প্রায় ছয়ঘণ্টা সম্পূর্ণ অকেজো থাকার পরে ফের কাজ করতে শুরু করেছে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ। তবে সম্পূর্ণ ঠিক এখনো হয়নি।
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় সময় সোমবার রাতে (জিএমটি বিকেল চারটে) আচমকাই অকেজো হয়ে যায় ফেসবুকের তিনটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম। গোটা পৃথিবীর প্রায় তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন নেটিজেন যার জেরে প্রবল সমস্যায় পড়েন। ভারতীয় সময় ভোররাতে ফের ধীরে ধীরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ কাজ করতে শুরু করে। তবে ব্যবহারকারীদের বক্তব্য এখনো পুরোপুরি ছন্দে ফেরেনি সাইট দুইটি।
ফেসবুক যখন সহিংসতার উৎস
বাংলাদেশে মাঝেমাঝেই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে৷ কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাধ্যম৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকম কয়েকটি ঘটনার কথা৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুক বার্তার জেরে তাণ্ডব
ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম এবং মহানবীকে নিয়ে কথিত কটূক্তির জের ধরে বাংলাদেশে একাধিকবার সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক ম্যাসেজের জের ধরে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সৃষ্ট তাণ্ডবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন৷ সেই যুবক আগেই থানায় তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়ার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন৷ পুলিশও জানিয়েছে, সেই যুবকের একাউন্টটি হ্যাকড হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24
ফেসবুকে সমালোচনা, পিটিয়ে হত্যা
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ আর তাতেই ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েক সদস্য ২০১৯ সালের সাত অক্টোবর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে৷ আবরার হত্যাকাণ্ডের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট৷ ইতোমধ্যে অবশ্য আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
পদ্মা ‘সেতুর জন্য মাথার’ গুজব
২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে এক গুজব ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদাকে নিয়ে গুজব, নিষিদ্ধ ফেসবুক একাউন্ট
বাংলাদেশের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে একাধিক ভুয়া খবর ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল৷ নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে ফেসবুক সেসব খবরের প্রচার রোধে একাধিক একাউন্ট এবং পাতা নিষিদ্ধ করে৷ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এসব গুজব ছড়াচ্ছিল বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: Bdnews24.com
শিক্ষার্থী ধর্ষণের গুজবে সংঘর্ষ
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ঢাকার জিগাতলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় সেখানে শিক্ষার্থী নিহত এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ পরবর্তীতে অবশ্য প্রাণহানি বা গুজবের কোন সত্যতা মেলেনি৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
রংপুরে দাঙ্গা
ইসলামের মহানবীকে নিয়ে ফেসবুকে এক হিন্দু যুবকের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের দশ নভেম্বরের সেই ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুকে ছবি, তাণ্ডব
এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে উস্কানিমূলক ছবি পোস্ট করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ত্রিশ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তাণ্ডব চালায় একদল বিক্ষুব্ধ মুসলমান৷ সেসময় সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Khukon Singha
ফেসবুকে গুজব, বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে ১৯টি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর করে উত্তেজিত মুসলমানরা৷ উত্তম কুমার নামের এক তরুণ ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন এমন গুজবের ভিত্তিতে সেই হামলা চালানো হয়েছিল৷ তবে, পরবর্তীতে সেই তরুণের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
কী ঘটেছিল
ঠিক কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বিকল হয়ে গেল, তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে অ্যাপগুলি অকেজো হওয়ার পরে তারা ব্যবহারকারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপে তারা মেসেজ পাঠিয়ে বলেছেন, কারিগরী সমস্যার কারণে অ্যাপগুলি বিকল হয়েছে। দ্রুত তা আবার কাজ করতে শুরু করবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষেরই অংশ হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম। এর আগেও একবার এভাবেই বসে গিয়েছিল তাদের প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু দ্রুত তা ছন্দে ফিরে এসেছিল। এবারের ঘটনা ঐতিহাসিক। কর্তৃপক্ষ কোনো বয়ান না দিলেও, ফেসবুকের কর্মীরা নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ ভুলের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। ডোমেনে ভুল হওয়ার জন্যই গোটা সার্ভার ক্র্যাশ করেছে। কেউ কেউ বলছেন, রাউটিং সিস্টেমের গোলমাল থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করা হয়েছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনার পরে ফেসবুকের কারিগরী প্রধান এই মেসেজ পাঠিয়েছেন।
ঘটনার পরে শেয়ারবাজারে ফেসবুকের দর পড়ে যায়। প্রতিদিন ফেসবুক ব্যবহার করেন প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ। সোমবার রাতে সেই ব্যবহারও আচমকা চার দশমিক নয় শতাংশ নেমে যায়। এর ফলে ফেসবুকের বিপুল ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি বিশেষজ্ঞদের। প্রতি ঘণ্টায় ফেসবুকের আয় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ডলার। ছয় ঘণ্টায় তাদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে।
তবে কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হার্ভার্ডের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির ডিরেক্টর জোনাথান জিট্রেইন বলেছেন, ''গাড়ির ভিতর চাবি রেখে গাড়ি বাইরে থেকে লক করে দিলে যা হয়, ফেসবুকের সার্ভারেও তাই হয়েছে।''
অন্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা
রোববার রাত থেকেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বিড়ম্বনার মধ্যে। ফেসবুক সংস্থাকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন বলে দাবি করে এক ব্যক্তি রোববার রাতে একটি টেলিভিশন শো-তে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, একেবারে গোড়ার দিকে ফেসবুক বুঝেছিল যে, তাদের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে হেটস্পিচ ছড়ানো হবে। ভুল তথ্য ছড়ানো হবে। কিন্তু শুধুমাত্র লাভের আশায় সেই বিষয়গুলিকে তখন আমল দেওয়া হয়নি। আজ তার ফল ভুগছে গোটা সমাজ।