1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্রীদের ছাত্র হোস্টেলে রাখতে হবে– দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা

পায়েল সামন্ত
৩১ অক্টোবর ২০১৭

সত্যজিৎ রায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণের উৎকর্ষে শিখর ছুঁলেও মদ্যপান, যৌন হেনস্থার মতো ঘটনার কারণে বিতর্কিত হয়েছে৷ এবার ছাত্রী হোস্টেলে যেতে না চাওয়ায় ছাত্রীদের বহিষ্কার এবং পড়াশোনা বন্ধ৷

Indien Hungerstreik im Satyajit Ray Film Institute
ছবি: DW/P. Samanta

প্রতিবাদ, বিক্ষোভের কারণে চলমান অচলাবস্থায় সামাজিক মূল্যবোধের চিরন্তন প্রশ্নটিও উঠে এসেছে –  ছাত্রদের সঙ্গে একই হোস্টেলে কি ছাত্রীরা বসবাস করতে পারে?

বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের নামাঙ্কিত ভারতেরঅন্যতম অগ্রণী চলচ্চিত্র শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে  প্রতিষ্ঠার পর পরিকাঠামোর অভাবে তিন বছর কোনও ছাত্র ভর্তি হয়নি৷ পরে প্রশিক্ষণের উৎকর্ষে এই প্রতিষ্ঠান শিখর ছুঁলেও প্রকাশ্যে মদ্যপান, খুনের হুমকি বা যৌন হেনস্থার মতো অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে৷ চলতি বিতর্কের বিষয়টি অবশ্য একেবারেই অন্যরকম৷ হোস্টেলের ১৪ জন ছাত্রীকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে বিতর্ক, বিক্ষোভ আর অচলাবস্থা৷

ইএম বাইপাসের কাছেই সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)৷ সেখান থেকে কেন এই ১৪ জন ছাত্রী বহিষ্কৃত হলেন? গত ২০ বছর ধরে তো ছেলে-মেয়েরা আলাদা কোনও হোস্টেল না থাকায় এক হোস্টেলেই থাকছিলেন৷

বসু

This browser does not support the audio element.

এবার সেই হোস্টেল বিভাজনকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত৷ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ছাত্রীদের জন্য নতুন হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ ওই ছাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন হোস্টেলে চলে যেতে বলা হয়৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই গভর্নিং কাউন্সিল ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু, ছাত্রীরা সেই নির্দেশ মানেননি৷ নির্দিষ্ট সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ১৪ জন ছাত্রী ছাত্রাবাস না ছাড়ায় কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেন৷ বরখাস্ত করা হয় তাঁদের৷

কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্লাস বয়কট করে, ক্যাম্পাসে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন পড়ুয়ারা৷ এসআরএফটিআই-এ পঠনপাঠন বন্ধ হয়ে যায়৷ ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা দেবমিত্রা মিত্র৷ অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হওয়া সেই বিবাদ কয়েক দফা বৈঠকের পরও  মেটেনি৷

আন্দোলনরত পড়ুয়া মৈনাক গুহ বলেন, ‘‘ছাত্র ও ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য এক হোস্টেলে থাকা প্রয়োজন৷ তাঁরা এক সঙ্গে সিনেমা দেখে, তা নিয়ে আলোচনা করে৷ এই পড়াশোনার পরিসরটা নষ্ট হয়ে যাবে৷'' যদিও ছাত্র সংসদের নেতা দেবোত্তম বসুর বক্তব্য, ‘‘ছাত্রীদের আলাদা হোস্টেলে সরার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল না৷ আমরা অন্যান্য দাবি আদায়ের জন্য এই বিষয়টিকে সামনে রেখেছি৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলিতে কর্ণপাত না করে ছাত্রীদের বহিষ্কার করে দিলো৷ তাই আমাদের ধরনা-বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে হয়েছে৷'' 

চক্রবর্ত্তী

This browser does not support the audio element.

পড়ুয়াদের অভিযোগ, অধিকর্তা কখনোই তাঁদের কোনও দাবিদাওয়া সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করেন না৷ বাধ্য হয়ে তাঁরা এই কৌশল নিয়েছেন৷ এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষককে রাতভর ঘেরাও করে রাখার  মতো বিক্ষোভও পড়ুয়ারা দেখিয়েছে৷ এর জেরে অধিকর্তা দেবমিত্রা মিত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ কর্তুপক্ষের কঠোর অবস্থানের পক্ষে তাঁর , দিনভর ছাত্রছাত্রীরা ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন৷ শুধু রাতে নিজেদের হোস্টেলে থাকতে হবে৷ রাত দশটার পর বয়েজ হোস্টেল বা গার্লস হোস্টেলে কারও সঙ্গে দেখা করতে গেলে খাতায় সই করে যেতে হবে৷

পড়ুয়াদের অভিযোগ, এর ফলে লিঙ্গ বৈষম্যে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে৷ ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ৷তাঁদের মতে, একুশ শতকের আধুনিকতার সঙ্গে তা একেবারেই মানানসই নয়৷ কিন্তু, ছাত্র ও ছাত্রীদের একসঙ্গে থাকাই কি আধুনিকতা বা প্রগতিশীলতার মাপকাঠি? সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী তা মনে করেন না৷ তাঁর মতে, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের এক হোস্টেলে থাকার মধ্যে কোনও এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপার নেই৷ তাঁরা আলাদা থাকলে পিছিয়ে পড়বে, এই ধারণাও ঠিক নয়৷ প্রগতিমনস্কতার মাপকাঠি এসব নয়৷''

পড়ুয়াদের আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের দেশের সব অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে৷ এটা তো নতুন কিছু নয়৷ আলাদা হোস্টেলে থাকব না, এই দাবিতে আন্দোলন আসলে অতিবিপ্লবী বা নাটুকেপনা ছাড়া কিছু নয়৷ এটা অর্থহীন প্রগতিশীলতা৷ হঠাৎ করে এতদিনের ডেকোরাম ভেঙে কী লাভ?''

বিশ্বনাথ

This browser does not support the audio element.

ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, শিক্ষক-অধ্যাপক ও কর্মীদের জন্য আলাদা বাসস্থান নির্দিষ্ট রয়েছে৷ এসআরএফটিআই-এর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, একসঙ্গে থাকার দাবি মেনে নিলে এই পুরো ব্যবস্থাটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে৷ এই প্রতিষ্ঠানের ডিন, পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন মনে করেন, এটা নিছকই ব্যক্তিগত একটি আন্দোলন৷ এর সঙ্গে সমষ্টির ভালো-মন্দের যোগ নেই৷ তাই তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য নিয়মের দরকার৷ নইলে প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না৷ এটা পড়ুয়াদের বোঝা উচিত৷''

অধিকর্তার সঙ্গে ডিন, পরিচালক অশোক বিশ্বনাথনও ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েছিলেন৷ তিনি পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে না আলাদা থাকল, তা দিয়ে প্রগতিশীলতা বিচার করা যায় না৷ তাই আন্দোলন শেষ করে ক্লাসে ফেরা উচিত তাঁদের৷ কর্তৃপক্ষেরও উচিত পড়ুয়াদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলা, সেগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ