1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ভিআইপি' প্রটোকল

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চলেন ‘ভিআইপি' প্রটোকলে৷  তারা যেখানে যান সেখানেই কর্মী ও সাধারাণ শিক্ষার্থীদের প্রটোকল দিতে হয়৷ আর তারা বিকেল তিনটার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না৷

Bangladesch Dhaka Demonstration Awami League
ছবি: picture alliance / ZUMA Press

এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও তাদের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়৷এর বাইরে আর্থিক লেনদেনসহ আরো অনেক অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে৷ এ নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদনও দিয়েছে৷ আর এই সব অভিযোগ নিয়ে স্বয়ং আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ৷

ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী

শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই অভিযোগের কথা তোলেন৷ সেখানে উপাস্থিত আওয়ামী লীগের  সিনিয়র নেতারাও তার সঙ্গে একমত হন৷ বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ছাত্রলীগের  নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈঠকে ৷ তিনি নিজেই প্রথমে নেতাদের সামনে অভিযোগের কথা তোলেন৷ তিনি প্রায় ১০-১৫ মিনিট ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার কথাও বলেন৷ তবে তিনি সেটা মিন করে বলেছেন কিনা সেটা আমি বলতে পারবনা৷ তিনি এ নিয়ে নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন৷ অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন তারা৷ তারাই এখন বিষয়টি দেখছেন৷''

‘ভিআইপি'প্রটোকল ও বিকেলে ঘুম থেকে ওঠা

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষোভের পরও রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে চারটি গণরুমে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়৷ কারণ ওই রুমের শিক্ষার্থীরা রোববার মধুর ক্যান্টিনে প্রটোকল দিতে যায়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের কথা জেনে রোববার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে যান ছাত্র লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক৷

মাহবুব উল আলম হানিফ

This browser does not support the audio element.

ওই গণরুমের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র জোনায়েদ হেসেন জানান,‘‘মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গেলে তাদের অনুসারী হল নেতারা দলবল নিয়ে তাদের গিয়ে প্রটোকল দেয়৷ আর সেজন্য তারা হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে যায়৷ কিন্তু ওই দিন সূর্যসেন হলের চারটি গণরুমের ছাত্ররা প্রটোকল দেয়নি৷ তাই রাতে ছাত্রলীগ নেতারা ওই চারটি রুমে তালা মেরে দেয়৷''

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের মুখপাত্র এবং আগের কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন জানান,‘‘ছাত্রলীগের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদককে চলাফেরার সময়ও মটরবাইক যোগে প্রটোকল দিতে হয়৷ তারা যে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করেন সেখানে এই প্রটোকলের কারণে তীব্র যানজট তৈরি হয়৷'' তিনি আরো জানান,‘‘তারা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন না৷ বাসায় থাকেন৷ সেখানেই তাদের অনুসারীরা হাজিরা দেন৷ তারা সাধারণত দুপরের পর ঘুম থেকে ওঠেন৷ আর যদি কখনো ক্যাম্পাসে আসেন তা বিকেল তিনটার পর৷'' প্রধানমন্ত্রী নিজেও শনিবারের বৈঠকে তাদের বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার কথা বলেছেন৷ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের পর তারা এখন নিয়মিত সকাল সকাল ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন বলে জানান রাকিব৷

গত ৫ সেপ্টেম্বর(বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সভাপতিকে  প্রটোকল   দিতে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে পড়েন শত শত নেতা-কর্মী৷ তারা নিরাপত্তা বেষ্টনি উপেক্ষা করে টার্মাকে চলে যান, বিমানের দরজার কাছে গিয়েও ভীড় করেন৷

প্রধান পাঁচ অভিযোগ

সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে ও গোয়েন্দা সূত্রে  পাওয়া তথ্য মতে পাঁচ কারণে প্রধানমন্ত্রী তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷

১.বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ে না থাকা৷  গত ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগেরই একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যান নির্ধারিত সময় সকাল ১১টায়৷ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যান বিকেল  তিনটায়৷

২.জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন মহিলা কলেজের সম্মেলন হওয়ার পর দেড় মাস চলে গেলেও কমিটি গঠন না করা৷

৩. নিয়ম বহির্ভূতভাবে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা ৷

৪. ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয় সম্মেলনের এক বছর পর ১৩ মে৷ তবে সম্মেলনের আড়াই মাস পর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়৷ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরই তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়৷ পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কমিটি থেকে  বিতর্কিত ১৯ জনকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দিয়েও বাস্তবে বাদ না দেয়া৷ 

৫. আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ৷

অভিযোগ আছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে পদ দেয়া হয়৷ জেলা কমিটিকে না জানিয়ে সরাসরি অর্থের বিনিময়ে সাতটি উপজেলা কমিটি গঠন৷ নারায়ণগঞ্জ এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে নিজস্ব লোক ঢুকানো৷ আর্থিক সমঝোতা না হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ইডেন কলেজের কমিটি গঠনে দেরি করা৷

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা যায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাদের ঠাঁই দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আছে৷ এই অভিযোগগুলো হলো বিবাহিত, বহু বিবাহ, অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত, জামায়াত ও শিবিরের সাথে যুক্ত, শিক্ষকের ওপর হামলাকারী প্রভৃতি৷ এই সব অভিযোগে অভিযুক্তদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেয়ার পিছনে আর্থিক লেনদেন আছে বলে ধারণা করা হয়৷

গোলাম রব্বানি

This browser does not support the audio element.

সাধারণ সম্পাদকের আশা

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের খবর পেয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই রাতেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে আসেন৷ এখন পর্যন্ত তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেননি৷ তবে ছাত্রলীগের সাধারণ গোলাম রাব্বানী ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এরপর দু'টি অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হয়েছে৷ আমরা তার সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করার সময় চেয়েছি৷আমাদের কমিটি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের কমিটি৷ তাই আমাদের প্রতি তার প্রত্যাশাও অনেক৷ আমাদের কোনো ভুল ভ্রান্তির কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ তার এই ক্ষোভ স্বাভাবিক৷ আমরা আমাদের ভুল ত্রুটি কাটিয়ে আমাদের আপা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করব৷ আর প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে কী বলেছেন তাতো বাইরের কারুর জানার কথা নয়৷''

তিনি অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন,‘‘কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা৷ কারুর অভিযোগ থাকলে প্রমাণ করুক৷ আর এবার মাত্র আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজির হতে একটু দেরি করেছি৷ সেটা ছিলো ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কউন্সিল অনুষ্ঠান৷ তার আগের দিন আমার মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী  ছিলো ফরিদপুরে৷ পরদিন আমি ফিরেছি৷ সে কারণে দেরি হয়েছে৷ যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএসকে আগেই আমরা জানিয়েছিলাম৷ আর কোথাও আমরা দেরি করিনি৷''

ভিআইপি প্রটোকল সম্পর্কে তিনি বলেন,‘‘এটা আমরা নিষেধ করেছি৷ তারপরও যদি সবাই ভিড় করেন তাহলে আমাদের কী করার আছে৷ পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না৷ আর সূর্যসেন হলের ঘটনা একটি ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই না৷ আর সেটার সমাধান আমিই করেছি৷ যেখানে আমার প্রশংসা হওয়া উচিত সেখানে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট হচ্ছে৷''

তিনি দাবি করেন,‘‘গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ তথ্য সন্ত্রাসের শিকার, বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার৷'' সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বক্তব্য জানার অনেক চেষ্টা করেও জানা যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ