মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে বলেছে সরকার৷ ওদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক হিজরা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে৷ ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সি নারীর স্বাক্ষরতার হার ৪০.৮ শতাংশের মতো৷ কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক ও তার পরের পর্যায়ে লেখাপড়া করেন মাত্র ৪ শতাংশ নারী ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত না হলে এই হার আরো কমতে পারে৷ তবে এই প্রবণতা কমানোর উদ্যোগও আছে৷ সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট বা শৌচাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশ দেয়৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি স্কুলে ছাত্রীদের ঋতুকাল নিয়ে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষিকা রাখার কথাও বলা হয়েছে ঐ পরিপত্রে৷
২০১৪ সালের একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, দেশে প্রতি ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেটগুলোর ৪৫ শতাংশই বন্ধ থাকে, তাছাড়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ টয়লেটে বা টয়লেটের কাছাকাছি পানি ও সাবান থাকে না৷ আরো জানানো হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেটগুলোর জানালা থাকে ছোট বলে আলো-বাতাস কম থাকে৷ কোনো কোনো টয়লেটে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে, কিন্তু বাল্ব থাকে না বা থাকলেও অকেজো৷
নিরাপদ পয়ঃপ্রণালি রোগকে দূরে রাখে
বিশ্বে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ টয়লেট ব্যবহার করে না৷ উন্নত পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, এমনকি অর্থনীতির উন্নয়নেও সহায়তা করে৷
ছবি: Patrick Baumann
মানবাধিকারের জন্য সোচ্চার
বার্লিনের কেন্দ্রীয় স্টেশনে এই ব্যক্তিদের মতো বিশ্বের অনেক দেশেই এখন উন্নত স্যানিটেশনের জন্য সোচ্চার হচ্ছে মানুষ৷ বিশ্বে প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজনের পরিষ্কার, নিরাপদ টয়লেট নেই৷ খারাপ পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী৷ বিশ্বে ম্যালেরিয়ার চেয়ে খারাপ স্যানিটেশনের কারণে বেশি মানুষ মারা যায়৷
ছবি: John Macdougall/AFP/Getty Images
সুস্থ বিনিয়োগ
খারাপ স্যানিটেশনের কারণে পানিবাহিত রোগ, যেমন টাইফয়েড এবং পাতলা পায়খানা খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে৷ আফ্রিকার অন্যতম বড় বস্তি কিবেরায় স্যানিটেশন একটি বড় সমস্যা৷ তারা প্লাস্টিক ব্যাগেই টয়লেট করে সেটা যেখানে সেখানে ফেলে রাখে৷ তবে এখন এধরনের টয়লেট গড়ে ওঠার কারণে সেখানে রোগের প্রকোপ কমেছে৷
ছবি: DW
যারা শৌচাগার পরিষ্কার করে
ভারতের বেশিরভাগ গ্রামে পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থার এই চিত্রই লক্ষ্য করা যায়৷ ছবিটি ভারতের উত্তরাঞ্চলের মুদালি গ্রামের৷ এখানে মানুষই টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটি করে থাকে৷ ২০ বছর আগে এ ধরনের শৌচাগার নিষিদ্ধ করা হলেও এখনও এ প্রক্রিয়া চলছে৷
ছবি: Lakshmi Narayan
সংকটময় পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ
সংকটময় পরিস্থিতি বা জরুরি কোনো অবস্থায় নিরাপদ স্যানিটেশন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়৷ বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরগুলোতে এ সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে
এই ছবিটি ইরাকের কুর্দিস্তানের৷ সিরিয়া সীমান্তের এই এলাকাটিতে শরণার্থীদের চাপ দিন দিন বাড়ছে৷ কিন্তু মানুষের তুলনায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে অনেক মানুষকে৷ ফলে নিরাপদ স্যানিটেশন না থাকায় খুব দ্রুত পোলিও ও অন্য পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: DW/M. Isso
পরিবেশবান্ধব শৌচাগার
বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজ-এর বাইরে এল-আলতো-তে এই শৌচাগারগুলোর অবস্থান৷ নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য তারা এই ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছে৷ বিশেষভাবে তৈরি এই টয়লেটগুলো পরিবেশবান্ধব, কেননা এখান থেকে পয়ঃবর্জ্য সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন৷
ছবি: Sustainable Sanitation/Andreas Kanzler
ভুল ধরনের শৌচাগার
কেবল উন্নয়নশীল দেশেই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২ কোটি মানুষের ভালো স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই৷ ইউরোপের প্রত্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় মাটিতে গর্ত করে তৈরি শৌচাগার বেশি ব্যবহৃত হয়৷ এর ফলে মাটির নীচ দিয়ে খাবার পানিতে মিশে যায় পয়ঃবর্জ্য৷
ছবি: picture-alliance/CTK
পাহাড়ের চূড়ায় পয়ঃনিষ্কাশন
বিশ্বের এমন কিছু স্থান আছে যেখানে পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এমনকি বিদ্যুৎ পর্যন্ত নেই৷ সেখানে কিভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা কাজ করে তা নিয়ে সক্রিয় টয়লেট বিশেষজ্ঞ লিউক বার্কলে৷ তিনি বিশ্বের প্রত্যন্ত কিছু এলাকা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে ‘আ লু উইথ আ ভিউ’ নামে একটি বই লিখেছেন৷ আলাস্কা-র মাউন্ট ম্যাককিনলে এমন একটি জায়গা৷ উত্তর অ্যামেরিকার সুউচ্চ পর্বতচূড়ার দৃশ্য এটি৷
ছবি: Patrick Baumann
8 ছবি1 | 8
এছাড়া মেয়েদের ঋতুকালীন নানা সমস্যা সমাধানে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ঋতুকালীন বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য একজন অন্তত শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও পরিপত্রে বলা হয়েছে৷
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রান্সসেক্সুয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার, অর্থাৎ হিজরাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সরকার৷ গত মে মাসে হিজরাদের ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
আবার গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে হিজরা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়র জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমন নির্দেশনার কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘সমাজের সব ধরনের উদ্যোক্তারা যাতে ব্যাংক ঋণ পায়, সেজন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি৷ বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে মানবিক ব্যাংকিং চালু করতে চায়৷ এ জন্য কোনো শ্রেণি বা সম্প্রদায় যেন ব্যাংকিং পরিসেবার বাইরে না থাকে সেই ব্যবস্থা করা হবে৷''
নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশে এমন অনেক মানবিক সিদ্ধান্তই কার্যকর হয় না৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছাত্রীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য একজন শিক্ষিকা এবং আলাদা টয়লেট হলে নারী শিক্ষার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে বিশ্লেষকরা বলে মনে করেন৷ হিজরা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার নির্দেশকেও শুভ উদ্যোগ বলে মনে করেন তাঁরা৷