নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলার পর অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্দার্ন৷ করোনা সংকটেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করেছিল এক সন্ত্রাসী৷ ইসলামবিদ্বেষ ছড়াতে চালানো সেই হামলার বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন জাসিন্ডা৷ আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে, হিজাব পরে মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করে হয়ে উঠেছিলেন বিশ্ব নেতৃত্বের আদর্শ৷
বিশ্ব নেতৃত্বের আদর্শ এখন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
জাসিন্ডা আর্ডার্ন৷ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে তিনি এখন পরিণত হয়েছেন বিশ্বকে শান্তির পথে নেতৃত্ব দেয়ার দূত হিসেবে৷ তার উত্থানের গল্প থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
যোগাযোগের ছাত্রী
১৯৮০ সালে জন্ম নেয়া আর্ডার্নের বেড়ে ওঠা মুরুপাড়া নামে নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসী অধ্যুষিত একটি ছোট্ট শহরে৷ যেখানে শিশুদের পায়ে দেয়ার মতো জুতা ছিল না, এমনকি দুপুরে তারা খাবারও পেত না৷ এই ঘটনাই তাকে রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে৷ উচ্চ মাধ্যমিক শেষে আর্ডার্ন পড়াশোনা করেন যোগাযোগ বিদ্যায়৷ তার আগে ১৭ বছর বয়সেই যুক্ত হন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির রাজনীতিতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Baker
বিশ্ব রাজনীতির পাঠ
স্নাতক শেষ করে আর্ডার্ন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্যের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ করেন৷ ২০০৫ সালে পাড়ি জমান ব্রিটেনে৷ আড়াই বছর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রীসভার দপ্তরে চাকরি করেন৷ ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সোশ্যালিস্ট ওয়েলথের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘুরে বেড়িয়েছেন আলজেরিয়া, চীন, ভারত, ইসরায়েল, জর্ডার্ন ও লেবাননে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
জাতীয় রাজনীতির পথ চলা
২০০৮ সালে আর্ডার্ন লেবার পার্টির সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও ১৩,০০০ ভোটে হেরে যান৷ কিন্তু দেশটির সংবিধানিক নিয়মে তিনি সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান৷ ২৮ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে জায়গা করে নেন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
‘জাসিডামেনিয়া’
২০১৭ সালে লেবার পার্টির উপ প্রধান নির্বাচিত হন আর্ডার্ন৷ নির্বাচনের দু’মাস আগে দলটির প্রধান পদত্যাগ করলে সেই ভারও চাপে তার কাঁধে৷ নির্বাচনি প্রচারে তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হন আর্ডার্ন৷ তাকে নিয়ে এসময় দেশটিতে জনপ্রিয়তার যে ঢেউ উঠে, তা পরিচিত ‘জাসিডামেনিয়া’ নামে৷
ছবি: Getty Images/P. Walter
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী
মাত্র দু’মাসের নেতৃত্বে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাই দলকে নির্বাচনে বিজয়ী করেন আর্ডার্ন৷ ২০১৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন৷ নিউজিল্যান্ডের ১৫০ বছরের ইতিহাসেও তিনি সবচেয়ে কম বয়সি সরকার প্রধান৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress
প্রভাবশালী নারী
আর্ডার্ন সমকামী বিবাহের সমর্থক৷ জলবায়ু পরিবর্তন, শিশু দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকিত৷ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের সরকার হবে সহানুভূতিশীল৷ ২০১৮ সালে ‘ফোর্বসের পাওয়ার উইমেনের’ তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ আছেন টাইম ম্যাগাজিনে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকাতেও৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
সন্তান জন্ম
টিভি উপস্থাপক ক্লার্ক গেফোর্ডকে বেছে নিয়েছেন তিনি সঙ্গী হিসেবে৷ ২০১৮ সালের ২২ জুন বেনজির ভুট্টোর পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বকালে সন্তানের জন্ম দেন আর্ডার্ন৷ এজন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Office of the Prime Minister of New Zealand/D. Henderson
সন্তান কোলে জাতিসংঘে
বিশ্বে প্রথমবার কোনো প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের কক্ষে সন্তান নিয়ে বক্তৃতা দিতে যান৷ তিনি জাসিন্ডা আর্ডার্ন৷ গত বছর নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে অংশ নিয়ে আর্ডার্ন বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন৷ বক্তৃতা দেয়ার সময় সন্তান ছিল সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডের কোলে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
ক্রাইস্টচার্চে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার পর জাসিন্ডা আর্ডার্নকে নতুন করে চেনে বিশ্ব৷ এই ঘটনার অভিযুক্তকে কোনো কার্পণ্য না করেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ দ্রুত অস্ত্র আইন পরিবর্তনের ঘোষণা দেন৷ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে জানান, নিউজিল্যান্ড মোটেও এমনটা নয়৷ এই দেশে তারা স্বাধীনভাবেই থাকতে পারবে৷
ছবি: Reuters/E. Su
হিজাবে আর্ডার্ন
জাসিন্ডা আর্ডার্ন ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ছুটে যান নিহতদের স্বজনদের কাছে৷ তাদের জড়িয়ে ধরেন, সমবেদনা প্রকাশ করেন৷ শুধু তাই নয়, মুসলমানদের সাথে একত্মতার প্রকাশ হিসেবে তিনি একাধিক দিন হিজাব পরে বেরিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/TVNZ
সংসদে আরবি ভাষা
২০১৯ সালে ১৯ মার্চ সংসদে বক্তব্য দেন আর্ডার্ন৷ শুরুতেই সবাইকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোন্ধন করেন তিনি৷ জানান ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় অভিযুক্তের নামও তিনি কখনও মুখে আনবেন না৷
ছবি: Getty Images/M. Tantrum
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বে যে কয়টি দেশ সাফল্য পেয়েছে তার একটি নিউজিল্যান্ড৷ আর্ডার্নের নেতৃত্বে দেশটির সরকার করোনা ভাইরাসকে কখনো হুমকি হতে দেয়নি৷ শুরুতেই সীমান্ত বন্ধ করে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার৷ সামাজিক দূরত্ব, কোয়ারান্টিন, আইসোলেশনসহ বিভিন্ন নিয়মগুলো সুচারুভাবে পালন করা হয়৷ চলে বিস্তৃত পরিসরে করোনার পরীক্ষা৷ ফলাফল অন্য দেশগুলো যখন হিমশিম পরিস্থিতিতে তখন অনেকটাই নির্ভার নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Mitchell
12 ছবি1 | 12
করোনা সংকটেও একই ভূমিকায় তিনি৷ দেশে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আগেই নিয়েছেন বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত৷ সংক্রমণ খুব একটা ছড়াতে পারেনি৷ তবে লকডাউনে জনগণের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, অর্থনীতিতেও পড়েছে কুপ্রভাব৷
কষ্টের সময় দীর্ঘ হতে পারে৷ তবে বেশি দীর্ঘ যাতে না হয়, দেশের অর্থনীতি আবার যাতে সুসংহত হয়, সেজন্য আগামী ছয় মাস ২০ ভাগ কম বেতন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী৷ অবশ্য তিনি একা নন, বিবৃতিতে জাসিন্ডা আর্দার্ন জানিয়েছেন, তার মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য, সরকারি অফিসের সব প্রধান নির্বাহীও ২০ ভাগ কম বেতন নেবেন আগামী ছয় মাস৷ বিরোধী দলের নেত্রী সায়মন ব্রিজেস জানিয়েছেন তিনিও সরকারের এই উদ্যোগের সঙ্গী হবেন৷
এসিবি/কেএম (এপি)
মধ্যপ্রাচ্যের পেশাজীবী নারীদের ভাবনায় করোনা-সংকট
এমনিতেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হয় তাদের৷ করোনা সংকটে কিভাবে কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের পেশাজীবী নারীরা? চলমান সংকট নিয়ে কী ভাবছেন তারা?
ছবি: Privat
আমাল ইয়ারিসি, সাংবাদিক,সানা, ইয়েমেন
আমি এমন এক দেশে আছি, যেখানে যুদ্ধ চলছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেখানে হাঁটু ভেঙে বসে পড়েছে এবং যেখানে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম৷ এসব ভাবলে অবশ্যই ভয় করে৷ কলেরা, ডিফথেরিয়ার মতো রোগের সুচিকিৎসাও তো হয় না এখানে৷ করোনা টেস্ট করার সক্ষমতা নেই আমাদের৷ পরীক্ষা যারা করবেন তাদের প্রশিক্ষণও নেই৷ কতজন সংক্রমিত হয়েছে তা জানা নেই আমাদের৷
ছবি: Privat
লোরিন মসাল্লাম, অর্থনীতিবিদ, বেথেলহেম, ফিলিস্তিন এলাকা
পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়৷ আরো খারাপের দিকে গেলে কী যে হবে! সেরকম পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো চিকিৎসা ব্যবস্থাই তো নেই৷ তাছাড়া আর কতদিন লকডাউনে থাকতে হবে কে জানে৷ জীবন এখানে স্থবির হয়ে পড়েছে৷ ফিলিস্তিনের যে দিনমজুররা ইসরায়েলে কাজ করতে যায়, তাদের সবাইকে কোনো পরীক্ষা না করেই পশ্চিম তীরে ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ তাদের অনেকেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন৷
ছবি: Privat
গিনা মানসুর, এনজিও কর্মী, লেবানন
পরিস্থিতি এমন যে সব সময় মানসিক চাপে থাকতে হয়৷ জীবনটা পুরোপুরি ইন্টারনেটকেন্দ্রিক হয়ে গেছে৷ আর মিডিয়ায় তো করোনাভাইরাস ছাড়া কিছুই থাকে না৷ সবকিছুতেই একটা নেগেটিভ ব্যাপার৷ এসব থেকে মন সরানো যাচ্ছে না৷
ছবি: Privat
ফাতেন জেবাই, লেবানিজ ভিডিও সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক, দোহা, কাতার
এখানে এসে নতুন কাজে যোগ দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই আমাকে কোয়ারান্টিনে যেতে হয়েছে৷ ফলে চ্যালেঞ্জটা অনেক কঠিন হয়ে গেল৷ যে শহরে থাকি তা চেনাই হলো না এখনো৷ তবে দোহা শহরে থাকার অর্থ হলো লেবাননের চেয়ে অনেক ভালো অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মধ্যে থাকা৷ লেবাননে তো অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা দুটোরই খুব খারাপ অবস্থা৷ আমার পরিবারকে নিয়ে তাই খুব চিন্তায় আছি৷
ছবি: Privat
দিয়া দিব আবু দালো, স্থাপত্যের ছাত্রী, আম্মান, জর্ডান
আমি যে সুস্থ আছি, কোয়ারান্টিনে থাকার মতো যথেষ্ট জায়গা যে আমার আছে, সেজন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ৷ গরিবদের তো এসব নেই৷ জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে৷ এর বাইরে তিন সপ্তাহ ধরে যে ঘরে থাকছি, এ বিষয়টিও কষ্ট দিচ্ছে৷