1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ছাত্র রাজনীতির স্বাধীনতা চাই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ অক্টোবর ২০১৯

আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এখন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে চলছে বিতর্ক৷ আর সেই বিতর্কে উঠে এসেছে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতির কথা৷

ছবি: Getty Images/AFP/R. Asad

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বুধবার শপথের মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে৷ তবে পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা৷ শপথে তারা সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান রুখে দেয়ার কথা বলেছেন৷ এছাড়া বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধেও তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন৷ 

‘‘বিরাজনীতিকরণের কোনো প্রক্রিয়ায় আমার সমর্থন নেই’’

This browser does not support the audio element.

এই শপথ মেনে চলা ও বাস্তবায়নের জন্য এখন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা কিভাবে কাজ করবেন? তারা রাজনীতির বাইরে গিয়ে কিভাবে সংগঠিত হবেন? এসব প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন শাকিল আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে মাসে অন্তত একবার সব শিক্ষার্থীরা বসার প্রস্তাব দিয়েছি৷ সেখানে আমাদের সমস্যা বা আমরা যা চাই তা তুলে ধরবো৷ আর আমরা ছাত্ররা এক হয়ে আমাদের সমস্যা ও অধিকার নিয়ে কথা বলব৷ আমাদের কোনো সভা বা মিটিং-এর প্রয়োজন হলে তার সিদ্ধান্ত নেবে বুয়েটের ব্যাচ৷ রাজনীতির বাইরে ছাত্রদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে, থাকবে৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ২৫টি ক্লাব আছে৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘বুয়েট ছাত্র সংসদ বা ইউকসুর ব্যাপারে আমরা এখনো আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করিনি৷ এটা থাকবে কি থাকবে না, নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আমরা এখনো ভাবিনি৷''

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর অবশ্য মনে করেন,‘‘বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনই পারে ছাত্র রাজনীতির সংকট দূর করতে৷ ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়া এবং জাতীয় রাজনৈতিক দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মানসিকতাই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷ ছাত্র সংগঠন যদি রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে তাহলে সেই ধরণের ছাত্র সংগঠন অবশ্যই নিষিদ্ধ করা উচিত৷ ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না৷ ছাত্র রাজনীতি হবে স্বাধীন এবং ছাত্রদের কল্যাণে৷ আর এই ছাত্র রাজনীতি না থাকলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করা যাবে না৷ প্রশাসনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে৷'' 

তিনি বলেন,‘‘একটি বা দু'টি ছাত্র সংগঠনের অপরাজনীতির কারণে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হবে মাথাব্যথার জন্য মাথা কাটার মত৷ তাদের অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওই একটি বা দু'টি ছাত্র সংগঠন ছাড়া আরো অনেক ছাত্র সংগঠন আছে তারাতো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজি করেনা৷ তাহলে তারা কেন এর দায় নেবে?''

বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে যা স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, ক্ষমতাসীনেরা সব সময় তাদের আধিপত্য ধরে রাথকে ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে৷ এই মানসিকতার কারনেই ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সংকট শুরু হয়েছে৷ আর ৯০-এ স্বৈরাচারের পতনের পর এটা আরো প্রকট হয়েছে৷ তার আগে এরশাদ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চেয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থামাতে৷ সেটা না পেরে নিজেই ছাত্র ও যুব সংগঠন করেন কাউন্টার দেয়ার জন্য৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘বিরাজনীতিকরণের কোনো প্রক্রিয়ায় আমার সমর্থন নেই৷ আমি ছাত্রদের রাজনীতি চাই৷ তা না হলে তারা দেশের নেতৃত্ব দেবেন কিভাবে৷ কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন বা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ছাত্র রাজনীতি চাই না৷ ছাত্ররা করবেন আদর্শিক রাজনীতি৷ তারা পরে জাতীয় রাজনীতিতে গিয়ে ওই আদর্শের জন্য কাজ করবেন৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ চালু থাকলে ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতির ধারা চালু হবে৷ বুয়েট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সঠিক৷ তারা অপরাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলছিল তা কোনভাবেই ছাত্র রাজনীতি নয়৷ হত্যা, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি এগুলো ছাত্র রাজনীতি হতে পারে না৷''

তাঁর মতে ,‘‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে ছাত্র রাজনীতি কলুষিত করেন৷ তিনি ফরমান জারি করেন সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্র সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠন থাকতে হবে৷ তার আগে আদর্শিক মিল থাকলেও ছাত্র সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি অঙ্গ সংগঠন ছিলো না৷'' 

‘‘সেখানে আমাদের সমস্যা বা আমরা যা চাই তা তুলে ধরবো’’

This browser does not support the audio element.

কেউ কেউ মনে করেন ছাত্র রাজনীতি না থাকলে অপশক্তি এবং মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটতে পারে৷ আবার শাসক দলও এর সুযোগ নিতে পারে৷ কারণ ছাত্র রাজনীতি প্রকাশ্যে না থাকলেও তাদের অনুসারীরা তো থাকবেন৷

এর জবাবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোতেতো ছাত্র রাজনীতি নাই৷ সেখানে ছাত্র রাজনীতি না থাকার কারণে ছাত্রদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷ তারাতো রাজনীতি ছাড়াই প্রয়োজনে দাবি আদায়ে সংগঠিত হচ্ছে৷ সরকারের আরোপ করা ভ্যাটের বিরুদ্ধে তারাতো আন্দোলন করেছে৷ দাবি আদায় করেছে৷ আমার বিবেচনায় বাংলাদেশে এখন আর ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নাই৷ ছাত্ররা তাদের অধিকারের জন্য ছাত্র কল্যাণ সমিতি করে সংগঠিত হতে পারে৷ তারা সরাসরি শিক্ষকেদের সাথে প্রশাসনের সাথে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেন৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষার্থীদের কথা শোনার জন্য স্থায়ী একটা প্রক্রিয়া চালু করতে পারে৷''

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ