হাঁসখালি ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য কেবল নিন্দনীয় নয়, চিন্তার। লজ্জার। এই কি তবে প্রশাসনের মুখ?
বিজ্ঞাপন
আজ অনেকদিন পর তাপসী মালিকের কথা মনে পড়ছে। সিঙ্গুরের তাপসী মালিককেও খুন করা হয়েছিল। এখনো মনে পড়ে, সে সময় শাসকদলের একাংশ এবং বিদ্বজ্জনদের কেউ কেউ ঘটনাটি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিলেন। রীতিমতো চিত্রনাট্য লিখেছিলেন দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি। পারিবারিক গন্ডগোলের জেরেই তাপসীর মৃত্যু হয়েছে, এমন ছবি তৈরির প্রয়াস নিয়েছিলেন এক পরিচালক।
মনে পড়ছে সে সময় তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাগুলি। মনে পড়ছে, আজ যে বিশিষ্টরা মুখ্যমন্ত্রীর নবরত্নসভা আলো করে বসে আছেন, সিঙ্গুর-পর্বে তাদের ভূমিকা। তাপসী-কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে কার্যত কেঁদে ফেলেছিলেন মমতা। মানবিকতার প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর সেই মমতা আজ কী বলছেন?
চাপের মুখে পুলিশ, নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা মমতার
প্রবল চাপের মুখে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেপ্তার রামপুরহাটে তৃণমূলের দাপুটে নেতা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে
এক মাসের মধ্যে পরপর ঘটে যাওয়া চারটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা। আনিস খানের মৃত্যু, ঝালদায় কংগ্রেসের কাউন্সিলারকে হত্যা, পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলার খুন এবং রামপুরহাটের তৃণমূল উপপ্রধান খুন ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে আটজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই নিয়ে
বীরভূমের বগটুইয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে গ্রামবাসীরা পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন। মমতাও তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সায়ন আহমেদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুল গ্রেপ্তার
আনারুল হোসেন ছিলেন রামপুরহাট ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি। এলাকায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বলে পরিচিত। বগটুইতে গিয়ে মমতা বলেন, আনারুলকে হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর পুলিশ একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। উপরে ছবিটি আনারুলের বাড়ির।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুলের অপরাধ কী?
মমতা জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা আনারুলকে ঘটনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও আনারুল পুলিশকে সতর্ক করেনি। পুলিশ পাঠাবার ব্যবস্থা করেনি। আনারুল দায়িত্ব পালন করলে এতবড় ঘটনা ঘটত না। রাজ্যের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, পুলিশ পাঠানো আনারুলের কাজ নয়, প্রশাসনের কাজ, পুলিশের কর্তাদের কাজ। আনারুলের উচিত ছিল পুলিশকে ঘটনার কথা জানানো।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
অস্ত্র কারখানার খোঁজ
পরপর চারটি ঘটনার পর মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তারপর পুলিশ সেই অভিযান শুরু করে এবং আসানসোলে একটি অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায়। এখন বিভিন্ন জেলায় খোঁজ চলছে। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অস্ত্রের রমরমা নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে তারা বারবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'লোক দেখানো ব্যবস্থা'
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী লোক দেখানো ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি লোকের চোখে ধুলো দিতে চাইছেন। অতীতেও বারবার তিনি এই কাজ করেছেন। নিছক সাসপেন্ড করা, ক্লোজ করা অর্থহীন। ২১ জুলাইয়ের গুলি-কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তাকে মমতা দলে নিয়ে মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছেন। মান্নানের প্রশ্ন, হাওড়ার এসপি-র বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না?
ছবি: DW/P. Samanta
বগটুইতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, এসডিপিও-র বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারও নয়। মূল রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভাদু শেখকে হত্যা করার আধঘণ্টা, চল্লিশ মিনিট পরে এতগুলো বাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। বগটুই গ্রাম মোটেই শান্তিপূর্ণ এলাকা নয়। তারপরেও পুলিশ কিছুই টের পেলো না? তারা সময়ে এলো না?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভাদু শেখের বাড়িতে নয়
মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে গেলেও ভাদু শেখের বাড়িতে যাননি। ভাদু শেখ ছিলেন তার দলের নেতা। এর ফলে ভাদু শেখের স্ত্রী কেবিনা বিবি ক্ষুব্ধ। তার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল করতে গিয়েই আমার স্বামী খুন হয়েছে। ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসবেন। কেন তিনি এলেন না আমি জানি না।’’ ভাদুর বাবা মারফত শেখ বলেছেন, ‘‘১৭টি গ্রামের মাথা ছিল আমার ছেলে। বখরার ভাগ দিতে পারেনি বলেই সে খুন হয়ে গেল!’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশ নিয়ে আসে
ভাদু শেখের হত্যার পর তার পরিবার গ্রাম ছেড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার পুলিশি পাহারায় তারা বাড়ি ফেরেন। ভাদুর অনুগামীরাও সেখানে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী না আসায় তারাও হতাশ। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ভাদু তো আর ভোট করতে পারবেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রী তার বাড়ি যাননি। তিনি এখন নতুন মানুষের খোঁজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি প্রতিনিধিদল
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বগটুইয়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয়ার জন্য চার সদস্যের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিনিধিদলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছিলেন। আর ছিলেন তিন সাবেক আইপিএস অফিসার। তারা বগটুইয়ে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
ক্ষমতার ভাষায় কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাঁসখালি ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে তিনি বলেছেন, 'আপনি রেপ বলবেন, না কি প্রেগনেন্ট বলবেন, না কি লাভ অ্যাফেয়ার বলবেন... না কি শরীরটা খারাপ ছিল, না কি কেউ ধরে মেরেছে? ... মেয়েটার না কি লাভ অ্যাফেয়ার ছিল, শুনেছি।' একটি ১৪ বছরের কিশোরীর মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী যদি এই ভাষায় কথা বলেন, তাহলে বোঝা যায়, সার্বিকভাবে রাজ্যের অবস্থা কী? মুখ্যমন্ত্রী যে ঘটনাটিকে গুরুত্বই দিতে চাইছেন না, তা-ও তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। ঘটনাটি নিয়ে তিনি যা বলেছেন, প্রশাসনও নিশ্চয় সেখান থেকে বার্তা পেয়ে গেছে। আরো একটি 'ছোট ঘটনা'র মতোই নিশ্চয় হাঁসখালি স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে!
হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে কথা হচ্ছিল রাজ্যের এক সাবেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। একসময় রাজ্যপুলিশের ডিজি-ও ছিলেন তিনি। বলছিলেন, এই মামলা কোনোভাবেই দাঁড়াবে না। ঘটনার পাঁচদিন পর পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, ততক্ষণে সমস্ত প্রমাণ লোপাট হয়ে গেছে। মেয়েটির মৃতদেহ ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ধর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ময়নাতদন্ত পর্যন্ত করা যায়নি। যে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফেরার। তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাবেক ওই পুলিশ কর্তার বক্তব্য, ''কতদিন জেলে থাকবে সে? খুব বেশি হলে এক মাস! পুলিশ চার্জশিটে ধর্ষণের কথা তো প্রমাণই করতে পারবে না!''
মগরাহাটে জোড়া খুন, আগুন, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
গত শনিবার দুই যুবকের কোপানো গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ একটি সংস্থার অফিস থেকে উদ্ধার করা হয়। তারপর অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মগরাহাট। সংস্থার মালিক পালাবার সময় গ্রেপ্তার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মগরাহাটে জোড়া খুন
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে তাদের জমা রাখা টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে দুই যুবক খুন হন বলে অভিযোগ। এই দুই যুবকের নাম বরুণ চক্রবর্তী ও মলয় মাখাল। তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায় জানে আলম অ্যান্ড কোম্পানি থেকে। উপরের ছবিতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে। এখানেই তাদের কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা নিতে গিয়ে
বরুণ ও মলয় দুইজনেই শাহ আলমের কাছ থেকে টাকা পেতেন বলে পরিবার ও বন্ধু-প্রতিবেশীদের অভিযোগ। বরুণ সেই টাকা নিতে যাচ্ছিলেন। পথে মলয়ের সঙ্গে দেখা হয় ও দুইজনে টাকা আনতে যান বলে বন্ধুরা জানিয়েছেন। উপরের ছবিটি মলয়ের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গ্রামবাসীর অভিযোগ
গ্রামবাসী শচীন্দ্রনাথ আদক ডিডাব্লিউকে বলেছেন, সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ তারা শাহ আলমের কারখানায় পৌঁছান। তার কিছুক্ষণের মধ্যে দুইজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে তার অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মলয়ের ভাইয়ের অভিযোগ
মলয়ের মামাতো ভাই অপূর্ব আদক ডিডাব্লিউয়ের কাছে অভিযোগ করেন, ৮০ টাকা দিলে ১০০ টাকার জিনিস পাওয়া যাবে, এই কৌশলে শাহ আলম প্রচুর মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে। সে নানা ধরনের ব্যবসা করত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জানে আলমের কারখানা
অভিযুক্ত জানে আলমের কারখানা এটা। এখানে পশুর হাড় দিয়ে নানা জিনিস তৈরি হয়। কারখানার চারপাশে দুর্গন্ধ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ম্যাটাডোরে আগুন
ঘটনার পর উত্তেজিত গ্রামবাসীরা দুইটি ম্যাটাডোরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই গাড়ি দুইটি এখন জানে আলমের একটি কারখানায় রাখা। এই এলাকায় জানে আলমের বেশ কয়েকটি কারখানা আছে বলে অভিযোগ।
গ্রামবাসী বনমালী বরের অভিযোগ, জানে আলমের চিটফান্ডের ব্যবসা আছে। তার কাছে বেআইনি অস্ত্রও আছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দাঙ্গারোধী পুলিশ মোতায়েন
মগরাহাটে দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বরুণ চক্রবর্তীর বাড়িতে
বরুণ চক্রবর্তী ছিলেন থানার সিভিক ভলিন্টিয়ার। তাছাড়া মানুষকে সাহায্য করতেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। ছবিতে তার শোকার্ত স্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মলয় মাখালের বাড়িতে
ডিডাব্লিউয়ের ক্যামেরা দেখেই মলয় মাখালের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ''আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।'' মলয়ের কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জানে আলম গ্রেপ্তার
ঘটনার পর থেকে জানে আলমকে খুঁজছিল পুলিশ। জানে আলম পালায়। তার পিছু ধাওয়া করে কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে জানে আলমকে ধরে পুলিশ। সূত্র জানাচ্ছে, জানে আলমের চিট ফান্ড, ইমারতি জিনিস সহ নানা ধরনের ব্যবসা ছিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন একের পর এক খুন
পশ্চিমবঙ্গে সমানে মানুষ খুন হচ্ছেন। কোথায় এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদ জড়িত। কোথাও বা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা খুনের পিছনে আছে। সেই সঙ্গে মগরাহাটের মতো ঘটনা ঘটছে। বিজেপি তো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে অভিযোগ করে রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাতটি ঘটনার তদন্তে সিবিআই
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পরপর সাতটি মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মগরাহাটেও পরিবারের তরফ থেকে ন্যায়বিচারের দাবি করা হয়েছে। দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
ঠিক এটাই তো চেয়েছিল অপরাধীরা। ওই নাবালিকার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কোনোভাবেই যেন পুলিশের কাছে খবর না যায়। অথচ সোমবার মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ঘটনার পরেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়নি! কেন পুড়িয়ে দেওয়া হলো মেয়েটির মৃতদেহ! মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, তার 'তাজা' নেতারা দিকে দিকে কেমন সন্ত্রাস তৈরি করে রেখেছে? জানেন না, মেয়েটির পরিবার কথা না শুনলে হাঁসখালিতে আরেকটা বগটুই হয়ে যেতে পারতো? মুখ্যমন্ত্রী আসলে সবই জানেন। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের মতো তিনি ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে গেছেন। কোনো অন্যায়ই আর তিনি দেখতে পান না। ঠিক যেমন দেখতে পাননি পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায়, কামদুনির ঘটনায়। সবই তার কাছে 'ছোট' ঘটনা।
শুধুনেত্রী নন, তার নবরত্নরাও আজকাল আর কিছুই দেখতে পান না। কোনোকিছুতেই আর তাদের কিছু এসে যায় না। মানুষের ক্ষোভ শুধু প্রশাসন নয়, আপনাদের উপরেও গিয়ে পড়ছে। কারণ একসময় মানুষ আপনাদেরই বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস ক্ষমা করে না। আপনারা নিজেরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারবেন তো?
উপসংহারে মুখ্যমন্ত্রী এবং তার পারিষদদের একটি তথ্য দিয়ে রাখি। সমাজ এখন ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে কথা বলছে। অর্থাৎ, বৈধ বিয়ের পরেও কোনো নারীকে তার স্বামী জোর করে ভোগ করতে পারে না। তা করলে তাকে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়। ধরে নেওয়া যাক, সত্যিই ওই নাবালিকার কোনো 'অ্যাফেয়ার' ছিল। কিন্তু সে জন্য তাকে ধর্ষণ করার লাইসেন্স পাওয়া যায় না। দল বেঁধে ধর্ষণ করারও নয়। প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও হাঁসখালির ঘটনা ধর্ষণ, না থাকলেও তা-ই। এটুকু বোঝার জন্য সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন হয় না, ক্ষমতার দম্ভ সামান্য কমাতে হয়।
আপনাদের মুখে 'সংবেদনশীল' শব্দটা শুনতেও এখন ঘেন্না লাগে। ছিঃ!