1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রলীগ কি দুর্বৃত্তদের সংগঠন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ অক্টোবর ২০১৯

শুধু বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নয়, গত ১১ বছরে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগ কি সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের সংগঠন?

Dhaka Universität Demonstration Lehrer und Eltern
ছবি: bdnews24.com

হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ ও নির্যাতনের অনেক অভিযোগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ শুধু সাধারণ পর্যায়ের কর্মী বা নেতার বিরুদ্ধে নয়, ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে৷ টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দলটির সভাপতি শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে সম্প্রতি সংগঠন থেকে বিদায় করা হয়েছে৷ সর্বশেষ বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যায় প্রমাণিত হয়েছে যে কত নৃশংস হতে পারে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী৷ হত্যাকান্ডে জড়িতরা বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদধারী নেতা৷

ভারতকে ফেনী নদীর পানি দেয়া নিয়ে সমালোচনা করে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আবরার৷ ধারণা করা হচ্ছে এ কারণে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নাম্বার কক্ষে নিয়ে তাকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়৷ ওই কক্ষটি হলের শিক্ষার্থীদের কাছে টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত৷

মাহমুদুর রহমান মান্না

This browser does not support the audio element.

সাবেক ছাত্র নেতা এবং ডাকসুর দুইবারের ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘শুধু বুয়েট নয়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ছাত্রলীগের টর্চার সেল আছে৷ আসলে এই ছাত্র সংগঠনটি এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে৷ তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এদের ব্যবহার করছে৷ প্রতিবাদ ও ভিন্নমত দমনের জন্য এদের ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফলে এই ছাত্র সংগঠনটির সন্ত্রাসই রাজনৈতিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য লুটপাটে জড়িয়ে পড়েছে৷ আর সাধারণ ছাত্ররা তাদের হাতে মারা পড়ছে, নিগৃহীত হচ্ছে৷''

ছাত্রলীগের আছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস৷ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠনটি ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে বীরোচিত ভূমিকা রাখে৷ স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাদের রয়েছে গর্ব করার মত ভূমিকা৷

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর মনে করেন, ‘‘৯০-এর পর থেকেই প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের ছাত্র সংগঠনকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করেছে৷ শুধু ছাত্রলীগ নয়, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন ছাত্রদলও একই স্টাইলে হল দখল, টেন্ডার- চাঁদাবাজি করেছে৷ আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় তাই তাদের ছাত্র সংগঠনেরও অপতৎপরতা বেশি৷''

তাঁর মতে, ‘‘এই পরিস্থিতির দায় এককভাবে ছাত্রলীগের নয়৷ নেতিবাচক জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটছে ছাত্রলীগের মধ্যে৷''


ছাত্রলীগ দুর্বৃত্ত এবং অপরাধীদের সংগঠনে পরিণত হচ্ছে কিনা- এর জবাবে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এ কে এম আজিম মনে করেন, ‘‘ছাত্রলীগের সামনে এখন ছাত্রদের অধিকারভিত্তিক, গণমুখী কোনো কর্মসূচি নেই৷ ফলে তাদের কেউ কেউ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে৷ কিন্তু এটা সংগঠনের দায় নয়৷ ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ছাড় দিচ্ছেনা৷ তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ সর্বশেষ ঘটনায়ও আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে৷''

আর ছাত্রলীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘‘ব্যক্তির অপরাধের দায় কখনো সংগঠন নেবে না৷ আমরা শুধু এটা বলেই শেষ করিনা, ব্যবস্থাও নিই৷ আগেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ আর বুয়েটের ঘটনায়ও আমরা তদন্ত কামিটি করে ২৪ ঘন্টার আগেই ১১ জনকে চিহ্নিত করে বহিস্কার করেছি৷ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে৷ ছাত্রলীগে কোনো সন্ত্রাসী, অপরাধীর জায়গা নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ অনেক বড় একটি সংগঠন৷ এখানে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজের মত অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যেতে পারে৷ কিন্তু আমরা জানামাত্র ব্যবস্থা নেই৷ ব্যবস্থা না নিলে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারতেন৷ ছাত্রলীগে কখনোই দুর্বৃত্তদের জায়গা হবে না৷ আমারা ছাত্রলীগের মহান আদর্শ নিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই৷''

আল নাহিয়ান খান জয়

This browser does not support the audio element.

বুয়েট পরিস্থিতি
আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে মঙ্গলবার ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ এর আগে হত্যার ঘটনায় সোমবার ১৯ জনকে আসামি করে মামলা হয়৷ বুয়েটের শিক্ষার্থীরা পূজার ছুটির মধ্যে আবরার হত্যার বিচারসহ সাত দফা দাবিতে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন৷ তারা শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ অ্যাকাডেমিক ও ভর্তি কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণাও করেছেন আন্দোলনকারীরা৷ 

এই পরিস্থিতির মধ্যে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের এড়িয়ে চলছেন৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমের সাথেও কথা বলছেন না৷ তবে প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান ডয়চে ভেলের কাছ দাবি করেন দায়িত্ব পালনে তিনি কোনো অবহেলা করেননি৷ আবরার হত্যাকাণ্ডকে দু:খজনক এবং মির্মম অভিহিত করে এর বিচার দাবী করেছেন তিনি৷ বলেন, ‘‘যারা এটা করেছে তার বর্বর, তারা মানুষ নামের যোগ্য নয়৷ এই ধরণের খুনীরা কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য হতে পারে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ