কোন ছবি কবে আঁকা হয়েছিল, শিল্প বিশেষজ্ঞরাই সাধারণত সেই খবর রাখেন৷ ইটালির এক শিল্পী তাঁর ছবি সৃষ্টির সময়কাল অভিনব উপায়ে ছবির মধ্যেই ধরে রাখেন৷ ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে সৃষ্টির বিবর্তন চোখে পড়ে৷
বিজ্ঞাপন
শিল্পী হিসেবে ফেডেরিকো পিয়েত্রেলার তুলির প্রয়োজন হয় না৷ তিনি নিজের সৃষ্টিকর্মের উপর ডেট স্ট্যাম্প বা তারিখের সিলমোহর লাগান৷ তাতে অনবদ্যভাবে সৃষ্টির দিন ফুটে ওঠে৷ ইটালির এই শিল্পী পর্দার উপর কয়েক হাজার বার ছাপ মারেন, যেগুলির সমন্বয়ে একটি শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয়৷ তাঁর মতে, সময় ধরে রাখার জন্য এর চেয়ে সহজ সরঞ্জাম আর হয় না৷
রোমে ‘এক্স এলেত্রোফোনিকা' নামের গ্যালারিতে এই শিল্পী বিষয় হিসেবে সময়ের উপলব্ধি তুলে ধরছেন৷ একটিছবি সৃষ্টি করতে তাঁর দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে৷ ডেট স্ট্যাম্পে কাজের প্রতিটি দিনের তারিখ বেছে নেওয়া হয়৷ ফলে ছবিটি ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলে কাজের দিনগুলি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷ ফেডেরিকো বলেন, ‘‘যেমন এই ছবিটি সৃষ্টি করতে আমার প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল৷ ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ১লা অক্টোবর৷ সেই তারিখগুলি এখানে দেখাও যাচ্ছে৷ যেমন ১লা অক্টোবর কাজের শেষ দিন ছিল৷''
প্রায় ২০ বছর ধরে ফেডেরিকো তাঁর সৃষ্টিকর্মের জন্য তারিখ লেখা ডেট স্ট্যাম্প ব্যবহার করে চলেছেন৷ গোটা ইউরোপে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে সেগুলি দেখানো হয়েছে৷ রোম শহরেই তাঁর জন্ম, সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন৷ শহরের ফাইন আর্টস অ্যাকাডেমিতে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ প্রাচীন এই শহরে তিনি অফুরন্ত মোটিফ খুঁজে পান৷ শহুরে পথঘাট থেকে শুরু করে প্রাচীন স্থাপত্য, এমনকি শহরের মধ্যে প্রকৃতির ছোঁয়াও পাওয়া যায়৷ মোবাইল ফোনে ছবি তুলে সেগুলিকে সৃষ্টিকর্মের টেমপ্লেট হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি৷ ফেডেরিকো পিয়েত্রেলা বলেন, ‘‘এটা পর্যটকদের প্রিয় এক ভিউয়িং প্ল্যাটফর্ম৷ নিজের শহরে পর্যটক নই বলে আমি শহরের উপরে মেঘের রাশিকে মোটিফ হিসেবে খুঁজে নিয়েছি৷ উপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নতুন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরতে চাই৷''
তারিখের সিলমোহর দিয়ে চিত্রকর্ম
04:16
শেষে ফেডেরিকো কম্পিউটারে ছবির মধ্যে রদবদল ঘটিয়ে স্ট্যাম্পচিত্রের জন্য আদর্শ কনট্রাস্ট ও রংয়ের তাপমাত্রা স্থির করেন৷ তাঁর শিল্প দর্শকদের ‘সময়'-এর সংজ্ঞা সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে, এমনটাই তিনি চান৷ ‘মাই টাইম ইজ ইয়োর টাইম' নামের প্রদর্শনীতেও সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷
নিজের শহরে ফেডেরিকো পিয়েত্রেলার প্রদর্শনী মোটেই এক থাকে না৷ তিনি সেখানে ক্রমাগত নতুন ছবি নিয়ে কাজ করেন৷ দর্শকরা তাঁর সঙ্গে সময় ভাগ করে নিতে পারেন৷ ফেডেরিকো বলেন, ‘‘হয়তো একশো বছর পর কোনো মানুষ আমার কাজের এই তারিখগুলি পড়বেন৷ তখন তিনি অতীত সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন৷ এমনটা ভাবতেই ভালো লাগে৷''
তারিখের মতো সাধারণ তথ্যকে ফেডেরিকো পিয়েত্রেলা কালজয়ী শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করেন৷
শেলহাস/ক্রেচমার/এসবি
মেয়েদের যৌনাঙ্গ এঁকে শাস্তির মুখে
যোনির ছবি এবং নারীদের দেহ নিয়ে কার্টুন এঁকে প্রচার করায় জেল হতে পারে রাশিয়ার এলজিবিটি অধিকার কর্মী এবং শিল্পী ইউলিয়া সভেৎকোভার৷ অথচ যোনির জাদুঘরও আছে লন্ডনে৷ বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/V. Sharifulin
রাশিয়ায় তোলপাড়
লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার, অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন ২৭ বছর বয়সি ইউলিয়া সভেৎকোভা৷ তাকে নিয়ে বিতর্ক আগেও হয়েছে৷ এর আগে চার মাস গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে তাকে৷ তবে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগে এবার দুই থেকে ছয় বছরের জেল হতে পারে তার৷
ছবি: Colourbox/Barabas Attila
যোনির ছবি এঁকে বিপদে
ভিকনটাক্টে (ভিকে) নামের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভ্যাজাইনা মনোলগস’ নামের একটি গ্রুপ খুলে সেখানে নিজের এবং অন্যদের আঁকা যোনির ছবি প্রকাশ করেন ইউলিয়া৷ এ কারণে পর্নোগ্রাফি প্রচারের অভিযোগে তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ৷ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় মস্কো থেকে বেরোতে পারছেন না ইউলিয়া ৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুই থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার৷
ছবি: Yulia Tsvetkova
কার্টুনে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ এবং বিপত্তি
কিছু কার্টুনও প্রকাশ করেছেন ইউলিয়া৷ কোনো কার্টুনের ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘‘প্রকৃত নারীদের দেহে চুল থাকে এবং এটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ ’’ আবার কোনো কোনো কার্টুনের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছেন, ‘‘প্রকৃত নারীদের দেহে পেশি থাকে এবং এটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ ’’ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যোনি, নারী দেহের অন্যান্য অঙ্গ এবং নারীর অঙ্গের মতো দেখতে নানা জিনিসের ছবি পাঠাচ্ছেন অনেকে৷
ছবি: Yulia Tsvetkova
লন্ডন এখানে আলাদা
রাশিয়ায় যোনির ছবি প্র্রকাশ করে ইউলিয়া শাস্তির আশঙ্কায় পড়লেও ব্রিটেনে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ ‘ভ্যাজাইনা মিউজিয়াম’, অর্থাৎ যোনি নিয়ে আস্ত একটা জাদুঘরই আছে লন্ডনে৷ আইসল্যান্ডে পুরুষদের লিঙ্গের একটা জাদুঘর থাকলেও বিশ্বের কোথাও যোনির জাদুঘর নেই জেনে বিস্মিত হয়েছিলেন ফ্লোরেন্স শেষ্টার (ওপরের ছবি)৷ তারপর বিশ্বে প্রথম যোনির জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে সফলও হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Nicole Rixon 2019
ইউলিয়ার অতীত
যোনির ছবি প্রকাশ করে সাড়া জাগানোর আগে কমসমোলস্ক-অন-আমুর শহরে একটা নাটকের দল চালাতেন ইউলিয়া৷ এর পাশাপাশি নারী এবং এলজিবিটির অধিকার নিয়েও কাজ করতেন৷ আর নিতে যৌনশিক্ষার ক্লাস৷ অথচ রাশিয়ার স্কুলে যৌনশিক্ষা দেয়ার নিয়ম নেই৷ এ কারণে গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তাকে৷ ওপরে ইউলিয়ার আঁকা একটি কার্টুন৷
ছবি: Yulia Tsvetkova
মানবাধিকার সংস্থার সমর্থন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং রাশিয়া বেসরকারি সংস্থা মেমোরিয়াল মনে করে ইউলিয়া সভেৎকোভা একজন রাজনৈতিক বন্দি৷ প্রায় ২৫ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ইউলিয়ার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা৷ রাশিয়ার গণমাধ্যমের একটি অংশও ইউলিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
মুক্তির দাবি
ইউলিয়ার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ এবং তার মুক্তির দাবিতে মস্কোতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে ৷ সেখান থেকে অন্তত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷