বাংলাদেশে লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রতিবাদে ছাত্রদলকে সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ৷ ঘটনার জেরে তৈরি হওয়া সংঘাতে বিএনপির নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন হয়েছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনে জমায়েত হতে শুরু করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা৷ এসময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷
এই ঘটনায় ছাত্রদলের সহসভাপতি মামুন খানসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটকও করেছে৷
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘তারা (প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য) কোন অনুমতি নেয়নি৷’’
এই ঘটনায় অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী৷ তিনি দাবি করেন, মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধনে অংশ নিতে প্রেসক্লাবে তাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন৷
সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এএফপি৷ এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে৷
রোববার সোয়া ১১টা দিকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে আসেন৷
তার আগে পুলিশ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়৷ এর পরপরই জাতীয় প্রেস ক্লাবের মূল গেইটের বাইরে ফুটপাতে নেতা-কর্মীরা সমবেত হন৷ এসময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে৷ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কয়েকজন প্রেসক্লাব চত্বর থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে৷ পরে পুলিশের একটি দল প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকেও তাদের লাঠিপেটা করে এবং কয়েক রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আকরাম খাঁ হলে জিয়া পরিষদের আয়োজিত সমাবেশ অংশ নিতে আসেন৷ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘শাহবাগে আপনারা দেখেছেন কীভাবে সাধারণ ছাত্রদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে৷ আজকে তার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ রাষ্ট্রের প্রশাসনের নির্দেশে অন্যায়ভাবে মারপিট করবে, এর প্রতিবাদ করা যাবে না- এটা যদি হয় তাহলে তারা কেন বলে এদেশ গণতান্ত্রিক দেশ?’’
এফএস/এডিকে (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, এএফপি)
যেসব অভিযোগে ডিজিটাল আইনে মামলা
করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ কী অভিযোগে এসব মামলা হচ্ছে, জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: facebook.com/michelkumirthakur
মুশতাক আহমেদ
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ২০২০ এর ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব-৩৷ তাদের একজন মুশতাক আহমেদ৷ এজাহারে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর৷ তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন৷ এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷’’ ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে তার মৃত্যু হয়৷
ছবি: facebook.com/IamBangladeshi.71
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর
ব়্যাবের মামলার গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের একজন কিশোর৷ তার ফেসবুক পাতায় রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এজাহারে বলা হয়৷ এছাড়া তার ব্যবহৃত ফোনে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়৷ ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান৷
ছবি: facebook.com/AKK30M
দিদারুল ভূঁইয়া
ব়্যাবের মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন দিদার ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য৷ ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ বলছে, দিদার করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশ সরকার যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, তা মনিটর করার জন্য গঠিত একটি কমিটির সদস্য৷ নিজের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেস দিদার অভিযোগ করেন, সবচেয়ে গরিব মানুষেরাই সরকারি ত্রাণের সবচেয়ে কম অংশ পেয়েছেন৷ সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান৷
ছবি: Facebook/didarul.bhuiyan
তাসনিম খলিল
ব়্যাবের মামলার ১১ আসামির একজন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল৷ তার সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়েছে, তার ফেসবুক আইডিতে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়াতে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পাওয়া গেছে৷
ছবি: Facebook/tasneem.khalil
শফিকুল ইসলাম কাজল
২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় ফটো সাংবাদিক কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর৷ যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে এই মামলা করেছিলেন তিনি৷ এছাড়া কাজলের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ ও তেজগাঁও থানায়ও ডিজিটাল আইনে আরও দুটি মামলা হয়৷
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol
বেরোবি শিক্ষক
ফেসবুকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল আইনের মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক সিরাজুম মনিরাকে ২০২০ সালের ১৩ জুন গ্রেফতার করা হয়৷ পোস্টটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি তা মুছে দিয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
রাবি শিক্ষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গতবছর ১৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ কর্মকর্তা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ‘আজেবাজে কথা লিখে কটূক্তির অভিযোগে’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, ২ জুন প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন৷ যদিও নাসিমের নাম উল্লেখ করেননি৷ পোস্টটি তিনি পরে মুছেও দেন৷
ছবি: DW/A. Khanom
নবম শ্রেণির ছাত্র ইমন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় নবম শ্রেণির ছাত্র মো. ইমনকে ২০২০ সালের ২০ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর তাকে কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হয়৷ ভালুকার ওসি জানিয়েছেন, ইমন পরে পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়েছিল৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সুশান্ত দাশ গুপ্ত
‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক৷ এই পত্রিকায় স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ২০ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির৷ এর পরদিন সুশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৪ জুন তিনি জামিন পান৷