1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পিটুনিতে আবরারের মৃত্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ যারা হত্যা করেছে তারা ছাত্রলীগের বলে স্বীকার করেছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি৷

Bangladesch Mord an Student Abrar Fahad
ছবি: bdnews24

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এরইমধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ ছয় জনকে আটক করেছে পুলিশ৷ সন্দেহ করা হচ্ছে একটি ফেসবুক পোস্টের জেরে তাকে হত্যা করা হয়৷

রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আবরারের লাশ উদ্ধার করা হয় বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে৷ এই হলের ১০১১ নাম্বার কক্ষে থাকত আবরার৷ তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন৷

 রাত আটটার পর তাঁকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়া হয়৷ তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন৷ বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি জামিউস সানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়ে রাত তিনটার দিকে যখন হলে যাই ততক্ষণে সে মারা গেছে৷ গিয়ে দেখি লাশ পড়ে আছে৷ তখন হলের প্রভোস্ট, ছাত্র কল্যাণ কর্মকর্তা ও চিকিৎসকসহ আরো অনেকেই ছিলেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘তাঁকে ২০১১ নাম্বার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তারা বুয়েট ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে আছেন৷ পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও ঘটনা তদন্ত করছে৷ যারা জড়িত তারা সবাই আইনের আওতায় আসবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘ছাত্রলীগতো হত্যা করেনা৷ হত্যা করতে বলেও না৷ এটা ব্যক্তির দায়৷ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং হত্যাকাণ্ডের সব আলমাত পাওয়া গেছে৷ যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে৷''

জামিউস সানি

This browser does not support the audio element.

নিহত আবরারের মামাতো ভাই আবু তালহা বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি ছাত্রলীগের লোকজনই তাকে হত্যা করেছে৷ আমাদের পরিবারের একজনকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো হয়েছে৷ তাতে কমপক্ষে ৮-১০ জন তালহা হত্যায় জড়িত৷ এর মধ্যে ছয়জন আবরারকে ২০১১ নাম্বার কক্ষে নিয়ে যায়৷ দুই জন পরে আবার আবরারের জামা কাপড় নিতে আসে ১০১১ নাম্বার কক্ষে৷ কিন্তু রুমের ভেতরে সিসি ক্যামেরা নাই৷ তাই ২০১১ নাম্বার কক্ষে কতজন ছিলো তা এখনো নিশ্চিত নয়৷''

তিনি জানান,‘‘অত্যন্ত মেধাবী আবরার ধর্মপরায়ণ ছিলেন৷ আর সর্বশেষ ৫ অক্টোবর তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন৷ তাতে ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন ও চুক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা উল্লেখ করে তিনি একটি লেখা লেখেন৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘ওই পোস্ট দেয়ার জেরে তাকে নিয়ে গিয়ে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপাটপ তারা নিয়ে নেয়৷ এরপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়৷ ভোর রাত পাঁচটার দিকে আমরা ফোনে খবর পাই৷''

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এক প্রেস ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরইমধ্যে ছয় জনকে আটক করা হয়েছে৷ যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাউল ইসলাম জিওন এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার৷ কৃষ্ণপদ রায় জানান, ‘‘আবরারকে যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি৷ আমাদের কাছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে৷''

সোহেল মাহমুদ

This browser does not support the audio element.

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আবাররকে প্রথমে ২০১১ এবং পরে ২০০৫ নাম্বার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়৷ ওই দু'টি কক্ষে ছাত্রলীগ নেতারা থাকেন৷ নির্যাতনের পর শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিড়ির পাশে তাঁকে ফেলে রাখা হয়৷

সোমবার দুপুরের পর  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে আবরারের লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তাঁর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে৷ মাথা ছাড়া তারা হাত, পা, বুক, পিঠ, পেট সবখানেই গভীর আঘাতের চিহ্ন আছে৷ এটাকে আমরা বলি ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত৷ এটা রড, লাঠি, ক্রিকেট ব্যাট, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, হকি স্টিক, শক্ত কাঠ বা শক্ত অন্য কিছুর আঘাত হতে পারে৷ এই আঘাতের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ আঘাতের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক, তাই সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলতে পরছিনা৷''

আবরারের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে৷ তাঁর বাবা বরকতউল্লাহ একটি এনজিওতে চাকরি করেন৷ মামা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক৷ দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার বড়৷ তাঁর গ্রামের বাড়িতে এখন বিলাপ আর আহাজারি৷ মা রোকেয়া খাতুন এর মধ্যেই জানান,‘‘রোববারই আমার ছেলে ঢাকা যায়৷ ১০ দিন আমার কাছে ছিলো৷ এভাবে যে আমার বুক খালি হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি৷ যারা তাঁকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই৷ মায়ের বুক খালি হওয়ার কষ্ট তারাও বুঝুক৷''

এদিকে এই ঘটনার পর বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে৷ সাধারণ শিক্ষার্থী এবং আবরারের সহপাঠীরা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবীতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ