‘মাইন কাম্ফ' বইটি হিটালারের প্রথম আত্মজীবনী হিসেবে বহুল পরিচিত৷ তবে একজন ইতিহাসবিদ বলছেন, হিটলারের প্রথম আত্মজীবনী নিজেই লিখেছিলেন, তবে অন্য নামে৷ সেখানে নিজেকে নাকি জার্মানির ত্রাণকর্তা হিসেবে তুলে ধরেছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
১৯২৩ সালে ‘অ্যাডলফ হিটলার: তার জীবন এবং কথা' বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়৷ বইটিতে ভিক্টর ফন কোয়েরবের নামটি স্বাক্ষরিত ছিল৷ যদিও হিটলার নিজেই ছিলেন এই বইয়ের লেখক৷ এমনটাই বলছেন ইতিহাসবিদ টোমাস ভেবের৷ স্কটল্যান্ডের আবেরডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক দাবি করছেন, তিনি এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন যার ফলে এ বিষয়ে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত৷ ৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তিনি বিষয়টি জানান৷
মাইন কাম্ফ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৫ থেকে ১৯২৬-এর মাঝামাঝি সময়ে৷ বইটিকে হিটলারের প্রথম আত্মজীবনী বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে৷
টোমাস ভেবার বললেন, ‘‘হিটলার কীভাবে নাৎসি হলেন এ সম্পর্কে একটি বই লিখতে গিয়ে গবেষণা করছিলাম, তখনই বিষয়টি উদঘাটন করি৷'' ফন কোয়েবারের ব্যক্তিগত কাগজপত্র রাখা আছে য়োহানেসব্যুর্গে, সেখানে টোমাস বেশ কিছু স্বাক্ষর করা নথিপত্র পান, যা থেকে তিনি বুঝতে পারেন, আসলে ভিক্টর ফন কোয়েবার ঐ বইটি লিখেননি৷
অধ্যাপক টোমাস দাবি করেছেন, ‘‘কোয়েবারের হাতে লেখা কিছু কাগজপত্র পেয়েছি, যা থেকে খুব সহজেই প্রমাণ করা যাবে যে ঐ জীবনীটি হিটলার নিজে লিখেছিলেন৷''
টোমাসের মতে, আত্মপ্রচারের জন্য হিটলার কত যে কূট কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন, এ ঘটনা থেকেও তার কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়৷ জার্মানির রক্ষণশীল সমাজে নিজের চিন্তাভাবনার বিস্ফোরণ ঘটাতে এই বইয়ের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি, যেখানে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন জার্মানির ত্রাণকর্তা হিসেবে৷ আত্মজীবনীটিতে হিটলারর কথা ও বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল৷ যখন এটি প্রকাশ হয়, তখন হিটলার বুঝতে পারেন, নিজে যে এটা লিখেছেন সেটা না জানানোই ভালো এবং এ কারণে বইয়ে ভিক্টর ফন কোয়েরবেরকে স্বাক্ষর করতে বলেছিলেন তিনি৷
হেরোইন, কোকেনের উদ্ভাবক কে? জার্মানরা!
নিষিদ্ধ কয়েকটি ওষুধ উদ্ভাবনের সঙ্গে জার্মানদের নাম জড়িয়ে আছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেগুলোর কথা৷
প্যার্ভিটিন
এটি খেলে মানুষের মনে ভয় ঢুকতে পারে না৷ এছাড়া মানুষের মধ্যে মনোযোগের ক্ষমতাও বাড়ায় প্যার্ভিটিন৷ জাপানি এক কেমিস্ট তরল আকারে এটি তৈরি করলেও, জার্মানির টেমলার কোম্পানি ওষুধটির মান উন্নয়ন করে ১৯৩৭ সালে এর পেটেন্ট নেয়৷ পরের বছর থেকে বিক্রি শুরু হয়৷ এখনও তা বলবৎ আছে, তবে অবৈধভাবে এবং অন্য নামে, ক্রিস্টাস মেথ৷
‘মিরাকল পিল’
প্যার্ভিটিনের গুণের কারণে নাৎসি সেনাদের কাছে এটি ‘মিরাকল পিল’ নামে পরিচিত ছিল৷ ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডে আর পরের বছর ফ্রান্সে নাৎসিরা যে সৈন্য পাঠিয়েছিল, তাদেরকে প্যার্ভিটিন দেয়া হয়েছিল৷ জানা যায়, ফ্রান্স দখলের সময় নাৎসি শাসক সৈন্যদের প্রায় ৩৫ মিলিয়ন প্যার্ভিটিন ট্যাবলেট দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa-Bildarchiv
হিটলার নিজেও?
তিনিও প্যার্ভিটিনে আসক্ত ছিলে কিনা, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক আছে৷ হিটলারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক টেও মোরেল-এর কাগজপত্রে একটি ওষুধের পাশে ‘X’ চিহ্নের উপস্থিতি এই বিতর্কের কারণ৷ তবে এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও হিটলার যে নিয়মিত শক্তিশালী ওষুধ সেবন করতেন, সেটা জানা গেছে৷
ছবি: picture alliance/Mary Evans Picture Library
হেরোইন
ঊনিশ শতকের শেষ দিকে জার্মানির বিশ্বখ্যাত ওষুধ কোম্পানি বায়ার-এর একটি বিজ্ঞাপনের স্লোগান ছিল, ‘‘কাশি নেই, ধন্যবাদ হেরোইনকে৷’’ বুঝতেই পারছেন চিকিৎসকরা সেই সময় রোগীদের এটি খাওয়ার পরামর্শ দিতেন৷ মৃগী রোগ, অ্যাজমা, সিজোফ্রেনিয়া ও হৃদরোগের চিকিৎসায় শিশু ও বয়স্কদের হেরোইন দেয়া হতো৷ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শুধুমাত্র কোষ্ঠকাঠিন্যতার কথা বলতো বায়ার৷
হেরোইনের উদ্ভাবক
ছবির এই মানুষটির নাম ফেলিক্স হোফমান৷ হেরোইনের উদ্ভাবক তিনি৷ তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় বোধ হয়, তিনি অ্যাসপিরিন-এর জনক৷ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কিন্তু জার্মানিতে হেরোইন সেবন বৈধ ছিল৷
কোকেন
দক্ষিণ অ্যামেরিকার কোকা পাতায় ক্ষারজাতীয় একটি রাসায়নিক উপাদান খুঁজে পেয়েছিলেন জার্মান কেমিস্ট আলবার্ট নিমান৷ এর নাম তিনি দিয়েছিলেন কোকেন৷ সংক্ষেপে জার্মানরা কোকেনকে বলে ‘কোক’৷ তাই ইউরোপে কেউ আপনাকে কোক সেবন করেন কিনা জানতে চাইলে কোকাকোলা নয়, কোকেনের কথা বলছে বলে বুঝতে হবে কিন্তু!
ছবি: Merck Corporate History
প্রফুল্লভাব এনে দেয়?
অস্ট্রিয়ান নিউরোলজিস্ট ও সাইকোঅ্যানালিসিস-এর জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড গবেষণার উদ্দেশ্যে কোকেন সেবন করেছিলেন৷ এরপর তিনি বলেছিলেন, কোকেন ক্ষতিকারক নয়৷ কোকেন খেলে মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে, এমনও বলেছিলেন তিনি৷ অবশ্য কোকেন নিয়ে ফ্রয়েডের এই ইতিবাচক ভাব বেশি দিন থাকেনি৷ কারণ তাঁর এক বন্ধু অতিমাত্রায় কোকেন নেয়ায় প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: Hans Casparius/Hulton Archive/Getty Images
এক্সটাসি
মার্কিন কেমিস্ট আলেক্সান্ডার শুলগিন-কে ‘পার্টি ড্রাগ’ বলে পরিচিত এক্সটাসি-র উদ্ভাবক মনে করা হলেও, জার্মান কোম্পানি ম্যার্ক সেই ১৯১২ সালেই এটি উদ্ভাবন করেছিল এবং ‘৩,৪-মিথাইলেন-ডিঅক্সি-মেথ-অ্যাম্ফেটামিন’ (এমডিএমএ) নামে বর্ণহীন এক তেলের পেটেন্ট নিয়েছিল৷ অবশ্য সেই সময় কেমিস্টরা মনে করেছিলেন যে, এর কোনো বাণিজ্যিক মূল্য নেই৷
ছবি: picture-alliance/epa/Barbara Walton
8 ছবি1 | 8
তবে অধ্যাপক টোমাস যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তা এখনই সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করতে চাননি, কেননা, নভেম্বরে ডাচ ভাষায় তিনি হিটলারকে নিয়ে যে বইটি প্রকাশ করতে চলেছেন তাতেই থাকবে সব তথ্য৷ বইটির নাম ‘হিটলার্স মেটামরফস'৷ আগামী বছর যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হবে বইটি৷