দেশের তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার আমেজ। শিক্ষার্থী-প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নেমেছেন নির্বাচনি লড়াইয়ে।
বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আছে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান- সবখানেই ছাত্রদের ভূমিকা।ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(জাকসু)-র নির্বাচন ১১ সেপ্টেম্বর আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)-র নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বর। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)-র নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও এখনো সেখানে নির্বাচনি আমেজ সেভাবে চোখে পড়েনি। শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় সেখানকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথম বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা৷ তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই নির্বাচন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এবার ডাকসু নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী লড়ছেন। নারী প্রার্থীও অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল দিয়েছে। তবে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক বেশি।
ডাকসুর ২৮ পদে প্রার্থী মোট ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে নারী ৬২ জন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে পাঁচজন নারী প্রার্থী আছেন।
অনেক দিন পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন
পাবলিক আর সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনেক দিন ধরে কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হওয়া তো দূরের কথা।
ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে বা তার আগেও অনেক বছর কোনো নির্বাচন হয়নি।
দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৫৬টি আর ৬৫৩টি সরকারি কলেজ আছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি। দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১১৬টি।
শিক্ষাঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থী ও বিশ্লেষকদের কথা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন নির্বাচন হয় না? বাধা কোথায়? কলেজগুলোতেও কি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত না? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ছবি: DW
রাজনৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখতেই নিয়মিত নির্বাচন হয় না : ডা. জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে সরকার-বিরোধীরাই অধিকাংশ সময় নির্বাচিত হয়। ফলে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ খর্ব হয়। এই কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে চায় না।
ছবি: DW
আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাইবো : রিফাত জাহান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সবার আগে আমি আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাইবো, যার কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা নেই এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত হবে না। প্রার্থীর কাছে আমি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা, সচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দাবি করতে পারি, তবে অবশ্যই সেটা শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চাই না : রাতুল হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডাকসু ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল। তবে বাস্তবে এটি প্রায়ই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে৷ ফলে, প্রশ্ন ওঠে- ডাকসু কি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করছে, নাকি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হচ্ছে? অবশ্য ডাকসুর প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হন, তবু তারা সাধারণত নিজেদের রাজনৈতিক দলের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকেন। এমন লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি চাই না।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি : অর্পিতা সাহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাচনে নারী প্রার্থী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এই নেতৃত্বে সবার কণ্ঠস্বর সমানভাবে শোনা না গেলে গণতান্ত্রিক চর্চা পূর্ণতা পায় না। তাই নারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ খুবই সামান্য : পপি রাজবংশী, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুবই সামান্য। ছাত্র সংসদে বিভিন্ন পদে কিছু নারী শিক্ষার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও তাদের অবস্থান ভালো না। আবার হল সংসদে অনেক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই। সব মিলিয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণও সন্তোষজনক নয়। রাকসুতে ‘জাতিসত্ত্বা বিষয়ক সম্পাদক’ পদের সংযুক্তিসহ চার দফা দাবি জানিয়েছিল ‘আদিবাসী’ ছাত্র সংগঠনগুলো। এ দাবিও উপেক্ষিত হয়েছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচিতদের দায়িত্ব অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা : নাঈম ইবনে জামান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমি যাদের ভোট দিবো, তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না হওয়ায় প্রশাসনিক ও একাডেমিক যেসব অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। যেমন, একাডেমিক সিলেবাসকে যুগোপযোগী করা, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ফান্ডিং ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা গ্রহণ।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনগুলোর অগ্রাধিকার শিক্ষার্থীদের দাবি নয়, বরং দলীয় স্বার্থই হবে - এমন আশঙ্কা বাস্তবসম্মত। যখন ছাত্র সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে, তখন তারা জাতীয় স্বার্থে বড় ভূমিকা রেখেছে। দলীয় রাজনীতির অতীত ইতিহাসের আলোকে বলা যায়, ছাত্র সংসদে দলীয়করণ হলে শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র কন্ঠস্বর হারিয়ে যাবে, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত হবে না। এককেন্দ্রিক রাজনৈতিক মতাদর্শকে হেজেমোনিক করে তুলবে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচিতরা যেন শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন : সাদিয়া শরিফ শান্তা, শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা থাকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবেন। কিন্তু যদি পূর্ণ প্যানেল বা অধিকাংশ পদে রাজনৈতিক সংগঠনের প্রার্থীরাই জয়ী হন, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে তাদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সৎ ও মেরুদণ্ড থাকা নেতা চাই : মামুন ইসলাম, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চাকসু নেতার হতে হবে স্বচ্ছ, তার মধ্যে অবশ্যই কোনো প্রকার দ্বিচারিতা, কিংবা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য কাজ করার মানসিকতা থাকতে পারবে না। প্রশ্ন করা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার মতো সৎ সাহস এবং ডিসিশন মেইকিংয়ের যোগ্যতা, তথা মেরুদণ্ড থাকা একান্ত জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকা জরুরি : অর্পিতা সুশীল অপি, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চাকসু নির্বাচনে অমুসলিম ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত জরুরি। এটি বৈষম্য রোধ, সবার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের নির্দিষ্ট সমস্যা ও চাহিদা তুলে ধরতে সহায়ক হবে। এ ধরনের প্রতিনিধিত্ব যতটা বেশি উঠে আসবে, শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ছাত্র সংসদ গঠনে ততবেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
ক্যাম্পাসে শান্তি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব : বোরহান রব্বানী, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে। তবে আমরা তেমন কোনো পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোট দেবো না। আমরা বিবেচনা করবো-কে বা কারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকার আদায় করতে পারবে। এছাড়া যাদের ইশতেহারে ক্যাম্পাসের শান্তি, উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- তাদেরই আমরা ভোট দেবো।
জাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম থাকার অন্যতম কারণ হলো- রাজনীতির পরিবেশকে এখনো অনেকেই নিরাপদ মনে করেন না। কেননা, গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক ভূমিকা থাকলেও এর পরবর্তী সময়ে নারীদের অনলাইন বুলিংয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক চাপ, নিরাপত্তার অভাব এবং নেতৃত্বে নারীদের সুযোগ কম থাকায় অনেকেই এগিয়ে আসতে চান না।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
12 ছবি1 | 12
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিলা তাসমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, " ২৪-এর গণভ্যুত্থানের পর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও স্বাধীনতা ভোগ করছি। কিন্তু এখনো ডিপার্টমেন্ট ও হলসহ বিভিন্ন জায়গায় আমরা নান চাপের মধ্যে থাকি। শিক্ষকরা নানা অন্যায় সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দেন। আর সরকার পতনের আগে আমরা ছিলাম ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। তারা যেভাবে বলতো সেভাবেই আমাদের চলতে হতো। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন যদি হতো, ছাত্রদের হাতে যদি নেতৃত্ব থাকতো, তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। আমরা আশা করি, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সাম্য অবস্থা ফিরে আসবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান বলেন, "আমি হলে থাকি। যারা বাসায় থাকেন, তারা হয়তো কম নিগ্রহের শিকার হন। যদি ছাত্রদের নির্বাচিত নেতৃত্ব থাকে, তাহলে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে তাদের সমস্যা ও অভিযোগ তুলে ধরতে পারেন, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করতে পারেন।”
প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ছাত্র সংসদের বষিয়টি আছে। ছাত্র সংসদের জন্য আলাদা গঠনতন্ত্র আছে। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ডাকসুর কথা বলা হয়েছে। আর ডাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ডাকসু নর্বিাচন হবে। কীভাবে হবে, কাদেরেকে নিয়ে হবে - সেসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে গঠনতন্ত্রে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএসসহ সব প্রার্খী ছাত্রদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান আছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট পদাধিকারী বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ছাত্র সংসদেও কোষাধ্যক্ষ।
‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে আধিপত্যের রাজনীতির লাভ’: মেহেদী সজীব
This browser does not support the audio element.
১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭ বার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভিপি হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নুর। তিনি এখন গণঅধিকার পরিষদ নামের রাজনৈতিক দলটির সভাপতি। জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী। ওই নির্বাচন হয়েছিল সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে প্রার্থী হওয়া মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহবুবুর জামান।
কেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন
১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৯ বার ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র সাত বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি।
অবাক করা ব্যাপার হলো, এরশাদ সরকারের সময়ই ডাকসু নির্বাচন সবচেয়ে বেশি বার হয়েছে। ওই সময়ে পাঁচবার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে।
১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রদলের খায়রুল কবির খোকন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আসলে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এখানে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা যেমন কাজ করতে পারে, তেমনি জাতীয় ইস্যুতেও তাদের ভূমিকা থাকে।”
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে কার লাভ, কার ক্ষতি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভক্ত। এই নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত।
ছবি: Abdul Goni
বাকের মজুমদার (আহ্বায়ক, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
গত বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে হলে ছাত্র রাজনীতি করা যাবে না। এখানে লাভ-ক্ষতির চেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষার্থীরা কি চায়? তারা একমত যে, হলে তারা ছাত্ররাজনীতি চায় না। আমরা যেহেতু শিক্ষার্থীদের পক্ষে, তাদের চাওয়াই আমাদের চাওয়া। আমরা হলে যেমন ওপেন রাজনীতির বিরোধিতা করছি, তেমনি গুপ্ত রাজনীতির যে কথা শুনতে পাই, সেটাও বন্ধ হওয়া উচিৎ।
ছবি: Samir Kumar De/DW
নুজিয়া হাসিন রাশা (সভাপতি, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিজেই একটি রাজনৈতিক প্রজেক্ট - জনগণকে রাজনৈতিকভাবে নিরস্ত্র করার, তাদের সংগঠিত প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়ার এবং শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষিত করার কৌশল। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ মূলত গুপ্ত সংগঠন, সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থগোষ্ঠী, কর্পোরেট এনজিও ও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করে, যা জনগণের গণতান্ত্রিক স্পেসকে সংকীর্ণ করে। প্রতিরোধের রাজনীতি করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার।
ছবি: Samir Kumar De/DW
মেঘমল্লার বসু (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব না, হয় তা প্রকাশ্যে থাকে নয়তো তা গুপ্ত পথ নেয়। রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অর্থ, প্রকাশ্য রাজনীতিকে নিরুৎসাহিত করে গুপ্তপন্থাকে প্রণোদনা দেওয়া। এহেন পদক্ষেপ অন্তর্ঘাতের দরজা খুলে দেয়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আরমানুল হক (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
আমি যখন হলে অবস্থান করব, তখন তো আমার পরিচয়কে লুকাতে পারি না! হলে ছাত্র রাজনীতি সমস্যা, নাকি হলের দখলদারিত্ব সমস্যা? হলে যদি ১ম বর্ষ থেকেই প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কীভাবে একটা নির্দিষ্ট দল দখল করতে পারে? আর ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হল সংসদকে প্রশ্ন করার জন্য ছাত্র রাজনৈতিক দল ছাড়া ভিন্ন কোন ফোরাম আছে কিনা, তা একটা বড় প্রশ্ন।
ছবি: Samir Kumar De/DW
আশরেফা খাতুন (মুখপাত্র, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, হলে নিয়োজিত হাউজ টিউটররাও ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণরুম, গেস্টরুমের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারেন নাই। হলভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কমিটি দেওয়া শুরু হলে আবারও এক চিত্রের আবির্ভাব ঘটবে। আমি চাই, আবাসিক হলগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই প্রতিনিধিত্ব করুক যাতে দখলদারিত্ব, গণরুম, গেস্টরুমের বিভীষিকা ফিরে না আসে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নাহিদুজ্জামান শিপন (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনগুলোর সূত্রপাত ঘটে হলগুলোর শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। হলে রাজনীতি বন্ধ রাখার এমন সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগণতান্ত্রিক। এমন অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে ডাকসু নির্বাচনকে অর্থবহ করা যাবে না।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
এস এম সাইফ কাদের রুবাব (মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
হল রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা আদতে ডাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যন্ত্রের হাতে কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া। এমন অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোন কল্যাণে আসবে না।
ছবি: Samir Kumar De/DW
জাহিদুল ইসলাম তাহসিন (শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
ক্যাম্পাসের বড় সমস্যাগুলোর একটি সিট সংকট, আর হলে রাজনীতি ফিরে এলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নেতারা প্রশাসনকে প্রভাবিত করে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের অগ্রাধিকার দিতে পারে। একই সঙ্গে হলে একক প্রশাসনিক কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে, কারণ ভিন্ন ভিন্ন দল নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠবে। এর ফলে হলের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে এবং পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।
ছবি: Samir Kumar De/DW
মারুফ হাসান শাহিন (শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
হলে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে আগের মতো গণরুম প্রথা ফিরে আসতে পারে, কারণ অতীতে দেখা গেছে সরকার দলের রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে বছরের পর বছর অবৈধভাবে হলে অবস্থান করত। একইভাবে পরিচয় পর্ব ও ম্যানার শেখানোর নামে গেস্টরুম প্রথাও আবার শুরু হতে পারে। দলীয় কোন্দল বেড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কেননা আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে।
ছবি: Samir Kumar De/DW
9 ছবি1 | 9
তার কথা, "বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আছে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান- সবখানেই ছাত্রদের ভূমিকা। আর এর অগ্রভাগে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাই যারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছে, তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে চায়নি, ডাকসু নির্বাচন দিতে চায়নি। ক্ষমতাসীনরা চেয়েছে তাদের ছাত্রসংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করে থাকুক। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে সেটা সম্ভব হয় না। ”
১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তার কথা, "এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গণতান্ত্রিক নামের সরকারগুলোর চেয়ে এরশাদ সাহেবের সময়ই ডাকসু নির্বাচন বেশি হয়েছে। এই কৃতিত্ব তাকে দিতেই হয়। আর এরশাদের সময় যারা ডাকসুর নেতৃত্বে এসেছেন, তারাই এরশাদ পতন আন্দোলন করেছেন। ” তার কথা, "এরশাদ সাহেব কখনোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। তার ছাত্র সংগঠনও পারেনি। সেই কারণেই হয়তো তিনি ডাকসু নির্বাচনে বাধা দেননি।”
ওই সময়ে সারা দেশের কলেজ ছাত্র সংসদগুলো অবশ্য এরশাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল।
মান্না বলেন, "আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার পরিবেশ তৈরি, নেতৃত্বের বিকাশ, সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধুলার চর্চার জন্য ছাত্র সংসদ প্রয়োজন। আর ছাত্রদের অধিকার আদায় তাদের সমস্যার সমাধানে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই।”
বিজ্ঞাপন
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে লাভ-ক্ষতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাভ আর না হলে যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের ছাত্র সংগঠনের লাভ। বিএনপির সময়ে কোনো ডাকসু নির্বাচন হয়নি। আওয়ামী লীগের সময়ে একবার হয়েছে, তা-ও আদালতের নির্দেশে। ওই নির্বাচনও প্রভাবমুক্ত ছিল না। কিন্তু দুই শাসনামলেই বার বার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
ডাকসুর এবারের ভিপি প্রার্থীদের একজন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনেও শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার কথা, " যারা শাসক, তারা সবসময় চেয়েছেন তাদের অপশাসন টিকিয়ে রাখতে। এজন্য তারা কখনোই ডাকসু বা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাননি। তাদের ছাত্র সংগঠন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন।”
"যেমন আওয়ামী লীগের সময় একবার মাত্র ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। তা-ও আদালতের নির্দেশে। কিন্তু তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ঠিকই সবকিছু দখল করেছিল। অন্য ছাত্র সংগঠনকে কাজ করতে দেয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার বলতে কিছু ছিল না,” বলেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগের সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার বলতে কিছু ছিল না’: শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি
This browser does not support the audio element.
আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)-র এক ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী বলেন, " গত সরকারের আমলে আমাদের এখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। ছাত্রদের প্রতিনিধি ছিল না। কিন্তু ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী ঠিকই ছিল। ছাত্র সংসদ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা মিলে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা, তাদের অধিকার নিয়ে কোনো কাজ হয় না। তাদের কথা কেউ বলে না। গণরুম কালচারের মতো কালচার গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়ে, নির্যাতনের শিকার হয়।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) একজন ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব। তার কথা, " ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে আধিপত্যের রাজনীতির লাভ। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে লেজুড়বৃত্তি ছাত্র সংগঠনের প্রবণতা বাড়ে। যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠন সব কিছু দখল করে নেয়। ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট রেজিম তৈরির পিছনেও বড় কারণ হলো ক্যাম্পাসগুলোতে নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব না থাকা। ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।”
তার কথা, "ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলতে পারবে। নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে তারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অংশ নেবে।”
তিনি বলেন," বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়, কর্মচারি সমিতির নির্বাচন হয়, কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্ব্চান হয় না। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনর ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের আধিপত্যবাদ আছে। তারা ছাত্রদের শক্তিশালী হতে দিতে চায় না। সাধারণ ছাত্ররা শক্তিশালী হলে তারা অনেক অনিয়ম করতে পারবে না।”
ডাকসুর এক ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বললেন ‘স্টুডেন্টস অটোনমি'র কথা। তার মতে, " ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অটোনমি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাসভিত্তিক স্বতন্ত্র ছাত্র রাজনীতি গড়ে উঠবে। দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি কোণঠাসা হয়ে পড়বে।”
‘ছাত্র সংসদ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে’: শেখ সাদী
This browser does not support the audio element.
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে স্থানীয় ও জাতীয় পযায়ে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে বলে অনেকে মনে করেন। তবে এই ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তার কথা, "জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার একটি বড় ফ্যাক্টর হলো সময় ও পরিস্থিতি। ডাকসু থেকে নেতৃত্ব তৈরি হয়নি, তা নয়। তবে যেভাবে বলা হয়, সেভাবে নয়। বড় বড় আন্দোলনে ছাত্ররা এগিয়ে থেকেছে। তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে সেভাবে পরবর্তীতে বড় ধরনের ভূমিকায় খুব বেশি নেতৃত্বকে দেখা যায়নি।”
তবে ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বলেন, " ডাকসুর নেতত্বে ছিলেন এমন অনেকেই পরে জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। আসলে বিষয়টি এমপি, মন্ত্রী হওয়া নয়। বিষয়টি হলো, দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখা। সেই বিবেচনায় ছাত্র নেতাদের, ছাত্রদের ভূমিকা অনেক বড়। আর তারা অনেকে সরকার পরিচালনা, সংসদ - সবখানেই ভূামকা রেখেছেন।”
তার কথা, " আসলে ডাকসু নির্বাচন তো নিয়মিত হয় না। প্রতিবছর যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়, তাহলে নিয়মিতভাকে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। তারা শুধু রাজনীতি কেন, জাতীয় জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দেবে।”