ছবির মাধ্যমে গরিব মানুষের সংগ্রাম তুলে ধরেন ভারতের শক্তিভেল
২৫ জুলাই ২০২৪ঐ জনগোষ্ঠীর যুবকেরাই ছবিগুলো তুলেছিলেন৷ এক আলোকচিত্রীর ছবিতে আবর্জনার স্তূপের পাশে বাস করা মানুষদের জীবন উঠে এসেছিল৷
প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ব্যাসাই তোলাড়গাল নামের একটি সংগঠন৷ উত্তর চেন্নাইয়ের ব্যাসারপাডি এলাকার স্বেচ্ছাসেবী যুবকেরা এটি গড়ে তোলেন৷ এই সংগঠনের আট আলোকচিত্রীর একজন শক্তিভেল৷
তিনি বলেন, ‘‘এই গল্পগুলো আমাদের বলা উচিত, কারণ আমরাই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷''
আলোকচিত্রীদের তত্ত্বাবধান করেছেন পালানি কুমার৷ তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় যারা আছেন তারা আমাদের সবসময় একই গল্প বলেন, তাই না? আর সাধারণ মানুষের ক্ষমতা নেই, কণ্ঠও নেই৷ এই উদ্যোগটা একটা প্রশ্নের শুরু: যখন মানুষ তার নিজের ভাষায় গল্প বলা শুরু করবে তখন বিষয়টা দেখতে কেমন হবে?''
আলোকচিত্রীদের লক্ষ্য ছিল: নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে উত্তর চেন্নাইয়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন তুলে ধরা৷
শক্তিভেল তার জীবনে প্রভাব ফেলা একটি ঘটনার কথা স্মরণ করেন৷ ‘‘আমি অটোরিকশায় ছিলাম৷ একজন যাত্রী হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, ‘গন্ধটা কীসের'? এরপর তিনি জানলেন যে, তারা আমার এলাকা ব্যাসারপাডিতে আছেন৷ তখন তিনি বললেন, ‘ও আচ্ছা, সেজন্য৷' আরও বললেন, এখানকার মশারা যদি মানুষকে কামড়ায় তাহলে মানুষ নয়, মশারাই মরে যাবে৷ তিনি বোঝাতে চাইলেন, আমরা নোংরা ও বিষাক্ত৷ এই কথায় আমার খুব আঘাত লেগেছিল৷ কারণ, আমরাওতো মানুষ৷ কিন্তু তিনি এমন ভাব করেছিলেন যেন আমরা অন্যরকম,'' বলেন তিনি৷
এই ঘটনার পর শক্তিভেল কোডুনগায়ুর আবর্জনার স্তূপ নিয়ে ফটো সিরিজ করার কথা ভাবেন৷ তিনি যেখানে থাকেন সেই ব্যাসারপাডি থেকে স্তূপটির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার৷
শহরের দুটি আবর্জনা স্তূপের একটি কোডুনগায়ুর৷ প্রায় ১৯০টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা নিয়ে অবস্থিত ঐ স্তূপে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ময়লা ফেলা হচ্ছে৷ শক্তিভেল বলেন, ‘‘আমার ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে৷ ট্রাকে করে ময়লা ফেলা হচ্ছিল৷ সেখানে একটা অর্ধেক ভরা পানির বোতল ছিল৷ একজন ময়লাকুড়ানি বোতলটা খুলে পানি পান করেছিল! আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি কেন সেখান থেকে পানি পান করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ময়লাটা বাইরে, কিন্তু ভেতরের পানিটা ভালো৷' মানুষ বলে, সময় বদলে গেছে৷ কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, এখনও ঐ ময়লাকুড়ানির মতো মানুষেরা আছেন যাদের বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়৷''
পালানি কুমার বলেন, ‘‘আমার মনে হয় কোডুনগায়ুর আবর্জনার স্তূপ নিয়ে শক্তিভেলের কাজটা গুরুত্বপূর্ণ৷ কোনো বিদেশি এসে সেখানকার ছবি তুললেও তিনি কখনও মানুষের গল্পটা জানতে পারবেন না৷ ঐ এলাকার মানুষের জীবন কেমন? তারা কীভাবে বাঁচেন? কয়টা প্রজন্ম ধরে তারা সেখানে আছেন? বিদেশিরা শুধু ছবি তুলে চলে যাবেন৷ কিন্তু শক্তিভেল এরপরেও ঐ মানুষদের সহায়তা করবেন- যেমন বন্যার সময় তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করবেন৷ আমার মনে হয়, এই যে বেশি কিছু করাটা সেটা, এই প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷''
আবর্জনার স্তূপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পরিবারগুলোর ছবি তুলে শক্তিভেল পরিবেশ ও সামাজিক অবিচার- এই দুটো বিষয়ই তুলে ধরেছেন৷ উত্তর চেন্নাইয়ে কয়েক প্রজন্ম ধরে যে বৈষম্য হচ্ছে, তাও প্রকাশ করেছেন৷
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট বেনিশা উত্তর চেন্নাইয়ে বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে কাজ করেছেন৷ তিনি বলেন, শহরের এই অংশটায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়া সেখানে এমন সব কারখানা অবস্থিত যেগুলো থেকে অনেক বেশি দূষণ ছড়ায়৷ দক্ষিণ চেন্নাইয়ে এ ধরনের কারখানা নেই৷ বেনিশা বলেন, ‘‘প্রকৃত সত্যটা হলো, আমরা উত্তর চেন্নাইয়ের সম্পদ শোষণ করছি এবং আমাদের সমৃদ্ধির জন্য তাদের সম্পদ আহরণ করছি৷ আমাদের যা কিছু দরকার, আমরা সেখান থেকে পাই৷ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়াম পণ্য৷ এমনকি দক্ষ শ্রমিকরাও উত্তর চেন্নাইয়ের৷''
শক্তিভেলের মতো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর যুবকদের হাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক ও পরিবেশের নানা ইস্যু তুলে ধরা সম্ভব৷
অপর্ণা গণেশন/জেডএইচ