1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রলীগ: ‘দুর্বৃত্তদের’ দুষ্কর্মে ‘হিরোরা’ আড়ালে

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করে জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হয়েছেন তানভীর হাসান সৈকত৷ নানা অপরাধমূলক আর বিতর্কিত ঘটনায় জড়ানোদের কারণে সৈকত, বাবলা, আবু তালেবরা সমাজে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েও পড়ে থাকেন আড়ালে৷

টিএসসিতে ১০০ দিন ছিন্নমূল মানুষদের দুই বেলা খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সৈকতছবি: Privat

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা৷ সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেলে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণ করার দিনে ধর্ষক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি৷ তিনিই প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন৷ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তার ওপর চাপও এসেছে৷ কিন্তু তিনি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, ধর্ষকদের ছাড় দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না৷ রোমহর্ষক ঘটনাটি জানাতে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলাই ফোন করেছিলেন শাহপরান থানার ওসিকে৷

টেলিফোনে বাবলা ডয়চে ভেলেকে বলেন, শাহপরান থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম ঘটনাস্থলে এসেছিলেন ধর্ষকদের দুই গডফাদারকে সঙ্গে নিয়ে৷ তিনি ঘটনাস্থলে যেতেই চাননি৷ তিনি সময়ক্ষেপন করে এক অর্থে ধর্ষকদের পালিয়ে যেতেই সহযোগিতা করেন৷ ধর্ষকদের গডফাদাররা তার সঙ্গে তর্কাতকি করেছে বলেও জানান বাবলা৷ কিন্তু এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের পাশেই বাড়ি হওয়ার সুবাদে তিনি ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকজন বন্ধুকে ঘটনাস্থলে ডেকে এনেছিলেন৷ ফেসবুক খুলে ধর্ষিতার স্বামীকে দেখানোর পর তিনি দুই ধর্ষককে শনাক্ত করেন৷ পরে ধর্ষিতাকে হাসপাতালে পাঠাতেও সহযোগিতা করেন সিলেট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বাবলা৷

ওসি কাইয়ুম ঘটনাস্থলে ধর্ষকদের দুই গডফাদারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন: বাবলা চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

যে সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মীর নেতিবাচক খবর প্রায় নিয়মিতই শিরোনাম হয় সেই ছাত্রলীগে কিন্তু ভালো কাজের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া নেতাও আছেন৷

করোনার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা ইউএনওসিএইচএ-র ‘রিয়েল লাইফ হিরো’র স্বীকৃতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত৷ ছাত্রলীগের আগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন, ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সদ্য বিলুপ্ত ডাকসুর সদস্যও ছিলেন তিনি৷

১৯৩টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংস্থা জাতিসংঘের কাছ থেকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’র স্বীকৃতি পাওয়া প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, ‘‘ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে যাওয়ার পর সবাই যখন বাড়ি চলে যান, আমি তখন ঢাকায় থেকেই কিছু একটা করার চেষ্টা করি৷ প্রথমদিকে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ হিসেবে চাল-ডাল দিয়েছি৷ পরে যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল, সবাইকে ঘরবন্দি থাকতে বলা হলো, তখন মনে হলো, যাদের ঘর নেই তারা কোথায় থাকবে, কী খাবে? এরপরই আমি তাদের জন্য কিছু করার উদ্যোগ নেই৷ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি যেহেতু করি, তাই বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টিএসসিতে ১০০ দিন ছিন্নমূল মানুষদের দুই বেলা খাওয়ানোর উদ্যোগ নিই৷ তখন প্রতিবেলা এক হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার দিয়েছি৷ এমনকি তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও ঈদের সময় নতুন পোশাক দেয়ার ব্যবস্থাও করেছি৷ সংগঠনের ছোট ভাই, বড় ভাই, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাংবাদিকরা এই কাজে সহযোগিতা করেছেন ও দারুণভাবে উৎসাহ দিয়েছেন৷’’

আমি চাই যারা ভালো কিছু করতে চান তারাই যেন ছাত্রলীগ করেন: তানভীর হাসান সৈকত

This browser does not support the audio element.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে চা বিক্রি করেন চাঁদপুরের মতলব থানা থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় আসা মো. শাহজাহান৷ করোনার কারণে যখন তার দোকান বন্ধ, কোনো আয়-উপার্জন নেই, তখন প্রতিদিন দুই বেলা সৈকতদের দেওয়া খাবার খেয়েই বেঁচেছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে শাহজাহান বলেন, ‘‘ওই সময় সৈকত ভাই খাবার না দিলে হয়তো আমাদের না খেয়েই থাকতে হতো৷’’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর উপজেলার আব্দুল কুদ্দুস করোনা সংকটের শুরুর দিকে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ করতেন৷ গ্যারেজেই থাকতেন৷ করোনার কারণে গ্যারেজ বন্ধ হওয়ার পর থাকার জায়গা না থাকায় টিএসসির বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয় তাকে৷ খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা বা সঙ্গতি ছিল না তার৷ দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য কুদ্দুসের মুখেও সৈকতের প্রশংসা, ‘‘সৈকত ভাই তখন আমাদের কাছে আল্লাহর দূত হিসেবে এসেছিলেন৷ তিনি খাবার না দিলে হয়ত না খেয়েই রাস্তায় মরে পড়ে থাকতাম৷ শুধু আমাকে না, আমার মতো অনেক মানুষ তার দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে গেছেন৷’’

সৈকত মনে করেন যে কোনো অবস্থান থেকে ভালো কাজ করতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হয়৷ তাই তার মতে, সমাজের জন্য ভালো কিছু করার মন-মানসিকতাসম্পন্নদেরই শুধু ছাত্রলীগ করা উচিত এবং সংগঠনের কেউ অপকর্ম করলে তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত৷ তার ভাষায়, ‘‘প্রত্যেকটি মানুষের পারিবারিক শিক্ষাই আসল৷ সংগঠন হয়তো কাউকে শৃঙ্খলা শেখাতে পারে, কিন্তু পারিবারিক শিক্ষা না থাকলে কেউ ভালো মানুষ হতে পারে না৷ আমি চাই যারা ভালো কিছু করতে চান, তারাই যেন ছাত্রলীগ করেন আর যারা খারাপ কাজ করবেন তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়৷’’

করোনায় মারা যাওয়া ২১ জনের লাশ দাফনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন আবু তালেবছবি: Privat

লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু তালেব করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ২১ জনের লাশ দাফন করে আলোচনায় আসেন৷ কেউ যখন করোনায় মৃতদের কাছেই যেতে চায় না আবু তালেবসহ ছাত্রলীগের ২৮ জনের তিনটি টিম তখন লাশ দাফনের কাজ করেছে৷ মৃতের পরিবারের সদস্যরাই যখন নিজের প্রাণ বাঁচাতে দূরে সরে গেছেন ওই ২৮ জন ছুটে গেছেন কাছে৷ ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে তালেব বলেন, ‘‘করোনার শুরুতে সবাই যখন আতঙ্কে, তখন আমাদের এলাকার মান্দারে গ্রামের সৈয়দ মাহবুব মুরাদের স্ত্রী মঞ্জু আরা বেগম ঢাকার মুগদা হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান৷ তার লাশ এলাকায় এলে বাড়ি ছেড়ে সবাই পালিয়ে যান৷ আমাদের তখন কোনো ধারণা ছিল না৷ যার কাছে যে সুরক্ষা সামগ্রী ছিল, তা নিয়েই আমরা ওই নারীর লাশ দাফন করি৷ সেই শুরু৷ এরপর এক এক করে ২১টি লাশ আমরা দাফন করেছি৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল আমাদের সুরক্ষা সামগ্রী ও যানবাহন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন৷’’

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা গুরুত্ব দেন না তাদের ছাত্রলীগ করার দরকার নেই: আবু তালেব

This browser does not support the audio element.

ওই বৃদ্ধার ছোট ছেলে মাহবুব মুরাদ ঢাকায় আইটি ব্যবসা করেন৷ ডয়চে ভেলেকে মুরাদ বলছিলেন, ‘‘মায়ের মৃত্যুর সময় আমি নিজেও খুব অসুস্থ ছিলাম৷ আমার বড় ভাইয়ের একার পক্ষে মায়ের লাশ দাফন করা সম্ভব ছিল না৷ তখন আবু তালেবরা এগিয়ে এসেছেন৷ তারাই আমার মায়ের লাশটি দাফন করেছেন৷’’

ছাত্রলীগকে যেসব নেতা-কর্মী বিতর্কিত করছে আবু তালেবও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তাদের৷ তার মতে, ‘‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা গুরুত্ব দেন না, তাদের এই সংগঠন করার দরকার নেই৷’’

গেল বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করে আলোচনায় এসেছিল ছাত্রলীগ৷ ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা একটি ছেলের কেন্দ্র ছিল বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, কিন্তু ভুল করে সে চলে আসে এমবিএ বিল্ডিংয়ের সামনে৷ ৯টা ৪০ পর্যন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর বুঝতে পারে বড় ভুল হয়ে গেছে৷ পরীক্ষা দেয়া হবে না ভেবে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে ছেলেটি৷ ভর্তিচ্ছুদের সহায়তা করার জন্য গড়ে তোলা ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’-এর মৃদুল দ্রুত এসে ছেলেটিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়৷ এভাবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা আরো অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিলেও এক ছাত্রীকে পৌঁছে দিতে গিয়ে বিপদও হয়েছিল৷ মেয়েটিকে দ্রুত পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে গিয়ে উলটো পথ দিয়ে বাইক চালানোয় কর্তব্যরত সার্জেন্টের বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল৷ তবে ক্রন্দনরত ছাত্রীর পরীক্ষা মিস হয়ে যাচ্ছে দেখে সার্জেন্ট শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের৷

গতবছর ৯ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ