টাইমে টেরমাট নেদারল্যান্ডসের শিল্পী, ছবি-আঁকিয়ে৷ মজার ব্যাপার হলো, তাঁর সেই ছবি আঁকা নিয়ে তিনি যে তিন মিনিটের ভিডিওটি করেছেন, অনলাইনে তা-তে ক্লিক পড়েছে দশ কোটি বার!
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
যে ভিডিওতে দশ কোটি ক্লিক!
02:53
This browser does not support the video element.
তিন মিনিটে এক হাজার ফটো৷ ওলন্দাজ চিত্রশিল্পী টাইমে টেরমাট তাঁর ‘‘আই পেইন্ট'' বা ‘আমি ছবি আঁকি' শর্ট ফিল্মটি তৈরি করার জন্য প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করেছেন৷ টেরমাট বলেন, ‘‘অনেকে আমার কাছে জানতে চান, আমি কী করি বা আমার পেশা কী৷ আমি বোঝানোর চেষ্টা করি যে, আমি ছবি আঁকি৷ অন্যদের এ সব প্রশ্ন থেকেই আমার মাথায় ভিডিও তৈরির পরিকল্পনাটা আসে৷ মানে কথার বদলে ভিডিও ছবি দিয়ে বোঝাবো যে, আমি ছবি আঁকি৷ এভাবেই ব্যাপারটা শুরু হয়৷''
২০১২ সালে ‘আই পেইন্ট' ছবিটি অনলাইনে আপলোড করেন তিনি৷ স্বল্পসময়ের মধ্যে লাখ লাখ ক্লিক পড়ে, ভিডিওটা হয়ে ওঠে ভাইরাল হিট৷ টাইম-ল্যাপ্স পদ্ধতিতে একক ছবিগুলো জুড়ে ক্লিপ৷ টাইমে টেরমাট রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে ছবিগুলো তুলেছেন ও পরে জোড়া দিয়েছেন৷ কোনো ডিজিটাল কারিকুরি ছাড়াই, শুধুমাত্র আকৃতির উপর নির্ভর করে তিনি তাঁর এফেক্টগুলো সৃষ্টি করেন৷
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷
ছবি: Washed Ashore
7 ছবি1 | 7
‘‘আই পেইন্ট'' ভিডিওটি প্রায় দশ কোটি বার ক্লিক করা হয়েছে৷ তবে এ ধরনের সময়সাপেক্ষ বা জটিল প্রোডাকশন তিনি আর করেননি৷ অপরদিকে চিত্রশিল্পী হওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত৷ টেরমাট জানালেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতাম৷ পরে যখন ডিজাইন অ্যাকাডেমিতে যোগ দিই, তখন এক সতীর্থ আমাকে আঁকার চ্যালেঞ্জ দেন৷ বলেন, ‘তুমি ভালো আঁকতে পারো; আমি ভালো রং করতে পারি৷' আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি আর সেই প্রথম তেল রং দিয়ে একটা ছবি আঁকি৷ দারুণ লাগে! পরদিন আরো একটা ছবি, তার পরদিন আরো একটা৷ এক সপ্তাহ পরে অ্যাকাডেমি ছেড়ে বাড়িতে ফিরে চিত্রশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি৷'' টাইমে টেরমাট-র ছবিগুলিতে সারিয়ালিজম বা পরাবাস্তববাদের ছোঁয়াচ আছে৷ নানা ছোট ছোট খুঁটিনাটি মিলিয়ে ছবি৷ কোনো কোনো ছবি আঁকতে এক মাস সময় লেগে যায়, আবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেও ছবিব আঁকা হতে পারে৷ সব ছবিতেই একটা গল্প আছে, তবে তা চোখে পড়া চাই৷
ফ্রান্সিসকা ভার্টেনব্যার্গ/এসি
বিখ্যাতরা ছোটবেলায় যেমন আঁকতেন
আজ তাঁরা বিখ্যাত৷ কিন্তু ছোটবেলায় কেমন আঁকতেন তাঁরা? তাঁদের সেসময়কার কাজেকর্মে কি বোঝা গিয়েছিল যে, তাঁদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল৷ ছবিঘরে এই বিষয়টাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
ইয়োনাথান মেসে
ছয় বছর বয়সে এই ছবিটি এঁকেছিলেন জার্মান শিল্পী ইয়োনাথান মেসে৷ এখন তাঁর বয়স ৪৪৷ শিশু অবস্থায় যিনি ললিপপ আর লণ্ঠনের ছবি এঁকেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেন৷ মেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর শিল্পকর্মে নাৎসি প্রতীকের উপস্থিতি ছিল৷ এজন্য তাঁকে আদালতেরও মুখোমুখি হতে হয়৷ অবশ্য পরে সেটা খারিজ হয়ে যায়৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
কাটিয়া স্ট্রুনৎস
জার্মানির কাটিয়া স্ট্রুনৎস ১২ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে জঙ্গলের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ একপাশে হাতির পিঠে টারজান আর অন্যপাশে বাঘকে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে গাছগুলোতে তিনি বেশ রংয়ের ব্যবহার করেছেন৷ অবশ্য স্ট্রুনৎসের এখনকার তৈরি ভাস্কর্যগুলোতে রংয়ের ব্যবহার কমে এসেছে৷
ছবি: Courtesy Katja Strunz
টাল আর
যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়ার কারণেই হয়ত শিল্পী টাল আর-এর ছোটবেলায় আঁকা এই ছবিতে সশস্ত্র মানুষ, ট্যাংক আর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির একটি আর্ট অ্যাকাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Courtesy: TAL R / Copyright Paradis
আক্সেল গাইস
বর্তমানে জার্মানির অন্যতম নামকরা শিল্পী আক্সেল গাইস৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে আঁকা তাঁর এই ছবিটি ভালো করে দেখুন৷ কুকুরের চুল কাটছেন একজন নাপিত৷ আর ওদিকে আয়নায় কুকুরের মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ মনে আছেতো, ছবিটা কিন্তু এঁকেছেন ছয় বছরের একটা ছেলে!
ছবি: Courtesy Axel Geis
উভে হেনেকেন
ছবিটি যখন এঁকেছিলেন তখন উভে হেনেকেনের বয়স আট৷ তিনি হতে চেয়েছিলেন নৃতত্ববিদ৷ কিন্তু খেয়াল করে দেখুন ছবির এই মেয়েটির দুই কান থেকে গাছ বের হচ্ছে, অর্থাৎ তিনি যে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন এটা তার প্রমাণ৷ হেনেকেনের এখনকার ছবিগুলোতেও সেই ফ্যান্টাসি জগৎ আর রূপকথারই পরিচয় পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Uwe Henneken and Galerie Giselal Capitain, Cologne
নোর্বার্ট বিস্কি
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সাত লবছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে বিস্কি ‘ফ্রেস্কো’ (ভেজা প্লাস্টারে জল রংয়ের ব্যবহার) আঁকেন, যেগুলোতে কিশোরদের জীবনের গল্প ফুটে ওঠে৷
ছবি: VG Bild-Kunst, Bonn, Courtesy Norbert Bisky
ফিয়া লেভান্ডোভস্কি
গ্রিম ভাইদের জনপ্রিয় রূপকথাগুলোর অন্যতম ‘লিটল রেড রাইডিং হুড’৷ মাত্র চার বছর বয়সে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ফিয়া লেভান্ডোভস্কি৷ বর্তমানে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Via Lewandowsky, Copyright VG Bild-Kunst, Bonn 2014