কিছু নেতা-কর্মীর ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর মতো অপরাধের কারণে ছাত্রলীগ আবারো সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ তবে ছাত্রলীগ সভাপতি মনে করেন, এটা ব্যক্তির দায়৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কলুষিত রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার স্থানীয় ৬ নারীকে ধর্ষণ করে সেইভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ৷ এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আরিফ হোসেনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ কিন্তু পুলিশ তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷ ছাত্রলীগ নেতার এই অপরাধের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের আগে সে এলাকাতেই ছিল৷ উলটো যাঁরা তার অপরাধের শিকার হয়েছেন, তারাই সামাজিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন৷ একজনের সংসার ভেঙেছে এবং দুই ছাত্রীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়েছে৷
অন্যদিকে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের স্থানীয় চার নেতার বিরুদ্ধে৷ হত্যাকারীরা লাশ গুমেরও চেষ্টা করেছিল৷ লাশ উদ্ধার করা হলেও এখনো তরুণীর পরিচয় মেলেনি৷ গত ১০ আগস্ট পাথরঘাটা কলেজের পশ্চিম পাশের পুকুর থেকে ওই তরুণীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷
অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ নভেম্বর চার ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ বহিষ্কৃতরা হলো: পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্ট, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম রায়হান এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহমুদ৷
হাফিজুর রহমান
সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ছোট্টকে আটক করেছে পুলিশ৷ তবে বাকিরা পলাতক৷ পুলিশ জানায়, তদন্তে ছাত্রলীগ নেতাদের জড়িত থাকার কথা জানা গেছে৷ আটক দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদে নিহত তরুণীর পরিচয় জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
এর আগে গত ১৭ জুলাই বরিশালের বানারীপাড়ায় এক অটোরিকশা চালককে আটকে রেখে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং তারপর ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করেছে৷
এর আগে এ বছরেরই ৮ এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থর কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে৷ এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়৷ এরপর এ শাখার কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ৷
গত ৮ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম শামীম হাসান ও তার সহযোগীদের বহিষ্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন৷
নূর খান
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শামীম ও তাঁর কয়েক সহযোগী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছেন৷ তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিউর রহমান হল দখল করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানাভাবে চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়৷ আরো দাবি করা হয়, ছাত্রলীগের ওই নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে নানা সময়ে পিটিয়ে আহত করেছেন৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ধর্ষণ, হত্যার মতো অপরাধ ছাড়াও রুম দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ৷
গত ১৭ জুলাই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের পল্লব ও পাভেল গ্রুপের সংঘর্ষে খালেদ আহমদ লিটু নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷
১৩ জুলাই ছাত্রলীগের হোসেইন ও টিটু গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের জেরে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা৷ ফলে ছাত্রাবাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷
১২ এবং ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম কলেজে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় প্রকাশ্যে গোলাগুলি হয়৷ অস্ত্রধারী যুবকের ছবি প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে৷
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী স্বাধীনতা, নারী আন্দোলন, নারী অধিকার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা, সমালোচনা, বক্তৃতা, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে ধর্ষণের সংখ্যা৷ কিন্তু কেন? এর জন্য কারা দায়ী, কী করে ধর্ষণ কমিয়ে আনা সম্ভব? বা ধর্ষিতা নারীদের কী-ই বা করা উচিত?
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Fotolia/DW
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
ছবি: detailblick/Fotolia
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/M. Ruettinger
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
ছবি: dpa
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
ছবি: picture alliance/abaca
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
ছবি: DW
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
ছবি: Advocate Tanbir ul Islam Siddiqui
11 ছবি1 | 11
গত ১৬ জুলাই টেন্ডার নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের সঙ্গে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপ-প্রচার সম্পাদকের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়৷
১৮ জুলাই হলের আসন বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷
৩০ জুন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় ছাত্রলীগ নেতা তোফাজ্জলের দাবি করা ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় স্থানীয় কৃষক মুশতাককে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে৷
১৪ জুন টেন্ডার দখলকে কেন্দ্র করে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হক ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দাসের মধ্যে মারমারি হয়৷
২২ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার নিয়ে চট্টগ্রাম নগর ভবনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত মারা যান৷
সাইফুর রহমান সোহাগ
গত বছরও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কিছু অপরাধ সারা দেশে আলোচনার ঝড় তুলেছিল৷ প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগমকে গত বছরের ৩ অক্টোবরে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম৷ ঘটনার সময় বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন৷ ঐ ঘটনার পর তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ মামলার রায়ে বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ অবশ্য ছাত্র লীগের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এমন সব অপরাধকর্মের দায় নিতে রাজি নন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয় না৷ যখনই নজরে আসে, তখনই ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ ছাত্রলীগের এক কোটি নেতা-কর্মী, তাঁদের দু-একজন কোনো অপরাধ করলেই বড় করে দেখানো হয়৷ কিন্তু অন্যদিকে নজর দেয়া হয় না৷ সমাজে যা ঘটছে তার বাইরে কিছু হচ্ছে না৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘ছয় নারীর ঘটনাটি অনৈতিক সম্পর্কের৷ কিন্তু সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচন করার আগে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখা হয়৷ তারপরও কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে তাকে শাস্তি দেয়া হয়৷'' এই অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন৷
ছোট পোশাক পরাই কি ধর্ষণের কারণ?
ভারতে প্রতিদিন অন্তত ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ যখনই এ ধরনের কোন মামলা আদালতে উঠেছে তখন প্রথম যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, ধর্ষণের শিকার ঐ নারী কি ধরনের পোশাক পরেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুগের সাথে পোশাক
যুগে যুগে পোশাকের ধরনে পরিবর্তন এসেছে৷ আদিমকালে ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল আর এখন রয়েছে নানা ধরনের পোশাক৷ বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশানের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকেন নারীরা৷
ছবি: AP
শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ?
ভারতে বেশিরভাগ ধর্ষণ মামলায় দেখা গেছে, ধর্ষিতা সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরেছিলেন৷ অর্থাৎ যাকে বলা হয় ভারতীয় নারীর আদর্শ পোশাক, সে ধরনের পোশাকই তাঁরা পরেছিলেন৷ অর্থাৎ এ জরিপ থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷
ছবি: Reuters
আইনের ভয় নেই
২০১৩ সালে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনে অন্তত একবার কোনো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষকেই কোনো আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷
ছবি: Fotolia/DW
ধর্ষণ যখন বিনোদনের মাধ্যম
ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ এর কারণ হিসেবে পুলিশ নারীদের উপর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, মেয়েদের মোবাইল ব্যবহার ও ছোট পোশাক পরিধানকে উল্লেখ করেছে৷ নারীদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ পুলিশ বলেছে, সেখানকার পুরুষরা তাদের বিনোদনের অভাব পূরণ করছে ধর্ষণের মাধ্যমে৷
ছবি: dapd
নারীদের দাবিয়ে রাখার হাতিয়ার
রাস্তা, অফিস বা যে কোনো পাবলিক প্লেসে পুরুষের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
ছবি: UNI
পরিচিতদের দ্বারাই বেশি ধর্ষণ
২০১৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১০০ জন ধর্ষণের শিকার নারীর মধ্যে ৯৮ জন এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছেন, যারা তাঁদের পরিচিত৷ আদালতে যেসব মামলা ওঠে, বা গণমাধ্যমে যেসব ঘটনা প্রকাশ পায় সেগুলো বেশিরভাগই বাইরের লোকের হাতে৷ ফলে পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
যৌন নিগ্রহ সর্বত্র
ভারতে জন্মের আগে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি হলেও, খুব সাধারণ ঘটনা৷ ফলে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে, সমাজে নারী-পুরুষের অনুপাতে হেরফের হয়৷ এছাড়া বাল্যবিবাহ, কম বয়সে মা হওয়া, সন্তান জন্ম দিতে গিয়েও মৃত্যুবরণ করছেন নারীরা৷ পরিবারের ভেতরেও চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ৷ এরপরও কি আপনারা ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করবেন?
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ছাত্র লীগের কিছু নেতা-কর্মীর অপরাধপ্রবণতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি হচ্ছে৷ তবে ধর্ষণের মতো ঘটনায় দলকে দায়ী করা ঠিক হবে না৷ ব্যক্তিগতভাবে কেউ দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন৷ এটা তার ব্যক্তিগত বিকৃতি৷''
আর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘এখন রাজনীতিতে যে অনৈতিকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, এগুলো তারই প্রকাশ৷ দল থেকে বহিস্কার করলেই এগুলো দূর হবে না৷ রাজনীতিতে নৈতিকতা এবং সততা ফিরিয়ে আনতে হবে৷''
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷