো। নাম হ্যামস্টার। ছোট্ট এই প্রাণির মাধ্যমেই হংকংয়ে করোনা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। যে কারণে প্রায় দুই হাজার হ্যামস্টার মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হংকং প্রশাসন। যদিও পশুপ্রেমী একাধিক সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত একটি পশু বিক্রির দোকান থেকে। সম্প্রতি সেই দোকানের মালিক এবং একাধিক ক্রেতা করোনায় আক্রান্ত হন। উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ওই দোকানের একধিক হ্যামস্টার করোনায় আক্রান্ত। প্রশাসনের বক্তব্য, এর থেকেই স্পষ্ট, পশুর থেকে মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঘটছে। এরপরেই ওই দোকানের সমস্ত ক্রেতাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যারাই ওখান থেকে হ্যামস্টার কিনেছেন, তাদের প্রশাসনের কাছে তা ফেরত দিয়ে যেতে হবে। হ্যামস্টারদের মুখ দিয়ে আদর করা যাবে না। সমস্ত ক্রেতাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
করোনা সংক্রমণ রুখতে ডেনমার্কে কোটি মিংক হত্যা
ডেনমার্কে মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এ কারণে দেশের এক কোটি ৭০ লাখ মিংককে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত৷
ড্যানিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় মৃত মিংকদের সামরিক এলাকায় দাফন করছে৷ মিংক থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সন্দেহে দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ মিংক ধ্বংস করা হচ্ছে৷ তবে এ ধরনের পদক্ষেপের কোন বৈধতা না থাকায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ড্যানিশ সরকার৷
মিংকের পশম বিশ্বের অন্যতম দামী ফ্যাশন-পণ্য৷ বিশ্বের ফ্যাশন দরবারে মিংকের পশমের চাহিদা সবসময়ই বেশি৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনমার্কে করোনা সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ এই প্রাণীটি৷ দেশের সরকার তাই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে৷
সাম্প্রতিককালে এই প্রাণীর মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে বিশেষ ধরনের জিনগত পরিবর্তন, যার ফলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মিংক থেকে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ৷ মিংকের শরীর থেকে পরিবর্তিত রূপের করোনা ভাইরাস যখন মানব শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা মোকাবিলা করা অনেক ওষুধের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: John Randeris/Ritzau Scanpix/REUTERS
খামারগুলোকে নির্দেশ
ডেনমার্কের সব খামারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিংক বাছাই করতে৷ ডেনমার্কের পুলিশ, হোমগার্ডসহ প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যরা মিংক বাছাইয়ের কাজে সহায়তা করছে৷ ডেনমার্কে এই মুহূর্তে অন্তত ২০৭টি খামারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ৷ ছবিতে ডেনমার্কের নেস্তভেদের কাছে হেনরিক নর্ডগার্ড হানসেন অ্যান্ড আন-মোনা কুলসো লারসেন খামারটিতে মৃত মিংকদের জড়ো করছেন খামারিরা৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম
ডেনমার্কে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মিংক আছে৷ দেড় হাজার মিংকপালকের সমবায় সংস্থা ‘কোপেনহাগেন ফার’ থেকেই বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিংক পশম আসে, যার বেশিরভাগই বিক্রি হয় চীন ও হংকঙে৷
ছবি: Mads Claus Rasmussen/Ritzau Scanpix/REUTERS
মিংক নির্মূলে খরচ
মিংকগুলোকে মেরে ফেলতে সরকারের খরচ হবে মোট পাঁচ বিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোনার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৭০০ কোটি)৷ এছাড়া, কর্তৃপক্ষ মিংক পালকদের ক্ষতিপূরণও দেবে বলে জানিয়েছে৷
অন্য দোকান থেকেও যারা হ্যামস্টার কিনেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। প্রশাসন ঠিক করেছে, করোনার সংক্রমণ বন্ধ করতে দুই হাজার হ্যামস্টারকে মেরে ফেলা হবে। তবে তাদের মানবিক প্রক্রিয়ায় মারা হবে। যাতে কষ্ট কম হয়।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষকদের অবশ্য বক্তব্য, প্রাণির মাধ্যমে মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ঘটছে, এমন তথ্য এখনো তাদের হাতে আসেনি। হংকংয়ের দাবির বৈজ্ঞানিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বস্তুত, পশুপ্রেমী সংগঠনগুলির দাবি, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়া কেন এত প্রাণিহত্যা হবে? তাদের আরো প্রশ্ন, মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা হয়, প্রাণি আক্রান্ত হলে তাদের মেরে ফেলার অধিকার কে দিয়েছে?