1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্র রাজনীতি কী প্রমাণ করে?

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি আদায়ে কাজ করা ছাত্র রাজনীতির একটি অন্যতম বড় উদ্দেশ্য৷ এসব করার মধ্য দিয়ে তাঁদের জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতির জন্য তৈরি হওয়ার কথা৷

Bangladesch Gewalt unter Studentengruppen
ছবি: bdnews24.com

কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দাবি আদায়ে ছাত্রনেতারা আন্দোলন না করে উলটো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বাধা দিচ্ছেন৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি আন্দোলনের সময় তারা আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য করেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ এই ঘটনার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে সেখান থেকে মুক্তি পেতে তিনি ছাত্রলীগের সহায়তা চান বলে অভিযোগ উঠেছে৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্রনেতাদের ব্যবহারের এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে৷ কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ফি কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন৷ কিন্তু তাতে বাধা দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা৷ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে কলেজের অধ্যক্ষই নাকি ছাত্রলীগের কিছু কর্মীকে ডেকে নিয়েছিলেন৷ 

এবার একটু বড় ঘটনাগুলোর দিকে তাকাবো৷ ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে রাতের অন্ধকারে সাধারণ ছাত্রীদের উপর হামলা চালিয়েছিল পুলিশ৷ সেই ঘটনার প্রতিবাদে বড় আন্দোলন গড়ে উঠেছিল৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেটি শুরু করেছিলেন৷ মনে পড়ে, সেই সময় বৃষ্টিতে ভিজে রোকেয়া হলের সামনে গড়ে তোলা ‘মুক্তাঞ্চল'-এ বসে থাকার কথা৷ মনে পড়ে, আমাদের প্রতিবাদ-মিছিলে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ আর লাঠিচার্জের কথা৷ মনে পড়ে, আন্দোলন ভণ্ডুল করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের হামলার কথা৷ অবশ্য কোনো কিছুই সেই আন্দোলনকে আংশিক সফল হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি৷ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী৷ তবে এখনও সেদিন রাতে ছাত্রীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার করা যায়নি৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের শুরু করা এই আন্দোলনে পরে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷

এবার পাঁচ বছর পরের আরেকটি আন্দোলনের কথা৷ সময়টা ছিল ২০০৭৷ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতায়৷ ঐ বছর আগস্টের ২০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের বিরোধ লেগেছিল৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হলে আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ পরবর্তীতে তা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আটককৃত শিক্ষকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷

এখানে চারটি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করলাম৷ এর মধ্যে শেষের দু'টি (শামসুন্নাহার ও তত্ত্বাবধায়ক আমলের আন্দোলন) ঘটনা বেশ বড়৷ দুটোই শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ বিশেষ করে, সেনাসমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে এমন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিলেন, যখন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই ভয়ে চুপসে ছিলেন৷

আর বাকি দুই আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পড়ার পর আপনার হয়ত মনে হতে পারে, ছাত্র রাজনীতিকে খারাপ প্রমাণ করার জন্যই আমি নির্দিষ্ট ঐ ঘটনাগুলো বেছে নিয়েছি, আর ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা এড়িয়ে গেছি৷ আসলে কিন্তু তা নয়৷ আমি শুধু বলতে চেয়েছি, গত দুই দশকে ছাত্র রাজনীতির যে গতিপ্রকৃতি দেখা যাচ্ছে তাতে কিছুদিনের জন্য হলেও তা বন্ধ রাখা যেতে পারে৷ তাহলে রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁরা এখন প্রয়োজনে ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ব্যবহার করছেন, তাঁরা এরকম চর্চা ছাড়াই চলাফেরা শিখে যাবেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছাত্র সংগঠনের দ্বারস্থ না হয়ে অন্য সমাধান বের করা শিখে যাবে৷

আর এ সব কিছু হওয়ার পর চাইলে আবারও ছাত্র রাজনীতি শুরু করা যেতে পারে৷ তখন হয়ত ছাত্র রাজনীতির একটি সুস্থ ধারা আমরা আশা করতে পারি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ