ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল সার্বিয়া, কথা বলতে চান প্রেসিডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
একটি ট্রেন স্টেশনের ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনাকে ঘিরে আন্দোলন শুরু হয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৫ জনের।
বিজ্ঞাপন
প্রায় ২৯ হাজার মানুষ রোববার সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য জড়ো হন। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্ররা। তবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষকেরাও।
গত সাত সপ্তাহ ধরে বেলগ্রেডে একের পর এক আন্দোলন হচ্ছে। তবে রোববারের জমায়েত ছিল ঐতিহাসিক। সরকারের হিসেব অনুযায়ী অন্তত ২৯ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছে ওই দিন।
উত্তর সার্বিয়ার নভি সাদ স্টেশনে ভেঙে পড়েছিল ছাদ। দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। অভযোগ ওঠে, দুর্নীতির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরেই সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলন শুরু হয়।
সার্বিয়ায় খনি কোম্পানির বিরুদ্ধে নারীদের সংগ্রাম
সার্বিয়ার এক গ্রামের নারীরা তাদের গ্রামের মধ্য দিয়ে খনির ট্রাক চলাচল আটকে দিতে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
খনি শহর
ছবিতে সার্বিয়ার পূর্বাঞ্চলের বোর শহর দেখা যাচ্ছে৷ কাছেই চলছে খননের কাজ৷ পাশের ক্রিভেলি গ্রাম ঘেঁষে থাকা পাহাড় থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে৷ খননকাজের জন্য ক্রিভেলি গ্রামের ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে৷ কিছু বাড়ি ভেঙেও গেছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
লড়াই করতে প্রস্তুত
৭৮ বছর বয়সি ভুকোসাভা রাডিভোয়েভিচ মাঝরাস্তায় বসে আছেন৷ পেছনে একটি ছোট সেতু দেখা যাচ্ছে৷ সেটি দিয়ে যেন খনি কোম্পানির ট্রাক পার হতে না পারে সেজন্য গত জানুয়ারিতে ব্যারিকেড বসিয়েছেন গ্রামের নারীরা৷ পালাক্রমে তারা পাহারা দিয়ে থাকেন৷ হলুদ বোর্ডে লাল কালি দিয়ে লেখা ‘ব্লকেড’৷ তার নীচে সময়সীমা উল্লেখ করা আছে- দিনরাত ২৪ ঘণ্টা৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
‘আমরা গ্রাম রক্ষা করছি’
৭৯ বছর বয়সি গৃহিনী স্তানা জর্গোভানোভিচ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের বাড়ি ও গ্রাম রক্ষা করছি, যেখানে আমরা জন্মেছি৷ আমাদের সুন্দর গ্রামের জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে৷’’ খনির কারণে ক্রিভেলির ভূমি দূষিত হওয়ায় সবজি ফলানো সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
পরিত্যক্ত গ্রাম
সত্তরের দশক থেকেই ক্রিভেলি গ্রামে খননকাজ চলছে৷ তবে ২০১৮ সালে এক চীনা কোম্পানি দায়িত্ব নেওয়ার পর উৎপাদন চার গুন বেড়েছে৷ ফলে বর্জ্য বেড়েছে বহুগুন৷ তাই চীনা কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি সার্বিয়া জিজিন কপার খনি এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের সরানোর কাজ শুরু করেছে৷ ছবিতে ক্রিভেলি গ্রামের কাছের একটি গ্রামের অবস্থা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
নতুন বাড়ির আশা
২২ বছর বয়সি তেওদোরা তোমিচও মাঝেমধ্যে পাহারায় বসেন৷ ‘‘আমরা জিজিন কোম্পানিকে দেখাতে চাই যে আমরা এখনও আছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷ ‘‘আমি অন্য কোথাও নতুন গ্রামের আশা করছি যেখানে খনির কোনো প্রভাব থাকবে না৷ ক্রিভেলি গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ভ্ল্যাক্স অর্থোডক্স খ্রিষ্টান৷ তারা নতুন জায়গায় একসঙ্গে যেতে চান৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
১০০ মিলিয়ন ডলার খরচের দাবি
চীনের জিজিন কোম্পানি রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে বলেছে, পরিবেশগত ক্ষতি এড়াতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করা হয়েছে৷ সে কারণে ক্রিভেলি গ্রামের পরিবেশ উন্নত হয়েছে বলে দাবি করছে তারা৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে’
ক্রিভেলির এক শিক্ষক স্লাভিচা লাজারেভিচ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে৷ আমি আশা করছি আমরা সবাই একসঙ্গে নতুন জায়গায় যেতে পারবো যেন আমরা আমাদের সম্প্রদায়টা টিকিয়ে রাখতে পারি৷’’ তিনি সেখানে নতুন স্কুল স্থাপিত হবে বলে আশা করছেন যেখানে তিনি কাজ করতে পারবেন৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
কোম্পানির প্রস্তাব সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ
অন্যত্র সরে যেতে খনি কোম্পানির পক্ষ থেকে যে অর্থ প্রস্তাব করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলে গ্রামবাসীরা মনে করছেন৷ ৫৮ বছরের দেবিকা কস্তানদিদনোভি বলছেন, ঐ অর্থ দিয়ে একক অ্যাপার্টমেন্ট কেনা সম্ভব নয়৷ তবে কোম্পানির দাবি, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা মেনে স্থানান্তর পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে৷
ছবি: Marko Djurica/REUTERS
8 ছবি1 | 8
অভিযোগ, সাম্প্রতিক কালে দুইবার ওই স্টেশনে সংস্কারের কাজ হয়েছে। একটি চীনা সংস্থাকে দিয়ে ওই কাজ করানো হয়। কাজের নামে সেখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। চাপের মুখে সরকার ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তার মধ্যে একজন মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ওই মন্ত্রীকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে রোষের পারদ আরো চড়েছে।
প্রাথমিকভাবে দেশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিস বলেছিলেন, আন্দোলন নিয়ে তিনি এতটুকু চিন্তিত নন। বিরোধীরাই এই আন্দোলনের পিছনে আছে। কিন্তু রোববারের জমায়েত দেখার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
গত সাত সপ্তাহ ধরে সার্বিয়ায় যে আন্দোলন চলছে, তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্ররা। অভিনেতা, কৃষক ইউনিয়নের গোষ্ঠীও তাতে শামিল হয়েছে। তবে ছাত্ররা লাগাতার রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার রাজধানী বেলগ্রেডের জমায়েতে প্রথম ১৫ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় মৃত ১৫ জনকে স্মরণ করে। পরের আধ ঘণ্টা গর্জনের আধ ঘণ্টা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই আধ ঘণ্টা প্রবল আওয়াজের মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখানো হয়।
এদিনের ঘটনার পর সার্বিয়ার সরকার স্কুলে শীতের ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।